২০২০ সালের শুরুতে এলাকায় ৩০ শতাংশ জমি কিনে স্থানীয় সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়ে নিবন্ধন করেন ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম। পাঁচ বছরেও জমির মূল দলিল পাননি তিনি। কিছুদিন আগে জরুরি টাকার প্রয়োজনে জমি বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে চেয়েছিলেন। তবে দলিল না পাওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। পরে বাধ্য হয়ে চড়া সুদে একটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে ঋণ নিয়েছেন তিনি।

সাইফুল ইসলাম লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার টুমচর গ্রামের বাসিন্দা। শুধু তিনি নন, জমি কিনে নিবন্ধনের পরও মূল দলিল পেতে দেরি হওয়ায় এ ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে লক্ষ্মীপুরের অনেক বাসিন্দাকে। জেলার ছয়টি সাবরেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে বালাম বইয়ের তীব্র সংকটের কারণে মূল দলিল পেতে দেরি হচ্ছে। এসব কার্যালয়ে বালাম বইয়ে লেখার অপেক্ষায় পাঁচ বছর ধরে পড়ে আছে প্রায় দুই লাখ দলিল। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চাহিদার তুলনায় বালাম বইয়ের সরবরাহ কম থাকায় এ সংকট তৈরি হয়েছে।

জেলার ছয়টি সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়ের মধ্যে পাঁচটিতে বর্তমানে কোনো বালাম বই নেই। এসব কার্যালয় হলো লক্ষ্মীপুর সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি ও চন্দ্রগঞ্জ। কেবল কমলনগর সাবরেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে কিছু বালাম বই আছে। জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের প্রধান সহকারী সিহাব উদ্দিন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গত নভেম্বর মাসে জেলার ছয়টি কার্যালয়ের জন্য পাঁচ হাজার বালাম বইয়ের চাহিদাপত্র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়। তবে একটি বইও পাওয়া যায়নি।

লক্ষ্মীপুর জেলা রেজিস্ট্রি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বছরে জেলার রেজিস্ট্রি কার্যালয়গুলোতে প্রায় পাঁচ হাজার বালাম বইয়ের প্রয়োজন। তবে এর এক-চতুর্থাংশও পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে চলতি বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত এর আগের পাঁচ বছরের ১ লাখ ৮৯ হাজার ২৫২টি দলিল জমা পড়ে রয়েছে। ২০১৯ সালে যেসব দলিল রেজিস্ট্রি হয়েছে, সেসব জমির ক্রেতা-বিক্রেতারা এখন মূল দলিল পাচ্ছেন।

জেলার তিনজন দলিললেখক জানান, জমি নিবন্ধন হলে প্রমাণস্বরূপ ক্রেতা-বিক্রেতাকে রসিদ দেওয়া হয়। পরে সেই রসিদ জমা দিয়ে মূল দলিল নিতে হয়। কিন্তু দলিল পেতে চার-পাঁচ বছর দেরি হওয়ার কারণে অনেক ক্রেতা রসিদ হারিয়ে ফেলেন। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের। এ ছাড়া বালাম বইয়ে না তোলা দলিল সুষ্ঠুভাবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে খোয়া যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে বলেও জানান তাঁরা।

সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর গ্রামের জাহিদুর রহমান, কুশাখালী গ্রামের আবদুল সাত্তার, দত্তপাড়া গ্রামের মো.

হোসেন জানান, আগে জমি নিবন্ধন করার কয়েক মাসের মধ্যে দলিলের তথ্য বালাম বইয়ে লেখার পর মূল দলিল ক্রেতাকে হস্তান্তর করা হতো। বর্তমানে পাঁচ বছর অপেক্ষা করেও জমির ক্রেতারা দলিল পাচ্ছেন না। দলিল না পেয়ে জমির ক্রেতারা ব্যাংকঋণসহ নানা প্রয়োজনে ভোগান্তি ও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন।

রায়পুর সাবরেজিস্ট্রি কার্যালয়ের দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল হক বলেন, বালাম বই না থাকায় প্রতিনিয়ত লোকজনকে নানা কৈফিয়ত দিতে হয়। বর্তমানে বালামে লেখার জন্য দলিলের স্তূপ হয়ে আছে। জমির ক্রেতা-বিক্রেতারা চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলা সাবরেজিস্ট্রার সাবিকুর নাহার প্রথম আলোকে বলেন, বালাম বইয়ের চাহিদার কথা উল্লেখ করে প্রতি মাসে মহাপরিচালক (নিবন্ধন) বরাবরে প্রতিবেদন পাঠানো হয়। কিন্তু আশানুরূপ বালাম বই পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, বালাম বইয়ের চাহিদা রয়েছে বছরে পাঁচ হাজার। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে ৪০০-৪৫০টি বালাম। তবে এমন সংকট সারা দেশে রয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স বর জ স ট র র ব ল ম বইয় র ম ল দল ল প ব ল ম বই চ বছর

এছাড়াও পড়ুন:

বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস

রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।

‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।

এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।

সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।

বর্ষার ফুলের উৎসব

বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!

রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।

এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ