আরো ২১৪ মডেল মসজিদ নির্মাণ হবে: ধর্ম উপদেষ্টা
Published: 18th, February 2025 GMT
উপজেলা পর্যায়ে সরকার নতুন করে ২১৪টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করবে বলে জানিয়েছেন ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ডিসি সম্মেলনের তৃতীয় ও শেষদিনের একাদশ অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
সরকার এরই মধ্যে সাড়ে ৩০০ মডেল মসজিদ কাম ইসলামিক সেন্টার নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেছে জানিয়ে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, আমি গতকাল কক্সবাজারের পেকুয়ায় একটি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করে এসেছি। আমার সচিব আরো ৪৯টি করবেন, আমিও থাকব কিছুতে।
‘‘আমরা উপজেলা পর্যায়ে ২১৪টি নতুন মডেল মসজিদ নির্মাণ করব। এগুলোর ক্ষেত্রে যেন সাইট সিলেকশন ভালোমতো হয়, সাইট সিলেকশন কমিটির সভাপতি হচ্ছেন জেলা প্রশাসকরা। সাইটটা যেন সঠিকভাবে নির্বাচন হয়, নির্মাণসামগ্রী যেন উন্নত হয়, এ ব্যাপারে কঠোর মনিটরিং ও নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য ওনাদের বলেছি’’ জানান তিনি।
সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্য বজায় রক্ষার জন্য জেলা প্রশাসকদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে খালিদ হোসেন বলেন, ‘‘কোনো দুর্বৃত্ত যেন মন্দির, মাজার, মসজিদ, প্যাগোডা অথবা চার্চে অপবিত্রতা করতে না পারে। আমি ওনাদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ করেছি। অতীতে ওনারা এভাবে সহযোগিতা করেছেন, আগামী দিনেও যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে আবহ ভোগ করছি, সেটা বহাল থাকে। আগামী দিনে যেন এ সম্প্রীতির ভ্রাতৃত্বের ধারাবাহিকতা আরো বেগবান হয়, এ ব্যাপারে ওনাদের পরামর্শ দিয়েছি।’’
‘‘অপরাধী ধরা পড়লে সঙ্গে সঙ্গে আইনের আওতায় এনে তাদের বিচারের সম্মুখীন করার জন্য আমরা নির্দেশনা দিয়েছি।’’ সরকারি ব্যবস্থাপনায় হাজিদের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য ওনাদের উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বেসরকারি হজ ব্যবস্থাপনায় মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য আছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘‘বিভিন্ন জায়গা থেকে তারা হাজি সংগ্রহ করে, এজেন্সিকে দেয়। এজেন্সির মালিকের সঙ্গে ওই হাজির যোগাযোগ নেই। আমাদের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একটা নির্দেশনা আছে, হাজিদের সঙ্গে এজেন্সির চুক্তি থাকতে হবে। এজেন্সি কোন মানের বাড়িতে রাখবে, ক্যাটারিং সার্ভিস কীভাবে দেবে, পরিবহন সুবিধা কতটুকু দেবে- এসব বিষয়ে চুক্তি। ওনারা মালিকদের চেনেনও না, চুক্তিও করেন না। ফলে অনেক সময় বিপর্যয় দেখা দেয়, ভুল বোঝাবুঝি হয়, আমাদের কাছে বিচার আসে।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এনএইচ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ধান কাটায় আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার, পেশা বদলাচ্ছেন কৃষি শ্রমিকেরা
বছর পাঁচেক আগেও ধান কাটার শ্রমিকেরা বৈশাখ মাসের অপেক্ষায় থাকতেন। বৈশাখে হাওরের বুকজুড়ে সবুজ ধান যখন সোনালি রঙ ছড়াতে শুরু করে, তখন থেকেই দূরদূরান্ত থেকে হাওরে আসতে থাকেন ধান কাটার শ্রমিকেরা। কিন্তু, এই চিত্র দ্রুত বদলাচ্ছে। হাওরের কৃষক এখন ধান কাটার জন্য বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করেন। ফলে কৃষকের শ্রম এবং অর্থ দুটোরই সাশ্রয় হচ্ছে। তবে, কর্মহীন হয়ে পড়ছেন কৃষি শ্রমিকেরা। বাধ্য হয়ে তারা পূর্বপুরুষের পেশা ছেড়ে ঝুঁকছেন অন্য পেশায়।
তিন বছর হলো ধান কাটার পেশা ছেড়েছেন মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া গ্রামের মো. মকবুল মিয়া। এখন তিনি সারাবছর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান।
আরো পড়ুন:
খুলনার বরফশ্রমিক
নেই নিয়োগপত্র, আইডি কার্ড ও ছুটি
ফুড ডেলিভারিম্যান: খাবারের রাজ্যে অতৃপ্ত দিনরাত
মকবুল মিয়া বলেন, ‘‘আগে বছরের ছয় মাস বর্ষায় নৌকা বাইতাম, আর হুগনা সিজন আইলে নিজের জমি চাষ করতাম, আবার মাইনষের জমিতেও কামলা দিতাম। যা আয় অইতো তাই দিয়া আমরার ছয়জনের সংসার চইল্যা যাইতো। কিন্তু, যহন থেইক্যা নতুন নতুন মেশিন হাওরে আইতাছে, তহন থেইক্যা আমরার আর বেইল নাই।’’
‘‘কেউ আর আমরারে আগের মতন দাম দেয় না। কাম করলেও ঠিকমতো টেহা পাই না, তাই পুষায় না,’’ বলেন এই কৃষিশ্রমিক।
মকবুলের মতো ধান কাটা, মাড়াই, রোদে শুকানো, ঝাড়া, কাঁধে বহন করার মতো স্বাধীন পেশা ছেড়েছেন অষ্টগ্রামের ফয়জুল, ইটনার শামছুল মিয়া, নিকলীর ফরিদ উদ্দিনসহ অসংখ্য শ্রমিক। এক সময় যারা এ পেশায় দলবেঁধে কাজ করতেন, এখন দৃশ্যপট পুরোটাই ভিন্ন। ধান কাটার পেশা বদলে তারা এখন কেউ রিকশাচালক, কেউ চায়ের দোকানদার, কেউ চটপটি-ফুচকার দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
তারা বলছেন, আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির গতির সঙ্গে তারা কখনো তাল মেলাতে পারবেন না। কৃষকরাও তাদের শ্রমের সঠিক মূল্যায়ন করতে পারছেন না। বেশি জমি যাদের আছে তারাও আধুনিক পদ্ধতির প্রতি ঝুঁকে পড়ছেন। যে কৃষক অল্প জমিতে চাষাবাদ করেছেন, তারাও আর পয়সা খরচ করে কৃষিশ্রমিকের ওপর নির্ভর করছেন না। তারা পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা নিচ্ছেন। ফলে খেটে খাওয়া শ্রমিকেরা পড়েছেন বিপাকে।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সনাতন পদ্ধতিতে এক বিঘা জমির ধান কাটতে প্রচুর সময় লাগে। ফসল কাটার পরে বহন ও মারাই করা, তারপর বস্তায় সংরক্ষণ করার জন্যও অনেক শ্রমিকের দরকার। এটুকু ৬ থেকে ৭ জন শ্রমিকের সারা দিনের কাজ। তার জন্য মজুরি গুনতে হয় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। কিন্তু, এ কাজে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করলে সময় এবং অর্থ দুটোই কম লাগে।
বৈশাখে বর্ষার পানি ও বৈরী আবহাওয়া না থাকায় কৃষকেরা হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটছেন। বৈশাখের মাঝামাঝি সময়ে ঝড়-তুফান শুরু হলে পাকা ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে তারা যে পদ্ধতিতে ধান কাটা সহজ এবং দ্রুত হয় সেই পদ্ধতি বেছে নিচ্ছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এবার পুরো জেলায় এক লাখ ৬৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এর মধ্যে শুধু হাওর এলাকাতেই আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার হেক্টর জমিতে। ফলন ভালো হওয়ায় এই ধান থেকে এবার প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ধান কাটতে এ বছর হাওর অঞ্চলে ৩৫ হাজার শ্রমিক নিয়োজিত আছেন। এই সংখ্যা অন্যান্য বছরের তুলনায় কম। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধান কাটতে কৃষক কম্বাইন্ড হারভেস্টারসহ ৪১৩টি ধান কাটার যন্ত্র ব্যবহার করছেন।
জেলা শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. খোরশেদ উদ্দিন বলেন, ‘‘মানুষের পেশা পরিবর্তনশীল। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের বিভিন্ন পেশা বেছে নিতে হয়। কিন্তু, কৃষি এমন একটা পেশা, যারা এ পেশা রপ্ত করেছেন তাদের জন্য নতুন পেশায় আসা খুব কঠিন। বর্তমানে কৃষিকাজে যেভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে, তাতে কৃষিশ্রমিকেরা ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।’’
‘‘শুধু কৃষিতেই নয়, বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রেই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে,’’ উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘‘সরকারকেই সুদৃষ্টি দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান, মাঠে যদি কৃষক ও শ্রমিক ন্যায্য শ্রমমূল্য না পান, তাহলে কৃষিও একদিন হুমকির মুখে পড়বে।’’
ঢাকা/তারা