টিভি, ফ্রিজ, আসবাব কিনতেই বেশি ঋণ করছে সাধারণ মানুষ
Published: 16th, February 2025 GMT
গাড়ি, জমি বা ফ্ল্যাট নয়, ব্যাংক থেকে সাধারণ মানুষ এখন সবচেয়ে বেশি ঋণ করছে টেলিভিশন (টিভি), ফ্রিজ, ফার্নিচারের মতো নিত্যব্যবহার্য পণ্য কিনতে। ব্যাংকগুলো ভোক্তাঋণের আওতায় ব্যক্তিগত যেসব ঋণ দেয়, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঋণ গেছে গৃহস্থালি সামগ্রী কেনায়। সর্বশেষ বাংলাদেশ ব্যাংকের গত সেপ্টেম্বরভিত্তিক ঋণের চিত্র পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংকগুলো মোট ১ লাখ ৩৯ হাজার ৬১৪ কোটি টাকার ভোক্তাঋণ বা ব্যক্তিগত ঋণ বিতরণ করেছে। তার মধ্যে ৩৫ হাজার ৭২০ কোটি টাকায় বিতরণ করা হয়েছে টিভি, ফ্রিজ, এয়ারকুলার ও কম্পিউটার, আসবাবসহ গৃহস্থালি নানা সামগ্রী কেনার জন্য। অর্থাৎ ভোক্তাঋণের সাড়ে ২৫ শতাংশই গেছে গৃহস্থালি নানা সামগ্রী কেনার ঋণ হিসেবে।
ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, দেশে দুই বছরের বেশি সময় ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। তাতে মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্নমধ্যবিত্ত ও সীমিত আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। নিত্যপণ্যের দামের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দৈনন্দিন জীবনযাপনের ব্যয় নির্বাহ করতেই হিমশিম খাচ্ছে এসব মানুষ। সঞ্চয়ও কমে গেছে। এ অবস্থায় টিভি–ফ্রিজের মতো গৃহস্থালি সামগ্রী কিনতে ঋণ করতে হচ্ছে বেশির ভাগ মানুষকে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, দেশে টানা ১০ মাস ধরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপর রয়েছে। সর্বশেষ গত জানুয়ারিতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৭২ শতাংশ। অন্যদিকে, খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি জানুয়ারিতে সামান্য বেড়ে ৯ দশমিক ৩২ শতাংশে পৌঁছেছে। মূল্যস্ফীতির তুলনায় মজুরি বৃদ্ধির হার কম। এ কারণে সীমিত আয়ের মানুষের প্রকৃত আয় বাড়ছে না।
এদিকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর দেশে ডলার–সংকট দেখা দেয়। ডলারের বিপরীতে টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন হয়। পাশাপাশি বিশ্ববাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যায়। তাতে টিভি, ফ্রিজ থেকে শুরু করে গৃহস্থালি পণ্য তৈরির কাঁচামাল ও এ ধরনের পণ্য আমদানির খরচ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়ে যায়। আর সেই কারণে গৃহস্থালি সামগ্রীর দামও বাড়ে দেশের বাজারে। দাম বেড়ে যাওয়ায় এসব সামগ্রী কিনতে আগের চেয়ে মানুষ বেশি ঋণ করছে বলে মনে করছেন ব্যাংক খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ব্যাংকগুলোর ভোক্তাঋণের বড় অংশই যায় গ্রহস্থালী সামগ্রী কেনা, জমি, ফ্ল্যাট ও গাড়ি ক্রয়ে, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে, পেশাজীবী খাতে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যয়, বিয়ে ও ভ্রমণ প্রভৃতি খাতে। এ ছাড়া বেতন ও আমানতের বিপরীতেও ঋণ নেন অনেক ব্যাংক গ্রাহক।
ব্যাংকাররা বলছেন, ভোক্তাঋণ তুলনামূলক সহজে ও দ্রুততম সময়ে পাওয়া যায়। এ কারণে গৃহস্থালি পণ্য থেকে শুরু করে গাড়ি, ফ্ল্যাটসহ অন্যান্য সামগ্রী কেনায় ব্যাংকঋণের প্রতি ঝুঁকছে ভোক্তাদের বড় অংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত সেপ্টেম্বর শেষে প্রায় ৮ লাখ ৯৫ হাজার গ্রাহক টিভি, ফ্রিজসহ গৃহস্থালি সামগ্রী কিনতে ঋণ নিয়েছেন। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর শেষে এ খাতে ঋণ ছিল ৩০ হাজার ২৯০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে দুই বছরের ব্যবধানে এ খাতে ঋণ বেড়েছে ৫ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা।
গৃহস্থালি সামগ্রীর পর ভোক্তাঋণের দ্বিতীয় শীর্ষ খাত ফ্ল্যাট ক্রয়। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে এ খাতে ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৯১ কোটি টাকা, যা মোট ভোক্তাঋণের ২১ শতাংশ। এ ছাড়া গাড়ি ক্রয়ে ৪ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা ও ক্রেডিট কার্ডে ১০ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। বাকি ঋণের পুরোটাই নগদে উত্তোলন করা হয়েছে। ফলে ঋণের বড় অংশ ব্যবহৃত হয়েছে সংসার খরচ বা জীবনযাত্রার নানা প্রয়োজন মেটাতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকের স্থায়ী আমানতের বিপরীতে ভোক্তাঋণ নেওয়া হয়েছে প্রায় ২৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। আর বেতনের বিপরীতে ঋণ নেওয়া হয়েছে ১৮ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা।
এ ছাড়া মেয়াদি আমানতের বিপরীতে ৫ হাজার ৯৩২ কোটি টাকা, ভবিষ্য তহবিলের বিপরীতে ১ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা, জমি ক্রয়ে ৫ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা, পেশাজীবী ঋণ হিসেবে ১ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা, শিক্ষার জন্য ১ হাজার ৬৯ কোটি টাকা, চিকিৎসার জন্য ২৬ কোটি টাকা, বিয়ের জন্য ৪৮ কোটি টাকা ও ভ্রমণের জন্য প্রায় ২ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন ভোক্তারা। এর বাইরে অন্যান্য ব্যক্তিগত প্রয়োজনে আরও প্রায় ২ হাজার ১০১ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ফ্রিজ, টিভি, আসবাব—এগুলো এখন অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের মতো। দেশে একদিকে মধ্যবিত্ত শ্রেণি বড় হচ্ছে; শহর ছাপিয়ে গ্রাম পর্যন্ত তাদের বিস্তৃতি ঘটেছে। আবার একই বাসায় একাধিক ইলেকট্রনিকস পণ্য ব্যবহারের প্রবণতাও বাড়ছে। ফলে তারা এসব পণ্য পরিবারের জন্য কিনতে চান।
দেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বিস্তৃতি ঘটেছে উল্লেখ করে গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এ কারণে গৃহস্থালি সামগ্রীর সরবরাহকারী ও পরিবেশকেরা ভোক্তাদের জন্য উপযোগী বিভিন্ন ঋণসুবিধা দিচ্ছেন। ব্যাংকগুলোও এ কাজে এগিয়ে এসেছে। ফলে ভোক্তারা পণ্য কিনতে একবারে টাকা না দিয়ে ঋণের মাধ্যমে কিস্তিতে পরিশোধকে সহজ মনে করছেন। এসব প্রবণতার কারণে ভোক্তাঋণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স প ট ম বর শ ষ ভ ক ত ঋণ র র ব পর ত র জন য যবহ র ব যবহ
এছাড়াও পড়ুন:
৪৪তম বিসিএসের ৪০০ রিপিট ক্যাডার বাদ দিচ্ছে সরকার, নতুন সিদ্ধান্ত আসছে
৪৪তম বিসিএসে পুনরাবৃত্তি হওয়া ৪০০ ক্যাডারকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। তারা ৪৩তম বিসিএসে বা আগের বিসিএসে যে ক্যাডারে আছেন ৪৪তম বিসিএসেও একই ক্যাডার পেয়েছিলেন। এই ৪০০ ক্যাডারকে নিয়ে সিদ্ধান্ত দ্রুতই হবে বলে জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা।
প্রথম আলোকে ওই কর্মকর্তা আজ বৃহস্পতিবার বলেন, ৪০০ ক্যাডারকে নিয়ে পিএসসির কিছু সুপারিশ আমরা পেয়েছি। এগুলো বাদ দিতে সরকার কাজ করছে। বাদ দিলে কি করা হবে তা নিয়েও কাজ করছে সরকার। এখন পিএসসিকে এ বিষয় নিয়ে একটি মতামত দিতে বলা হয়েছে। পেলেই তা পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে প্রজ্জাপন দেওয়া হবে। এটি যাতে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয় সেজন্য আমরা কাজ করছি।
আরও পড়ুন৪৯তম বিসিএস: অনলাইন আবেদন ও ফি জমাদানে পিএসসির নতুন নির্দেশনা৩০ জুলাই ২০২৫৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল ৩০ জুন প্রকাশিত হয়। এতে বিভিন্ন ক্যাডারে ১ হাজার ৬৯০ জনকে নিয়োগের জন্য সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) সাময়িকভাবে মনোনীত করেছে।
প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১ হাজার ৬৯০ জনের মধ্যে প্রায় ৪০০ জন প্রার্থী একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একই ক্যাডারে পুনরায় সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন (রিপিট ক্যাডার)। এই ৪০০ জনের তালিকা পেয়েছে পিএসসি। এই রিপিট ক্যাডার বন্ধে বিধি সংশোধন করা হচ্ছে। এ–সংক্রান্ত চিঠি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় পিএসসি।
পিএসসি জনপ্রশাসনের চিঠিতে বলছে, এই রিপিট ক্যাডারের ফলে নতুন ও অপেক্ষমাণ মেধাবীরা সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এটি প্রশাসনিক কাঠামো ও জনসম্পদের সদ্ব্যবহারে বাধা সৃষ্টি করছে। এখন এটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একই ক্যাডারে পুনরায় সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়া বন্ধ করার জন্য বিদ্যমান বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বয়স, যোগ্যতা ও সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা ২০১৪–এর বিধি-১৭ এর শেষে নিম্নোক্ত শর্ত যুক্ত করার প্রস্তাব করেছে পিএসসি।
আরও পড়ুনসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের ৩৪০০০ শূন্য পদ পূরণে উদ্যোগ২৯ জুলাই ২০২৫শর্তে কী আছে—পিএসসির চিঠিতে শর্ত হিসেবে বলা আছে, ‘তবে শর্ত থাকে যে এই বিধির আওতাধীন সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ করিবার প্রাক্কালে, কিংবা কোনো বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রস্তুতকালে, সংশ্লিষ্ট প্রার্থী কর্তৃক প্রদত্ত লিখিত তথ্যের ভিত্তিতে কিংবা কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত কোনো পদ্ধতির মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে যদি কমিশনের নিকট প্রতীয়মান হয় যে এই বিধির আওতাধীন মনোনয়নযোগ্য কিংবা মনোনীত কোনো প্রার্থী একই ক্যাডার পদ, সমপদ কিংবা প্রার্থীর আগ্রহ নেই এমন কোনো সার্ভিস বা ক্যাডার পদে পুনরায় মনোনীত হইবার কারণে মনোনীত সার্ভিসে বা ক্যাডার পদে যোগদান করিতে অনিচ্ছুক, এইরূপ ক্ষেত্রে কমিশন অনাগ্রহ প্রকাশকারী প্রার্থীকে এই বিধির আওতাধীন সরকারের নিকট সুপারিশ করা হইতে বিরত থাকিতে পারিবে; আরও শর্ত থাকে যে প্রথম শর্তাংশে বর্ণিত বিধান অনুযায়ী কোনো প্রার্থীকে সুপারিশ করা হইতে বিরত থাকিবার কারণে উদ্ধৃত শূন্য পদে নিয়োগের লক্ষ্যে সুপারিশ প্রেরণ করিবার জন্য উত্তীর্ণ প্রার্থিগণের মধ্য হইতে মেধাক্রম অনুযায়ী প্রার্থী নির্বাচনপূর্বক কমিশন সম্পূরক ফলাফল প্রকাশ এবং সার্ভিসে বা ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ করিতে পারিবে;আরও অধিকতর শর্ত থাকে যে দ্বিতীয় শর্তাংশে উল্লিখিত সম্পূরক ফলাফল দ্বারা বা উহার পরিণতিতে প্রথম ঘোষিত ফলাফলে সার্ভিস বা ক্যাডার পদের জন্য মনোনীত কোনো প্রার্থীর প্রতিকূলে কোনো পরিবর্তন ঘটানো কিংবা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাইবে না।’
আরও পড়ুনবস্ত্র অধিদপ্তরে বড় নিয়োগ, চাকরির সুযোগ ১৯০ জনের২৯ জুলাই ২০২৫