শেখ হাসিনাকে দেশে এনে বিচার করা অন্তর্বর্তী সরকারের মূল লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

শফিকুল আলম বলেন, কিছুদিন আগে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তাতে স্পষ্ট শেখ হাসিনা কী ধরনের অপরাধ করেছেন। তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এটা বড় ধরনের অপরাধ। জাতিসংঘ ও কিছু কিছু মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদনের পর অনেক চাপ তৈরি হয়েছে। এই চাপের একটা নমুনা হলো ইন্ডিয়া টুডের জরিপ। সেখানে দেখা গেছে, সেখানকার ৫৫ শতাংশ মানুষ চান শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে। কিছু অংশ চাচ্ছেন তাঁকে অন্য দেশে দিতে। মাত্র ১৬-১৭ শতাংশ মানুষ চান শেখ হাসিনাকে ভারতে রাখতে।

আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ নিয়ে সরকারের চিন্তাভাবনা কী জানতে চাইলে শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা বারবার বলেছি, এ বিষয়ে দেশের জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে। তবে আমাদের একটাই কথা, আওয়ামী লীগের যেসব নেতা–কর্মী ও সমর্থক জুলাই গণহত্যার সঙ্গে জড়িত, গুম-খুনে জড়িত, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত; তাঁদের সবার বিচার হবে। এটা হওয়ার পর দেশের মানুষ ও রাজনৈতিক দলগুলো সিদ্ধান্ত নেবে আওয়ামী লীগের বিষয়ে তারা কী ভাবছে।’

প্রধান উপদেষ্টার দুবাই সফরের বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন, ‘দুবাইয়ে সঙ্গে গত সরকারের সম্পর্ক একেবারে তলানিতে ছিল। বাংলাদেশি শ্রমিক নিষেধাজ্ঞায় রয়েছেন। এ নিয়ে অধ্যাপক ইউনূস সেখানকার কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। আমরা আশা করছি, এই নিষেধাজ্ঞা দ্রুত উঠে যাবে। সেখানে আবারও বাংলাদেশি শ্রমিক যেতে পারবেন। তাঁরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবেন।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।

আইসিটি খাতের দুর্নীতি নিয়ে শ্বেতপত্র

ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের সময় অগ্রাধিকার পাওয়া তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) এবং ডিজিটালাইজেশন খাতের দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়ে শ্বেতপত্র তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শফিকুল আলম। তিনি বলেন, দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে উচ্চপর্যায়ের এই কমিটি গঠন করা হবে, যারা আগামী দুই মাসের মধ্যে এই শ্বেতপত্র প্রকাশ করবে। শ্বেতপত্রে ওই সরকারের সময় সম্পাদিত সব ধরনের চুক্তি, প্রকল্পের প্রস্তাব (ডিপিপি), সব নিরীক্ষা প্রতিবেদন ও তদন্ত প্রতিবেদন খতিয়ে দেখবে।

শফিকুল আলম বলেন, আইসিটি ও ডিজিটালাইজেশন ঘিরে বেশ কটি অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর প্রকাশিত হয়েছে গণমাধ্যমে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস চাইছিলেন এই খাত নিয়ে একটি শ্বেতপত্র যাতে তৈরি করা হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের এটি একটা সিদ্ধান্ত। শ্বেতপত্র তৈরির জন্য দু–এক দিনের মধ্যে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হবে। কমিটিতে দেশি–বিদেশি অর্থনীতিবিদ যাঁরা আইসিটি নিয়ে কাজ করেন, সেসব বিশেষজ্ঞরা থাকবেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ব তপত র সরক র র আইস ট

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ