তানজিম সাইয়ারা তটিনী। এই সময়ের দর্শকপ্রিয় অভিনেত্রী ও মডেল। বছরব্যাপী নাটকের শুটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকেন তিনি। সম্প্রতি উত্তরার একটি শুটিং সেটে দেখা হয় তাঁর সঙ্গে। সেখানেই কাজের ব্যস্ততা ও নানা প্রসঙ্গ নিয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

কোন নাটকের শুটিং করছেন, এর গল্প ও আপনার চরিত্রটা কেমন? 
নাটকটির নাম ‘হৃদয়ে রেখেছি গোপনে’। নাটকটি নির্মাণ করছেন মাহমুদ মাহিন। অল্প কথায় বললে এটা প্রেম ও পারিবারিক গল্পের নাটক। এখানে আমার বিপরীতে অভিনয়ে করছেন ইয়াশ রোহান। নাটকের গল্পে আমি দেশের বাইরে বড় হয়েছি, পরে দেশে আসি। আমার চরিত্রটির মধ্যে বাঙালি সংস্কৃতি আছে। 

ভালোবাসা দিবসের নাটকে কেমন সাড়া পেলেন?
আলহামদুলিল্লাহ বেশ ভালো। ভালোবাসা দিবসের যে কয়টি গল্পে অভিনয় করেছি, সবগুলোতে দর্শকের ভালো সাড়া পেয়েছি। এর মধ্যে ‘তোমায় পাব কি’ নাটকে চট্টগ্রামে প্রথমবার শুটিং করেছি। শহরটা আমার কাছে দারুণ লেগেছে।

নাটক তো অনেক হলো। সিনেমায় কবে আসছেন?
সত্যি কথা বলতে সিনেমার প্রস্তাব আমি পেয়েছি। কিন্তু সিনেমায় অনেক প্রস্তুতির বিষয় আছে। সব কিছু মিলিয়ে আমার কাছে মনে হয়, কোন গল্পে অভিনয় করছি, সেটা বিষয়। আমি বলে ফেললেই তো  সিনেমা করা হয়ে গেল না! চরিত্রের মূল্যায়ন তো থাকতে হবে। যখন মনে হবে এই চরিত্রের জন্যই আমি এত বছর অপেক্ষা করেছি, তখনই সিনেমা করব।

আফরান নিশোর সঙ্গে ওটিটিতে একটা কাজের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। কাজটা কি করছেন?
এটা নিয়ে আপাতত কিছু বলতে চাই না। কারণ এখনও অফিসিয়ালি আমাদের কোনো ঘোষণা আসেনি। তাই কিছু না বলাই ভালো।

এখন তো সবাই ওটিটির কাজের দিকে ঝুঁকছে। এদিকে আপনি নেই.

..
আমি নাটক নিয়মিত করছি। নাটক নিয়ে আমার একটা ধারণা তৈরি হয়ে গেছে। ওটিটিতে যেহেতু আমার এখনও শুরু হয়নি। তাই ভেবেচিন্তে সময় নিয়ে ভালো গল্পে কাজ করতে চাই। তবে ওটিটির কাজ করার মতো গল্প আমার কাছে খুব একটা আসেও না।  

ইদানীং নাটকের নাম পরিবর্তন করে সেটা পুনরায় আপলোড করা হচ্ছে, বিষয়টিকে কীভাবে দেখেন?
বিষয়টি আমারও চোখে পড়েছে। আমাদেরই কিছু নাটকের নাম পরিবর্তন করে রি-আপলোড করা হচ্ছে। আমার মনে হয়, এটা আমাদের দর্শকের সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা। কারণ দর্শক আমাদের কাজ দেখার জন্য মুখিয়ে থাকে। সুতরাং নতুন থামলেন দিয়ে পুরোনো কাজ নতুন বলে চালিয়ে দেওয়া এক ধরনের অসৎ কাজ।

নাটকের ভিডিও ক্লিপ নিয়ে মাঝে মাঝে বিতর্ক দেখা যায়। এটা কীভাবে দেখেন?
আমাদের এখন একটা রীতি হয়ে গেছে, বিতর্কিত একটা কোনো কিছু করে কীভাবে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়। এটার জন্য ভালো ভালো কাজ চাপা পড়ে যায়। আবার অনেক সময় এটা ব্যক্তিগত জীবনের ওপরও প্রভাব পড়ে। সেই জায়গাতে আমার একটু সচেতন হওয়া উচিত।

জনপ্রিয়তা যত বাড়ছে চাপ-দায়বদ্ধতাও কী বেড়েছে?
দায়বদ্ধতা তো বেড়েছেই। আমার মনে হয় এটা আমার জন্য আশীর্বাদ। কারণ দর্শক আমাকে এতটা ভালোবাসেন, এটা তো অনেকে চেয়েও পান না। যেহেতু আমি জায়গাটা অর্জন করতে পেরেছি, সেহেতু আমি চাই তাদের প্রত্যাশাটা যথাযথভাবে পূরণ করতে।’

সামাজিক মাধ্যমে তারকাদের অসংখ্য আইডি, বিষয়টি কীভাবে দেখেন?
এটা আসলে উচিত নয়। এটার কারণে আমাদেরই সমস্যায় পড়তে হয়। মাঝে মধ্যে আমাদেরই আইডি মানুষ খুঁজে পায় না। আগে আমার একটি অফিসিয়াল পেজ ছিল, এখন সেটাও নেই। জানি না আমি কার কোন ক্ষতি করেছি। আমি মনে করি এই জিনিসগুলো ঠিক না।

‘পথে হলো দেখা’ আবার আসবে কবে?
‘পথে হলো দেখা’ ও ‘পথে হলো দেরি’ এই দুটি কাজ আমার জীবনের একটি অংশজুড়ে আছে। এর মধ্যে ‘পথে হলো দেরি’ কাজটি আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। সেজন্য নির্মাতা জাকারিয়া সৌখিন ও অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্ব ভাইয়ার কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। তারা আমার ওপর বিশ্বাস রেখে ওই চরিত্রে আমাকে সুযোগ করে দিয়েছেন।

নারীপ্রধান গল্প নিয়ে আপনার ভাবনা?
নারীপ্রধান গল্পে এর আগে আমি কয়েকটি কাজ করেছি। এ ছাড়া নারীপ্রধান গল্পে কিছু কাজও হাতে রয়েছে। তবে আমি চেষ্টা করছি, গল্প ও চরিত্রে ভিন্নতা আনার।

মেহজাবীনের সঙ্গে আপনার তুলনা করে। আপনার কেমন মনে হয়?
একজনের সঙ্গে অন্যজনের তুলনা হয় না। তবে ভালো লাগে, তাঁর মতো একজন গুণী অভিনেত্রীর পাশে মানুষ যখন আমাকে বসায়। এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। আমি সব সময় বলি, মেহজাবীন আপু আমাদের প্রজন্ম ও আমার পরের প্রজন্মের জন্য উদাহরণ হয়ে আছেন। কারণ তাঁর ক্যারিয়ার ও কাজের প্রতি সততা আমাকে মুগ্ধ করে। তাঁর কাছ থেকে এই বিষয়টা আমাদের নেওয়া উচিত।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন টক আম দ র আম র জ র জন য র একট করছ ন ব ষয়ট আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

মে দিবস ২০২৫ : শ্রমিক-মালিক ঐক্যে গড়বে নতুন বাংলাদেশ

১৮৮৬ সালের ১ মেÑএকটি দিন, একটি দাবি, আর হাজারো শ্রমিকের আত্মত্যাগের মাধ্যমে ইতিহাসে রক্তাক্ত দাগ কেটে দিয়েছিল যে মুহূর্ত, তা আজ বিশ্বব্যাপী ‘মে দিবস’ হিসেবে পালিত হয়। তখনকার দাবিটি ছিল স্রেফ ৮ ঘণ্টা শ্রমের অধিকার। কিন্তু আজ ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে শ্রমিকের দাবি শুধু সময়
নয়Ñমর্যাদা, সুরক্ষা ও ন্যায্যতার প্রশ্নও।

এবারের মে দিবসের প্রতিপাদ্য “শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়বো এদেশ নতুন করে”Ñএ যেন সময়ের এক গুরুত্বপূর্ণ পাঠ। উন্নয়নশীল বাংলাদেশের বাস্তবতায় এই বার্তা কেবল প্রাসঙ্গিক নয়, বরং তা রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান ও সমাজের জন্য এক যৌথ দিকনির্দেশনা।

বাংলাদেশের শ্রমচিত্র ও বাস্তবতা

বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত শ্রমনির্ভর। তৈরি পোশাক শিল্পে প্রায় ৪০ লাখ, কৃষি ও নির্মাণ খাতে আরও কয়েক কোটি মানুষ নিয়োজিত। পরিসংখ্যান বলছে, দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে শ্রমনির্ভর খাত থেকে। কিন্তু যাঁরা এই অর্থনীতির ইঞ্জিন হিসেবে কাজ করছেন, সেই শ্রমিকরা কি পেয়েছেন তাদের প্রাপ্য অধিকার ও মর্যাদা?

দুঃখজনক হলেও সত্য, এখনও বহু শ্রমিক পান না ন্যূনতম মজুরি, কর্মস্থলে নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য সেবা কিংবা ছুটি সংক্রান্ত মৌলিক সুবিধা। নারী শ্রমিকদের পরিস্থিতি আরও জটিলÑযত্রতত্র হয়রানি, মাতৃত্বকালীন সুবিধার অভাব, কিংবা নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ গড়ে না তোলার ফলে এই খাতেও স্থিতিশীলতা আসছে না।

মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক: দ্বন্দ্ব নয়, দরকার সহমর্মিতা

এক সময় শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক মানেই ছিল দ্বন্দ্ব, ধর্মঘট ও হুমকি। তবে বর্তমান বৈশ্বিক বাস্তবতা বলছেÑসহযোগিতাই টেকসই উৎপাদনের চাবিকাঠি। মালিকপক্ষ যখন শ্রমিককে কেবল “ব্যয়” হিসেবে না দেখে “সম্পদ” হিসেবে  বিবেচনা করেন, তখন প্রতিষ্ঠান লাভবান হয়। একইভাবে শ্রমিকও যদি বুঝেন প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন মানে তার কর্মস্থলের স্থায়িত্বÑতাহলে দুপক্ষের মধ্যে বিশ্বাসের
ভিত্তি গড়ে ওঠে।

এই বিশ্বাস গঠনের জন্য প্রয়োজন তিনটি স্তম্ভ: 

নীতিগত স্বচ্ছতা Ñ ন্যায্য মজুরি, নির্ধারিত কর্মঘণ্টা ও চুক্তিভিত্তিক নিরাপত্তা দায়িত্বশীল মালিকপক্ষ Ñ কর্মপরিবেশ, স্বাস্থ্যসেবা ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিতে উদ্যোগ সচেতন শ্রমিকশ্রেণি Ñ অধিকার আদায়ের পাশাপাশি কর্তব্য পালনের মানসিকতা

নীতি ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ

বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ ও সংশোধিত ২০১৮ সংস্করণ অনুযায়ী শ্রমিকের অধিকার স্বীকৃত হলেও বাস্তবায়নের জায়গায় ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে  অনানুষ্ঠানিক খাতে (যেমন কৃষি, গৃহপরিচারিকা, গিগ-ওয়ার্কার) শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়টি এখনও প্রায় উপেক্ষিত।

এছাড়া, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, দুর্ঘটনা বীমা, এবং পুনঃপ্রশিক্ষণের ব্যবস্থাপনা আরও জোরদার হওয়া জরুরি। সরকার শ্রমিক কল্যাণ তহবিল গঠন করলেও তা অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।

এই প্রেক্ষাপটে ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে’ দেশ গড়ার বার্তাটি যেন শুধুই স্লোগানে সীমাবদ্ধ না থাকে। বরং এটি হোক রাজনৈতিক সদিচ্ছা, আর্থিক বিনিয়োগ ও মানবিক বিবেচনার এক বাস্তব প্ল্যাটফর্ম।
প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ ও নতুন শ্রম বাস্তবতা

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রেক্ষাপটে শ্রমবাজার দ্রুত বদলে যাচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, অটোমেশন ও গিগ-ইকোনমি অনেক চাকরি বিলুপ্ত করছে, আবার নতুন দক্ষতা চাচ্ছে। বাংলাদেশ যদি সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চায়, তাহলে  শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ, পুনঃস্কিলিং এবং ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।

এখানে মালিক ও রাষ্ট্র উভয়ের উচিত হবে, শ্রমিককে প্রতিযোগিতায় টিকিয়ে রাখতে বিনিয়োগ করা, কারণ দক্ষ শ্রমিক ছাড়া কোনো শিল্পই টিকে থাকে না।

মে দিবস: উৎসব নয়, দায়বদ্ধতার প্রতীক

মে দিবস কেবল লাল পতাকা হাতে শোভাযাত্রার দিন নয়, এটি আমাদের মানবিক চেতনার প্রতিফলন। যে শ্রমিক ঘাম ঝরিয়ে ভবন গড়ে, কৃষি জমি চষে, রপ্তানি পণ্য তৈরি করেÑতার জন্য আমাদের উচিত মর্যাদাপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করা।

এবছর, আসুন আমরা সবাই রাষ্ট্র, মালিকপক্ষ ও শ্রমিকÑএকটি মানবিক, উৎপাদনশীল ও  শীদারিত্বভিত্তিক সমাজ গঠনের পথে এগিয়ে যাই। শ্রমিকের হাতে গড়া এই বাংলাদেশ হোক তার জন্যই গর্বের জায়গা। 


লেখক পরিচিতি:

মীযানুর রহমান
সাংবাদিক ও সমাজ বিশ্লেষক
মোবাইলঃ ০১৭৫৪১০৯০৭২
যোগাযোগ: : [email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • র‍্যাংকিংয়ে মিরাজ-জাকেরদের অগ্রগতি
  • চিনি-লবণের অনুপম পাঠ
  • মে দিবস ২০২৫ : শ্রমিক-মালিক ঐক্যে গড়বে নতুন বাংলাদেশ
  • বিদ্যালয়ের ১৮টি গাছ বিক্রি করলেন প্রধান শিক্ষক 
  • কর্ণাটকে ক্রিকেট খেলার সময় বচসা, যুবককে পিটিয়ে হত্যা
  • দেশে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গেটওয়ে চালুর দাবি 
  • রাখাইন রাজ্যে ‘মানবিক করিডোর’ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিলেন প্রেস সচিব
  • কানাডায় আবারও লিবারেল পার্টির সরকার গঠনের আভাস