দাদির হাত ধরে স্কুলে যাচ্ছিল শিশুটি, ট্রলির ধাক্কায় নিহত
Published: 16th, February 2025 GMT
সকাল আটটার দিকে প্রতিদিনের মতো দাদির হাত ধরে স্কুলে যাচ্ছিল শিশুটি। স্কুলের সামনে পথচারী সাইনে পা দিতেই বালুবোঝাই একটি ট্রলি ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় শিশুটি। গুরুতর আহত হন দাদি।
আজ রোববার কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কে কুষ্টিয়া শহরের ফুলতলা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে রেখেছে। আহত নারীকে একই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নিহত ইব্রাহিম ইসলাম ওরফে স্বপ্নীল (৪) কুষ্টিয়া শহরতলীর বটতৈল এলাকার আহসান হাবীবের ছেলে। ইব্রাহীম চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি ফুলতলা এলাকায় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতীতি বিদ্যালয়ে প্লে শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল। তার মায়ের নাম জেসমিন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সানজিদা আক্তার বলেন, দাদি ও নাতি এসে সড়ক বিভাজকের ওপর দাঁড়ায়। সেখান থেকে নিচে এক পা ফেলে পথচারী পারাপার সাইনের ওপর দাঁড়ায় শিশু ইব্রাহিম। তার দাদি রাস্তায় নামার মুহূর্তে ছিলেন। এ সময় বালুবোঝাই ট্রলি শিশুটিকে চাপা দেয়। ট্রলির ধাক্কায় আহত হন শিশুটির দাদি। প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাত দূরে গিয়ে ট্রলিটি থামে। এ সময় চালক দৌড়ে পালিয়ে যান। আশপাশের লোকজন দাদি–নাতিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
এ ঘটনার পর প্রতীতি বিদ্যালয়ের সামনে টায়ার জ্বালিয়ে কুষ্টিয়া–ঝিনাইদহ মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন বিক্ষুব্ধরা। মহাসড়কে অবৈধ ট্রলি চলাচল বন্ধ ও স্কুলের সামনে গতিরোধক দেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।
শিশুটির মা জেসমিন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ছেলে পাইলট হবি। ওরে এই পাইলট কন পাবো?’ তাঁর সঙ্গে থাকা এক প্রতিবেশী বলেন, জেসমিনের কয়েক মাস বয়সী আরেকটি ছেলেসন্তান আছে।
প্রতীতি বিদ্যালয়ের উপাধ্যক্ষ আনিসুর রহমান বলেন, ‘সকালে স্কুলে ছিলাম। হঠাৎ শুনতে পারলাম ট্রলির ধাক্কায় এক শিশু শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।’
আজ সকাল ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে যান কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পার্থ প্রতীম শীল, কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আতোয়ার রহমানসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তাঁরা স্থানীয় বাসিন্দাসহ অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।
আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।
বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’
এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।