খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) সংঘর্ষের ঘটনায় ছাত্রদল নেতাকর্মীরা হামলার শিকার হয়েছেন দাবি করে পঞ্চগড়ে ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল করেছে ছাত্রদল। বুধবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি তারিকুজ্জামান তারেকের নেতৃত্বে মিছিলটি বের হয়।

মিছিলে ‘একটা একটা শিবির ধর, ধরে ধরে জবাই কর’, ‘শিবিরের আস্তানা, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’, ‘হই হই রই রই, জামাত-শিবির গেলো কই’- শ্লোগান দেওয়া হয়।

মিছিলটি জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে মহাসড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে শেষ হয়। পরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি আবু সাঈদ, পঞ্চগড় জেলা ছাত্রদলের সভাপতি তারেকুজ্জামান তারেক প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, কুয়েটে ছাত্রদলের সাংগঠনিক কাজে বাধা প্রদান এবং সহযোদ্ধাদের যেভাবে রক্তাক্ত করা হয়েছে তা দুঃখজনক। এ ঘটনায় সারাদেশে ছাত্রদল আবার জেগে উঠেছে। বিগত দিনে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতন তরান্বিত করতে সারাদেশে ছাত্রদল দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলে। ছাত্রদল বুক চেতিয়ে রাজপথে না আসলে হয়তো স্বৈরাচারের পতন কখনোই হতো না। স্বৈরাচার পালিয়ে যাবার সুবাদে নিষিদ্ধ সংগঠন, যারা গর্তে অবস্থান করত; তারা সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে। দীর্ঘ ১৭ বছর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে একটি মাত্র সংগঠন ছিল, সেটা ছাত্রদল। ছাত্রশিবির যদি ছাত্রদলের অস্তিত্বে আঘাত হানতে চায়, তাহলে ছাত্রলীগকে যেভাবে বিতাড়িত করেছি; তেমনি শিবিরকেও পঞ্চগড় থেকে বিতাড়িত করব।

এর আগে, একই ঘটনায় রাত ৯টায় মশাল মিছিল করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পঞ্চগড় জেলা।

পঞ্চগড় গার্লস স্কুলের সামনে থেকে মশাল মিছিলটি বের করা হয়। মিছিলে ‘লীগ গেছে যেই পথে, দল যাবে সেই পথে’, ‘ছাত্রদলের আস্তানা, ভেঙ্গে দাও গুড়িয়ে দাও’- স্লোগান দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) ক্যাম্পাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শুরু হয়ে সংঘর্ষ দফায় দফায় চলে বিকেল বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। এতে কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

ঢাকা/নাঈম/রাজীব

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত রদল র

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে

সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’

বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।

এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।

এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’

আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ