কার্যাদেশের ৯ মাস পরও শুরু হয়নি সেতুর কাজ
Published: 18th, February 2025 GMT
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার সরকারবাজারের কাছে বরাক নদীর ওপর একটি গার্ডার সেতু নির্মাণের কার্যাদেশ হয়েছে ৯ মাস আগে। এরপরেও ঠিকাদারের পক্ষ থেকে সেতুর কাজ শুরু করা হয়নি। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এই এলাকায় নদীর ওপর একটি সেতুর অভাবে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এলাকাবাসী।
বর্তমানে সরকারবাজারে বরাক নদীর ওপর যে সেতুটি রয়েছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেটি ব্যবহার করছেন স্থানীয়রা। বৃষ্টির মৌসুমে ওই সেতু পারাপারে ব্যাপক ঝুঁকি নিতে হয় এলাকাবাসীকে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ সেতু এড়িয়ে চলতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ভরা নদী পাড়ি দিতে হয় নৌকায় করে।
জানা যায়, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার সরকারবাজারের কাছে বরাক নদীর ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর স্থলে নতুন একটি সেতু নির্মাণের জন্য ২০২৪ সালের ৪ এপ্রিল দরপত্র আহ্বান করে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অর্থায়নে ১১ মিটার দীর্ঘ গার্ডার সেতুটি নির্মাণে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৪২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। সেতু নির্মাণের কাজ পায় মেসার্স সাজিদা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
একই বছরের ২৮ মে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির অনুকূলে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। আজ পর্যন্ত সেতুটির কার্যক্রম শুরু করেনি ওই প্রতিষ্ঠানটি। এতে ভাঙা সেতু দিয়েই নদী পারাপার চলছে এখানকার অন্তত ৫টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের।
স্থানীয় নাসিরপুর গ্রামের বয়োবৃদ্ধ নূরুল ইসলাম জানান, শীতের দিনে ভাঙা এই ব্রিজের ওপর দিয়ে চলাচলে খুব একটা সমস্যা না হলেও যানবাহন চলাচলে সমস্যা হয়। বর্ষার সময় অনেকে পা পিছলে পড়ে আঘাত পেয়েছেন এখানে। সেতু ঠিক না হওয়ায় বর্ষার ভরা বরাকের ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ের যেতে হয়। নতুন সেতুর কাজ হওয়ার কথা শুনছেন অনেক দিন ধরেই। এখনও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেই।
স্থানীয় খলিলপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু মিয়া চৌধুরী জানান, খলিলপুর ও মনুমুখ ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী বাজারে গরু বেচা-কেনার জন্য সরকারবাজার প্রসিদ্ধ। কয়েকটি গ্রামের মানুষ গরু-ছাগল নিয়ে এ সেতু ধরে বাজারে আসেন। যে কোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর কারণে। স্থানীয়দের দুর্ভোগ নিরসনে দ্রুত সেতুর কাজ শুরু করা দরকার। কর্তৃপক্ষ সেতু নির্মাণের অর্থ বরাদ্দ দিলেও ঠিকাদারের খামখেয়ালিতে কাজ শুরু হচ্ছে না। বর্ষার আগে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করা গেলে সবার জন্য ভালো হতো।
কার্যাদেশ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক পক্ষের একজন প্রকৌশলী অভিজিৎ দে মোবাইল ফোনে সমকালকে জানান, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য কাজ শুরু করতে প্রথম দিকে বিলম্ব হয়েছে। এছাড়া এক প্যাকেজে বিভিন্ন এলাকায় ৬টি সেতু নির্মাণের কাজ পাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত এমন এলাকার কাজ শেষে বরাক নদীর ওপর নির্মিত সেতুর কাজ শুরু করা হবে। ১৫ দিন সময় পেলেই সেতুর নিচের কাজ শেষ করে ফেলা সম্ভব। তখন বৃষ্টি-বাদল হলেও কোনো সমস্যা হবে না।
সদর উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম জানান, সম্প্রতি তিনি মৌলভীবাজারে যোগদান করেছেন। মোবাইল নম্বর না থাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। সদর ইউএনও মো.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই হত্যাকাণ্ডের মামলায় চট্টগ্রামে প্রথম অভিযোগপত্র দাখিল
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে চট্টগ্রাম মহানগরীর চান্দগাঁওয়ে শহিদুল ইসলাম শহিদকে হত্যার মামলায় অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিয়েছে পুলিশ। এ মামলায় সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ ২৩১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চান্দগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নুরুল হক গত বুধবার (৩০ জুলাই) আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন।
শনিবার (২ আগস্ট) চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফতাব আহমেদ অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার তথ্য সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।
আরো পড়ুন:
সিলেটে স্কুলছাত্র সুমেল হত্যা: ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৭ জনের যাবজ্জীবন
চবি ছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
পুলিশ জানিয়েছে, গত বছরের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলার সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা কোনো মামলায় চট্টগ্রামে প্রথম অভিযোগপত্র দাখিল করা হলো।
২০২৪ সালের ৩ আগস্ট সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মহানগরীর বহদ্দারহাটে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় একাধিক পিস্তল, শটগানসহ ভারী অস্ত্র দিয়ে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছিলেন আওয়ামী লীগের কর্মীরা।
এর আগে নিউ মার্কেট মোড়ে সমাবেশ করে ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে যাওয়ার পথে ষোলশহর মেয়র গলিতে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বাসভবনে হামলা চালায়। এর পর বহদ্দারহাট মোড়-সংলগ্ন সাবেক সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসভবনে হামলা হয়। ওই সময় গুলিবিদ্ধ হন অটোরিকশাচালক শহিদ। তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শহিদের ভাই শফিকুল ইসলাম চান্দগাঁও থানায় মামলা করেন।
আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি আইনের ৩০২ ধারায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। উল্লেখযোগ্য অপর আসামিরা হলেন— চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দীন, সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, এম এ লতিফ, আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দীন নদভী, মহিউদ্দিন বাচ্চু, আবদুচ ছালাম, দিদারুল আলম দিদার, এস এম আল মামুন ও নোমান আল মাহমুদ, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, চসিকের সাবেক কাউন্সিলর এসরারুল হক, নুর মোস্তফা টিনু, সলিমুল্লাহ বাচ্চু, জিয়াউল হক সুমন ও নুরুল আজিম রনিসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
আগামী ২৫ আগস্ট বাদীর উপস্থিতিতে অভিযোগপত্রের ওপর শুনানি হবে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে। অভিযোগপত্রে ১২৮ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ২৮ জন সাধারণ মানুষ, ৯৯ জন পুলিশ ও ১ জন চিকিৎসক।
ঢাকা/রেজাউল/রফিক