Samakal:
2025-06-16@05:31:42 GMT

নোয়াখালীর তিন খাবার

Published: 18th, February 2025 GMT

নোয়াখালীর তিন খাবার

দেশের বিভিন্ন স্থানে নানা পদের রান্না প্রচলিত। একটু সময় ও সুযোগ করে বাড়িতে তৈরি করতে পারেন নিজ অঞ্চলের কোনো খাবার। এতে শিকড়ে ফিরে যাওয়ার পাশাপাশি ঐতিহ্যের স্বাদও ফিরে পাবেন। নোয়াখালী অঞ্চলের তিনটি খাবারের রেসিপি দিয়েছেন কানিজ ফাতেমা রুমা

কলাপাতায় মলা মাছের মরিচখোলা 
উপকরণ: মলা মাছ ৩০০ গ্রাম, পেঁয়াজ কুচি ১/৩ কাপ, কাঁচামরিচ ফালি ৫-৬টি, টমেটো কুচি ১/৩ কাপ, ধনেপাতা কুচি ২ টেবিল চামচ, রসুন কুচি ২ চা চামচ, রসুন বাটা ১ চা চামচ, মরিচের গুঁড়া ১ চা চামচ, হলুদের গুঁড়া ১ চা চামচ, লবণ স্বাদমতো, সরিষার তেল ১/৪ কাপ ও কলাপাতা। 
প্রস্তুত প্রণালি: মলা মাছ পরিষ্কার করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে। কলাপাতা বাদে সব উপকরণ মাখিয়ে নিতে হবে। এবার প্যানে পরিষ্কার করা কলাপাতা বিছিয়ে তার ওপর মাখানো মলা মাছ বিছিয়ে দিন। ওপরেও কলাপাতা দিয়ে মুড়িয়ে ঢেকে দিতে হবে। এবার ঢাকনা দিয়ে ঢেকে অল্প আঁচে ১০-১৫ মিনিট রান্না করতে হবে। খুব সাবধানে উল্টিয়ে আরও ১০ মিনিট রান্না করতে হবে। হয়ে গেলে চুলা থেকে নামিয়ে গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন। 

আমসত্ত্বের খাট্টা 
উপকরণ: টক মিষ্টি আমসত্ত্ব ২৫০ গ্রাম, কোরানো নারকেল আধা কাপ, গুড় ১/৪ কাপ (আমসত্ত্ব টক হলে বাড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে), লবণ ১ চিমটি, লেবু পাতা ২টি। 
প্রস্তুত প্রণালি: আমসত্ত্ব ছোট টুকরো করে ১ কাপ পানিতে ২-৩ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। কোরানো নারকেল ১ কাপ গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে ব্লেন্ড করে নিন। এরপর ছেঁকে নারকেলের দুধ বের করে নিন। ব্লেন্ডারে নারকেলের দুধ, গুড়, লবণ, ভেজানো আমসত্ত্ব এবং সঙ্গে আরও আধা কাপ পানি মিশিয়ে নিন। ভালোভাবে ব্লেন্ড করে দুটি লেবু পাতা কচলিয়ে দিন। এতে লেবুর ঘ্রাণ আসবে। এবার ছেঁকে পরিবেশন করুন। গরমের সময় কিংবা দুপুরে খাবারের পর এই খাট্টা খেতে পারেন।
 

শিম-নারকেলের ভর্তা  
উপকরণ: শিম ২৫০ গ্রাম, ভাজা যে কোনো মাছ ১ টুকরা, কোরানো নারকেল ৩ টেবিল চামচ, কাঁচামরিচ ৫-৬টি, রসুন ৩ কোয়া, পেঁয়াজ কুচি ১/৩ কাপ, ধনেপাতা কুচি ২ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো, তেল ১ টেবিল চামচ।
প্রস্তুত প্রণালি: শিম সেদ্ধ করে পানি ফেলে দিতে হবে। মাছের কাঁটা বেছে নিতে হবে। এবার কড়াইয়ে তেল দিয়ে পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, রসুন হালকা ভেজে নিন। ভাজা হলে কোরানো নারকেল ও ধনেপাতা দিয়ে সব উপকরণ ভালোভাবে ভেজে নামিয়ে নিন। এবার সব উপকরণ পাটায় বেটে ভর্তা বানান। গরম ভাতের সঙ্গে এই ভর্তা খেতে দারুণ লাগবে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কল প ত

এছাড়াও পড়ুন:

‘লিচুর বাগানে’ যে কারণে ‘পিরিতের বেড়া’ দিতে হয়

‘তাণ্ডব’ সিনেমার গান ‘লিচুর বাগানে’ প্রকাশের পর রীতিমতো হইচই পড়ে গেছে। কফি শফ থেকে বাস, মেট্রোরেল আশপাশে কান পাতলে গানটা শোনা যাচ্ছে। কেউ না কেউ শুনছেন। সামাজিক মাধ্যমের স্টোরি ও রিলসেও গানটি ভেসে বেড়াচ্ছে। চরকি ও এসভিএফের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত গানটির আজ পর্যন্ত (১২ এপ্রিল ২০২৫) ভিউ হয়েছে যথাক্রমে ১২ মিলিয়ন ও ৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন।

উচ্ছ্বসিত অনেক দর্শক গানটি নিয়ে মন্তব্যও করেছেন। তাহসিন নামের এক শ্রোতা লিখেছেন, ‘গানটির প্রতিটি সুর, দৃশ্য ও পরিবেশনায় বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অপূর্ব রূপ ফুটে উঠেছে। যাত্রাপালার ফিল্মের আবহে তৈরি এই গানটি যেন গ্রামীণ বাংলার প্রাণস্পন্দন তুলে ধরেছে। লোকেশন থেকে শুরু করে কস্টিউম, প্রতিটি ডিটেইলে আছে নিখুঁত যত্ন।’

গানটি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বন্ধুদের মধ্যে খুনসুটিও চলছে। বন্ধুকে মেনশন দিয়ে কেউ যেমন প্রশ্ন করছেন, ‘কী রে, বেড়া ডিঙাতে পারলি?’ আবার কেউ জিজ্ঞেস করছেন বল তো, ‘“লিচুর বাগানে” কেন “পিরিতের বেড়া” দিতে হয়?’

প্রশ্নটির উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা যাক। শুরুতেই ‘লিচুর বাগানে’ গানটি দিয়ে আলোচিত, ‘কে এই ছত্তার পাগলা’ শীর্ষক প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক। গবেষক সরোজ মোস্তফার মতে ‘কে দিল পিরিতের বেড়া লিচুরও বাগানে’ পঙ্‌ক্তির রচয়িতা ও সুরকার ছত্তার পাগলা। তবে সংগীতগবেষক গৌতম কে শুভর মত ভিন্ন। তাঁর মতে, ‘এটি মূলত প্রচলিত ঘেটু গান। “কে দিল পিরিতির বেড়া লিচুর বাগানে?” অংশটি মূল গানের অংশ। ছত্তার পাগলা নিজের মতো করে এর সঙ্গে কথা সংযোজন করেছেন। নেত্রকোনায় ছত্তার পাগলার লেখা রূপটিই বিখ্যাত হয়েছে।’ ২০১৪ সালের এপ্রিলে মারা গেছেন ছত্তার পাগলা। জীবদ্দশায় রচনা ও সুরারোপ করেছেন কয়েক শ গান। মৃত্যুর বছর তিনেক আগে তাঁর কাছ থেকে গানটি শুনে হাতে লিখে রেখেছিলেন আল মামুন চৌধুরী।

আল মামুন চৌধুরীর লেখা অনুযায়ী গানটির কথা:
কে দিল পিরিতের বেড়া, লিচুরও বাগানে
লিচুরও বাগানে গো সই…লিচুরও বাগানে …(ঐ)
পাখি খাইছ না লিচু, বন্দে খাইবো
বন্দে লিচু খাইয়া, খুশি হইবো
আমার কাছে আইসা কইবো
কত শান্তি দিবো আমার মনেপ্রাণে (ঐ)
ছোট ছোট লিচুগুলি, বন্দে তুলে আম্বো তুলি
বন্দে দেয় গো আমার মুখে,
আমি দিতে চাই বন্ধুর মুখের পানে…(ঐ)
মিষ্টি লিচু খাইয়া বন্দে, বাঁশি বাজায় মন আনন্দে
আমার মনে লাগে সন্দে বন্ধু সম্ভব জাদু জানে (ঐ)
বাঁশি হাতে পলায় মালা, তারে চায় ছত্তার পাগলা,
করব লইয়া উলামেলা, (২) প্রাণবন্ধুর সনে…(ঐ)

সরল অর্থে ‘বেড়া’ হচ্ছে  প্রতিবন্ধকতা তথা বাধা তৈরির উপকরণ। আর ‘পিরিতের বেড়া’ মানে ভালোবাসায় বাধা। কিন্তু ভালোবাসার এই বাধা তথা প্রতিবন্ধকতা ‘লিচুর বাগানে’ কেন? কবিতা তথা গানে অর্থের তারতম্য অর্থের অনুগত না হয়ে বোধ কিংবা ভাবনার পরবশে প্রস্ফুটিত হয়। ব্যক্তিবিশেষে তা ভিন্ন ভিন্ন অর্থ লাভ করে, ভিন্ন ভিন্ন মূল্য পায়।

আরও পড়ুন‘লিচুর বাগানে’ গানটি দিয়ে আলোচিত, কে এই ছত্তার পাগলা ০৬ জুন ২০২৫

‘কে দিল পিরিতের বেড়া, লিচুরও বাগানে’ একটি ‘ঘাটু গান’ বা ‘ঘেটু গান’। এই গান প্রসঙ্গে জানা যায়, এই গানের অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল নৃত্য। অল্প বয়সী একটি ছেলেকে মেয়ে সাজিয়ে তার নৃত্যের মধ্য দিয়ে ঘেটু গান পরিবেশিত হতো। সঙ্গে থাকত ঢোল, হারমোনিয়াম, বাঁশি ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র। কয়েকটি ‘ঘেটু গানে’র দৃষ্টান্ত দেখা যাক।
(১)
‘তুই আমারে চিনলে নারে
আমি তো রসের কমলা।
বন্ধুর বাড়ি আমার বাড়ি
মধ্যে নলের বেড়া।’
(২)
ঘুমাইলা ঘুমাইলারে বন্ধু
পান খাইলায়না
এক বালিশে দুইটি মাথা
সুন্দর কইরা কওরে কথা।
গানগুলো থেকে উপলব্ধি করতে কষ্ট হয় না যে ‘ঘেটু গানে’ যেমন ভাষার সারল্য আছে, তেমনিভাবে রূপকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে যাপিত জীবনের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে থাকা নানা উপকরণ। আর এ ক্ষেত্রে গান রচনার সময় রচয়িতা তাঁর আশপাশ থেকেই গান নির্মাণের উপকরণগুলো যে নিয়ে থাকবেন, সেই ধারণাও পাওয়া যায়। ‘লিচুর বাগানে’ গানের ক্ষেত্রেও বোধ করি এটা ঘটেছে। তাই এই গানে যেমন ‘লিচু বাগানে’র কথা আছে, একইভাবে আছে ‘পাখি’, ‘বাঁশি’ ও ‘লিচু’র কথাও। পাখিকে লিচু না খাওয়ার অনুরোধ করলেও পাখি যেন খেতে না পারে সে কারণেই যে বেড়া দেওয়া হয়েছে; সেই ব্যথাও গানটিতে ফুটে উঠেছে। সব মিলিয়ে ‘লিচুর বাগান’ শেষ পর্যন্ত ‘লিচুর বাগানে’ সীমাবদ্ধ থাকেনি। হয়ে উঠেছে ভালোবাসার প্রতীক।

কথায় আছে, ভালোবাসা জয় করে নিতে হয়। জিতে নেওয়ার মধ্যেই আছে অপার আনন্দ। ভালোবাসায় প্রতিবন্ধকতা থাকাটা মোটেও দোষের নয়। বরং বাধা না থাকাটাই যেন আশ্চর্যের। একইভাবে ভালোবাসা জিতে নেওয়ার পরও পেয়ে গেছি বলে হাল ছেড়ে দিলে চলে না। ‘লিচুর বাগান’কে এ ক্ষেত্রে ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করলে, ‘লিচুর বাগানে’ ‘পিরিতের বেড়া’ তথা ভালোবাসার বেষ্টনী দেওয়াটাই যুক্তিযুক্ত। কেননা ‘ভালোবাসা’কে ভালোবাসা দিয়েই আগলে রাখতে হয়। প্রবল যত্নে আঁকড়ে রাখতে হয়। যেন কোনো কৌতূহলেই তা দুলে না ওঠে, হারিয়ে না যায়।

আরও পড়ুনসাবিলা তো ‘লিচুর বাগানে’ দিয়ে কী যে আগুন লাগিয়ে দিল...০৫ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘লিচুর বাগানে’ যে কারণে ‘পিরিতের বেড়া’ দিতে হয়