কুনেমানের বোলিং অ্যাকশন বুমরার চেয়ে আলাদা নয়, তবু কেন...
Published: 17th, February 2025 GMT
সম্প্রতি দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে শ্রীলঙ্কাকে ধবলধোলাই করেছে অস্ট্রেলিয়া। সেই সিরিজে সর্বোচ্চ ১৬ উইকেট নিয়েছেন ম্যাথু কুনেমান।
কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার এই বাঁহাতি স্পিনারের বোলিং অ্যাকশন ত্রুটিপূর্ণ মনে হওয়ায় আইসিসির কাছে রিপোর্ট করেছেন আম্পায়াররা। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তাঁকে আইসিসি স্বীকৃতি বায়োমেকানিকস টেস্টিং সেন্টারে অ্যাকশন পরীক্ষা করাতে হবে। তবে এর আগে তাঁর ঘরোয়া ক্রিকেটে বল করতে বাধা নেই।
আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, কোনো বোলার বল ছাড়ার সময় ১৫ ডিগ্রির বেশি কনুই বাঁকালে তা অবৈধ। সিরিজে মাঠের আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আদ্রিয়ান হোল্ডস্টক, জোয়েল উইলসন ও ক্রিস গ্যাফানির মনে হয়েছে কুনেমান সর্বোচ্চ সীমার চেয়ে বেশি কনুই বাঁকিয়েছেন। এ কারণে তাঁরা কুনেমানের বিরুদ্ধে ম্যাচ রেফারি জেফ ক্রো কাছে অভিযোগ জানান।
মাত্র পাঁচ টেস্ট খেলা কুনেমানের জন্য স্বাভাবিকভাবেই এই খবর বিশাল ধাক্কা হয়ে এসেছে। তবে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক টিম পেইন ২৮ বছর বয়সী স্পিনারের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
পেইনের চোখে, যশপ্রীত বুমরা ও কুনেমানের বোলিং অ্যাকশনের মধ্যে ভিন্নতা নেই। কিন্তু বুমরার অ্যাকশন নিয়ে আম্পায়াররা কখনো সন্দেহ প্রকাশ না হলেও কুনেমানকে ‘সহজ লক্ষ্য’ বানিয়ে ফেলেছেন। পেইনের আরেকটি শঙ্কা হলো, অ্যাকশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরও কুনেমানকে প্রতিপক্ষের সমর্থকেরা হয়তো ‘প্রতারক’ ভাববেন।
এএসইএন রেডিওকে পেইন বলেছেন, ‘আমার মনে হয় বল করার সময় ওর (কুনেমানের) কনুই সামান্য বেঁকে যায়, কিন্তু এমন তো যশপ্রীত বুমরারও হয়। ক্রিকেটে থ্রোয়িংয়ের (চাকিংয়ের) জন্য কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠা মোটেও ভালো ব্যাপার নয়। এর অর্থ, আপনার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়েছে। আমার মনে হয় এটা ওর মনোবল ভেঙে দেবে।’
৪০ বছর বয়সী পেইন আরও বলেছেন, ‘ওর পক্ষে এটা সামলানো খুব কঠিন হবে। সম্ভবত ওই দিন সে চূড়ায় থেকে (সিরিজের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি) মাঠ ছেড়েছিল। কিন্তু হোটেলে ফিরে খবরটা (সন্দেহজনক বোলিং অ্যাকশন) শোনার পর মানসিক অবস্থা তলানিতে পৌঁছে গিয়েছিল। তখন থেকে ওকে ক্যারিয়ার বাঁচানোর লড়াই করতে হচ্ছে।’
পেইনের মনে হচ্ছে, ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্বরতরা ইচ্ছাকৃতভাবে কুনেমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন, ‘ক্রিকেটের ইতিহাসে ফিরে যান। এমন অনেককে দেখেছি কুনেমানের চেয়ে অনেক খারাপ বোলিং অ্যাকশন নিয়ে শত শত টেস্ট ম্যাচ খেলেছে। কুনেমান দুর্ভাগাদের একজন।’
ভারতের তারকা ফাস্ট বোলার বুমরার বোলিং অ্যাকশনকে অনেকেই চাকিং বলে থাকেন। কিন্তু আইসিসি এক ব্যাখ্যা অনুযায়ী, বোলিংয়ের সময় বুমরার কনুই বেশি বাঁকছে বলে মনে করা হলেও তা আসলে চাকিং নয়। বরং অতিমাত্রায় প্রসারণ। যেটাকে শরীরবিদ্যার ভাষায় বলা হয় ‘হাইপার এক্সটেনশন’। অর্থাৎ জন্মগতভাবেই বুমরার কনুই স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি প্রসারিত হয়।
একজন মানুষের হাড়ের সংযোগস্থলগুলো স্বাভাবিক সীমার চেয়ে বেশি নড়াচড়া করলে সেটাকে বলা হয় ‘হাইপারমোবিলিটি’। এই হাইপারমোবিলিটির কারণেই সাইড অ্যাঙ্গেল থেকে বুমরার বোলিং অ্যাকশন অবৈধ মনে হয়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে সাইড অ্যাঙ্গেল থেকে কুনেমানের বোলিং অ্যাকশনও তেমন মনে হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জামিন দেওয়াকে কেন্দ্র করে আদালতে হাতাহাতি, স্টেনোগ্রাফার আহত
লক্ষ্মীপুরে আদালতে একটি জামিনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে একজন বিচারকের আদালত বর্জন করেছে আইনজীবীরা। এ সময় আইনজীবীদের সাথে আদালতের কর্মচারীদের হাতাহাতি ও এজলাসে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এতে আহত হন ওই এজলাসের স্টেনোগ্রাফার আশরাফুজ্জামান।
রবিবার (১৫ জুন) দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আদালত বর্জন করায় ভোগান্তিতে পড়েন বিচারপ্রার্থীরা।
জানা গেছে, রায়পুর প্রিন্সিপাল কাজী ফারুকী স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আহম্মেদ কাউসার উদ্দিন জামান (৩৫) এর বিরুদ্ধে গত ৬ জুন সদর থানায় চুরির মামলা দায়ের করেন তারই প্রতিবেশি জেলা জজ আদালতের আইনজীবী আবু তৈয়ব। মামলায় আরও দুইজনকে আসামি করা হয়। ওই মামলায় আসামি কাউসার ও রুবেল গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন। এরপর গত ১০ জুন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক এম সাইফুল ইসলাম তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। এ নিয়ে তাৎক্ষণিক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দসহ আইনজীবীরা।
মামলায় অভিযোগ আনা হয়, বাদী এবং আসামিদের মধ্যে পূর্ব বিরোধ রয়েছে। ৫ জুন দিবাগত গভীর রাতে আসামিরা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে বাদীর ভবনের সামনে থাকা একটি লোহার গেট কেটে নিয়ে এবং গেটের পিলার ভেঙে একটি পিক-আপ গাড়িতে করে রায়পুরের দিকে নিয়ে যায়। রায়পুর বাসাবাড়ি এলাকায় গেলে পিকআপ গাড়িটি টহল পুলিশ আটক করে। পরে গাড়িটি জব্দ ও চালক রুবেলকে আটক করে পুলিশ। মামলায় বাদী আড়াই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
আদালত সূত্র জানায়, গত ৯ জুন আসামিদের জামিন প্রার্থণা করা হয়। এতে আসামিপক্ষ উল্লেখ করেন, মামলার বাদি আইনজীবী হওয়ায় আদালতে তাদের পক্ষে কোন আইনজীবী জামিন শুনানিতে অংশ নিতে ইচ্ছুক নয়। আসামিরা তাদের পক্ষে আইনজীবী না পেয়ে জামিন শুনানির জন্য লক্ষ্মীপুর লিগ্যাল এইড অফিসে আইনি সহায়তা চান। সেখান থেকে দুইজন আইনজীবীকে শুনানি করতে বলা হলেও তারা অন্য আইজীবীদের দ্বারা হেনস্তার ভয়ে জামিন শুনানিতে অংশ নেননি। অন্যদিকে বাদী পক্ষের আইনজীবী আসামিদের বিরুদ্ধে জামিনের বিরোধিতা করেন।
আদালত সূত্র আরও জানায়, আসামিরা ৯ জুন জামিনের জন্য আবেদন করলে পরদিন ১০ জুন নথি প্রাপ্ত সাপেক্ষে জামিন শুনানির জন্য রাখা হয় এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন।
বিষয়টি নিয়ে আদালতের পর্যালোচনায় উঠে আসে, ঈদুল আজহার বন্ধে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এবং গ্রেপ্তারের পর থেকে আসামিরা জামিনের শুনানির সুযোগ পাননি। চারদিন তাদের হাজতবাস হয়েছে। ৬ জুন আসামি গ্রেপ্তার হলেও বাদী একজন আইনজীবী হওয়ায় আসামিরা জামিন শুনানির জন্য কোন আইনজীবী পাননি এবং লিগ্যাল এইড অফিসের আইনজীবীরাও শুনানিতে অংশ নিতে অনীহার বিষয়টি পরিষ্কার হওয়ায় ১৪ জুন পর্যন্ত ঈদের ছুটিতে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় জামিন অযোগ্য ধারায় গুরুতর অভিযোগ না থাকায় উভয় পক্ষের শুনানি অন্তে উভয় দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হলো।
আদালত আসামিদের রিমান্ড না মঞ্জুর করে চারদিনের হাজতবাস ও ঈদ বিবেচনা করে আসামি কাউসার ও রুবেলকে ১০০ টাকা বন্ডে একজন গণ্যমান্য ব্যক্তির জিম্মায় জামিন মঞ্জুর করেন। তাদের জামিন হওয়ায় পর থেকেই আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করে। এ ঘটনায় তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে বিচারকের অপসারণের দাবি জানান।
ঈদের বন্ধ শেষে রবিবার (১৫ জুন) আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়। আইনজীবী সমিতি বৈঠক করে ওই আদালতের বিচারক এম সাইফুল ইসলামের আদালতের বর্জনের ঘোষণা দেন। এদিন সকাল থেকে ওই বিচারকের কক্ষে বিচারপ্রার্থীরা এসে উপস্থিত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বিচারপ্রার্থী জানান, আদালতের বিচারক এজলাসে বসা ছিলেন। এ সময় ৭-৮ জন আইনজীবী কক্ষে ঢুকে আদালত বর্জনের ঘোষণা দেন। এতে হট্টগোল দেখা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিচারক আদালত কর্মচারীদের দরজা বন্ধ করে দিতে বলেন। এ সময় আইনজীবী ও কর্মচারীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। আহত হন এজলাসের স্টেনোগ্রাফার আশরাফুজ্জামান। এতে বিচারকার্য সম্পন্ন না করেই এজলাস থেকে নেমে যান বিচারক।
আহত আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘‘আইনজীবীরা হট্টগোল করায় বিচারকের নির্দেশে আমি দরজা বন্ধ করতে গেলে আমার ওপর আইনজীবীরা হামলা করে। এতে আমার বাম চোখের পাশে রক্তাক্ত জখম হয়।’’
উপস্থিত আইনজীবীদের মধ্যে অ্যাডভোকেট আশিকুর রহমান জানান, কয়েকজন আইনজীবী এজলাসে গিয়ে আদালত বর্জনের বিষয়টি জানিয়ে দিতে গিয়েছেন। আদালত কর্মচারীরা উল্টো তাদের ওপর হামলা করেছে। এতে তিনি নিজেও আহত হন।
ঢাকা/লিটন/টিপু