ডিসিদের এখন থেকেই নির্বাচনের জন্য কাজ শুরুর নির্দেশনা ইসির
Published: 18th, February 2025 GMT
আগামী নির্বাচনের জন্য জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) এখন থেকেই কাজ শুরু করার নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনের সময় জেলা প্রশাসকদের নিজ উদ্যোগে আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করারও নির্দেশনা দিয়েছে ইসি।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে ইসি এই নির্দেশনা দিয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
আজ ছিল জেলা প্রশাসক সম্মেলনের শেষ দিন। এ দিন সন্ধ্যায় সম্মেলনের একটি অধিবেশন ছিল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য চার নির্বাচন কমিশনার এবং ইসি সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ওই অধিবেশনে যোগ দেন। সেখানে নির্বাচন কমিশনাররা ডিসিদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনা মূলক বক্তব্য দেন। সাধারণত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে থাকেন জেলা প্রশাসকেরা।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন তাদের সুপারিশে ডিসিদের পরিবর্তে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা করার সুপারিশ করেছে। তবে আগামী নির্বাচনে কারা এই দায়িত্ব পালন করবেন, সে সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। নির্বাচন কবে হবে, সে সিদ্ধান্তও হয়নি।
জেলা প্রশাসক সম্মেলনে দিকনির্দেশনা দেওয়ার পর সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় নির্বাচনে ডিসিরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ইসি তাঁদের এই বার্তাটা দিতে চেয়েছে যে সামনের নির্বাচনে তাঁরা যেন নিজ উদ্যোগে আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করেন। ইসি তার নিজের আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করবে।
সিইসি বলেন, ‘আমরা অনুরোধ করেছি, আজকে থেকেই আপনারা.
ইসি একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে চায় উল্লেখ করে সিইসি জানান, অনুষ্ঠানে একজন নির্বাচন কমিশনার ডিসিদের উদ্দেশে নির্বাচনী আইন পড়ে শুনিয়েছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার কী কী ক্ষমতা আছে, তা পড়ে শুনিয়েছেন। ইসি চায় কোনো অভিযোগের ভিত্তিতে নয়, রিটার্নিং কর্মকর্তারা স্বপ্রণোদিত হয়ে নির্বাচনী অপরাধের বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন। ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনাররা যাঁর যাঁর ভূমিকা ষোলোআনা যাতে পালন করেন, সে অনুরোধ করা হয়েছে।
বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গেলে নির্বাচন ও ভোটাধিকার সম্পর্কে ডিসিদের বক্তব্য দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘আমরা বলেছি যে আপনারা নির্বাচনের দিন বা তার দু-চার দিন আগে-পরে নয়, এখন থেকে...আপনারা ইলেকশনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত হয়ে যান।’
সিইসি নাসির উদ্দীন বলেন, তাঁরা ডিসিদের বলেছেন, আগে ডিসিদের ওপর নানা চাপ এসেছে। ইসি তাদের নিশ্চয়তা দিয়েছে, ইসি তাদের কোনো অবৈধ চাপ দেবে না। ওপর থেকে কোনো চাপ এলে সেটা ইসি ‘অ্যাবজর্ব’ করবে। ডিসিরা শুধু আইনি ক্ষমতা যেন প্রয়োগ করেন, সেটাই তাঁরা চান। অতীতে এটা হয়নি।
এখন থেকেই সব দলের জন্য সমান সুযোগ তৈরির (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) বিষয়ে ইসি কোনো নির্দেশনা দিয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, তাঁরা ডিসিদের ভোটের দিনের জন্য বসে না থেকে এখন থেকেই কাজ শুরু করার বার্তা দিয়েছেন। ইসি বলেছে, ডিসিদের পুরোপুরি নিরপেক্ষ হতে হবে। তাঁদের যে ক্ষমতা ও দায়িত্ব আছে, সেটা সঠিকভাবে পালন করতে হবে। তাঁরাও অঙ্গীকার করেছেন, সেটা তাঁরা করবেন।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তিনি বলেন, এটি নিয়ে একটি রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে, ইসি ওই বিতর্কের অংশীদার হতে চায় না। এ বিষয়ে একটা ফয়সালা হলে তখন দেখা যাবে। তাঁরা প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী কাজ করছেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এখন থ ক ই র জন য আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে
সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।
এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।
এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’
আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।