কারাগারে উদ্যাপন করলেন জন্মদিন
Published: 16th, February 2025 GMT
জন্মদিন সব মানুষের জন্য একটি বিশেষ দিন। এদিন সবাই পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে আনন্দে কাটাতে চান। কিন্তু এই দিনটি কেউ যদি কারাগারে কাটাতে চান, তাহলে অবাক হওয়ার বিষয় বটে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের বাসিন্দা লরেটা এমনটাই করলেন।
লরেটার বয়স ১০৪ বছর। থাকেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের অ্যাভন নার্সিং হোম নামের একটি বৃদ্ধাশ্রমে। ১০ ফেব্রুয়ারি ছিল তাঁর ১০৪তম জন্মদিন। এদিন তাঁর ইচ্ছা ছিল, জন্মদিনটি তিনি কারাগারে কাটাবেন। তাঁর ইচ্ছানুযায়ী নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের একটি কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে।
অঙ্গরাজ্যের রচেস্টার শহর থেকে ২৯ মাইল দক্ষিণে লিভিংস্টোন কাউন্টি শেরিফের কার্যালয় থেকে লরেটার কারাগার পরিদর্শনের বেশ কিছু ছবি প্রকাশ করা হয়েছে।
পুলিশ বিভাগ এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছে, লরেটা হচ্ছেন অ্যাভন নার্সিং হোমের বাসিন্দা। কেয়ার হোম কর্তৃপক্ষ জানতে চেয়েছিল, জন্মদিনে তিনি কী করতে চান। দিনটি কীভাবে কাটাতে তাঁর ইচ্ছা। তিনিও জানিয়ে দিলেন, জন্মদিনে তিনি কারাগারের ভেতরে যেতে চান। কারণ, তিনি জীবনে কখনো কারাগারের ভেতরে যাননি বা দেখেননি।
পোস্টে আরও লেখা হয়েছে, ‘আমাদের কারাগারে লরেটার দারুণ সময় কেটেছে। তাঁর জন্মদিনের ইচ্ছা পূরণ করতে পেরে আমরা আনন্দিত।’
অ্যাভন নার্সিং হোম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান হার্লবাট কেয়ার কমিউনিটিস জন্মদিনে লরেটার কারাগারের নানা কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তুলে ধরেছে। তারা বলেছে, ‘লরেটা কারাগারে জন্মদিনের কেক কেটেছেন। কারাগারে ঢোকার সময় ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে হয়েছে তাঁকে। সেখানে আসামির মতো করে তাঁর মাগ–শট (ছবি) তোলা হয়েছে। তাঁকে একটি কারাকক্ষে বেশ কিছু সময় আটকে রাখা হয়েছিল। কারাগারে তিনি কারা কর্মকর্তাদের অনেকের সঙ্গে দেখা করেছেন।’
নার্সিং হোম কর্তৃপক্ষ লরেটার ইচ্ছা পূরণে সহযোগিতা করায় লিভিংস্টোন কাউন্টি শেরিফের কার্যালয়কে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। তাঁর জন্মদিনের নানা আয়োজনের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দিয়েছে নার্সিং কর্তৃপক্ষ।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কীর্তনখোলার তীর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে
আনিকা জেবা ও মালিহা জেবা। যমজ বোন। গত ১৭ মে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে ‘সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট’ পদে কমিশন্ড হন। বরিশাল সদরে জন্ম নেওয়া দুই বোন ২০১০ সালে পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানোর পর কেমন করে গেলেন স্বপ্নের বন্দরে তাই তুলে ধরেছেন মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ
গত ১৬ মে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট জোন্স ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যবসা প্রশাসনে বিশেষ কৃতিত্বের সঙ্গে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন আনিকা জেবা ও মালিহা জেবা। এর ঠিক পরদিনই এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে ‘সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট’ পদে কমিশন্ড হন। আরও মজার বিষয় হচ্ছে, এমবিএ গ্র্যাজুয়েশন ও সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভের ঠিক পরদিন, ১৮ মে ছিল এই দুই বোনের জন্মদিন। জন্মদিনটি তারা পরিবারের সঙ্গে উদযাপন করেন নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের আর রাজ্জাক সুপারমার্কেটের ব্যাঙ্কুয়েট হলে।
কীর্তনখোলার তীর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে...
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশি আমেরিকানদের মধ্যে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করা যমজ বোন আনিকা জেবা ও মালিহা জেবার জন্ম বরিশাল সদরে। ২০১০ সালে পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তারা। নিউইয়র্কে গিয়ে হাইস্কুল শেষ করে তারা সেন্ট জোন্স ইউনিভার্সিটিতে ব্যবসা প্রশাসনে ভর্তি হন এবং একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর রিজার্ভ অফিসার্স ট্রেনিং প্রোগ্রামে অংশ নেন। ১৬ মে সেন্ট জোন্স ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যবসা প্রশাসনে বিশেষ কৃতিত্বের সঙ্গে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে ‘সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট’ পদে
কমিশন্ড হন।
যে উদ্যোগ অনুপ্রেরণাদায়ক
সেন্ট জোন্স ইউনিভার্সিটি ১৭ মে তাদের ডিগ্রি অর্জন উপলক্ষে যে সংবর্ধনা দেন তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ব্রায়ান জে শ্যানলি বলেন, ‘শিক্ষার পাশাপাশি দেশসেবায় তাদের এই উদ্যোগ অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক। জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে তারা নিয়মিত বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধক্ষেত্রে অংশ নেবেন।’
যে জন্য করেছেন এমবিএ
মাস্টার্স অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা এমবিএ কোর্স সম্পন্নের পর আনুষ্ঠানিক সার্টিফিকেট অর্জনে আনিকা জেবা ও মালিহা জেবা বলেন, এমবিএ হয়েছি নিজের ব্যবসাকে আরও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার মধ্য দিয়ে বহুজাতিক সমাজে বাঙালির এগিয়ে চলার ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকার জন্য। অধ্যয়নের পাশাপাশি নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সে পাঁচটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালু করেছি। বাংলাদেশেও রয়েছে দুটি কসমেটিকস ব্র্যান্ড ‘দ্য বিউটি মল’ এবং ক্লথিং ব্র্যান্ড ‘ইলেনি’। এ দুটো পরিচালিত হচ্ছে অনলাইনে অর্ডার নিয়ে। আর রাজ্জাক ম্যানেজমেন্ট ইনকের অধীনে নিউইয়র্কের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পাঁচটি হচ্ছে– এবিসি ফুড অ্যান্ড ভেজিটেবল, বুচার মিট, আর রাজ্জাক সুপারমার্কেট, আর রাজ্জাক ব্যাঙ্কুয়েট এবং আর রাজ্জাক হোলসেল ফ্লাওয়ার।
ঐতিহ্য ও মায়ের অগ্রযাত্রা
বরিশাল থেকে মা মোর্শেদা বেগমের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানো দুই বোন দেখেছেন মায়ের দৃঢ়তা ও পরিবারের জন্য মায়া। এও দেখেছেন যে মায়ের তত্ত্বাবধানে গড়ে ওঠা ‘আর রাজ্জাক ম্যানেজমেন্ট’ কেমন করে আস্থা অর্জন করে নিয়েছে স্থানীয় বাঙালিদের মাঝে! প্রতিষ্ঠানটির মাটি দিয়ে তৈরি ডিনার সেট প্রবাসীদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। কেবল পহেলা বৈশাখেই নয়; বাঙালিয়ানা প্রদর্শনের অন্য সব অনুষ্ঠানে এবং শৌখিন প্রবাসীদের ড্রয়িং রুমেও স্থান করে নিয়েছে তাদের মাটির ডিনার সেট। মায়ের মতো দুই বোনও বাংলাকে ভালোবেসে, বাঙালিয়ানায় ভর করে এগিয়ে যেতে চান।
আগামীর স্বপ্ন
আনিকা জেবা এবং মালিহা জেবা দেশ ছাড়ার পর থেকে তাদের উচ্চশিক্ষা লাভের ব্যয় নিয়ে কোনো রকম দুশ্চিন্তা করতে হয়নি মা মোর্শেদা বেগম মায়াকে। তারা বিশেষ কৃতিত্বের সঙ্গেই নিজেদের পড়াশোনা চালিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় ১৭ মে তারা ‘ইউএস আর্মি রিজার্ভ অফিসার্স ট্রেনিং কোর্স’ সম্পন্নের সার্টিফিকেট তথা ‘সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট’ হিসেবে অভিষিক্ত হয়েছেন। সেদিন সেন্ট জোন্স ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট ব্রায়ান জে শ্যানলি ক্লাস-২০২৫ কমিশনিংপ্রাপ্ত ১৪ জনকে অভিনন্দন জানান। সেকেন্ড লেফটেন্যান্টের ব্যাজ পরার আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে দুই বোন বলেন, ‘পেশার পাশাপাশি আগামীতে নিজেদের ব্যবসাকেও এগিয়ে নিতে চাই। দেশেও কাজ করছি আমরা। সেখানেও রয়েছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এসবের পাশাপাশি মানবিক কাজ করে যাচ্ছি। এই কাজের ধারাবাহিকতার পাশাপাশি নিজেদের সঙ্গে লাল-সবুজের পতাকাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই!’