সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মেডিকেল কলেজগুলোর শিক্ষার গুণগত মান বাড়াতে হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম।

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার সিরডাপ ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কথা জানান তিনি। ‘বাংলাদেশে স্বীকৃতির জন্য বিএমইএসি মানদণ্ড, নীতি ও পদ্ধতি, সাইট পরিদর্শন নির্দেশিকা এবং স্ব-মূল্যায়ন প্রতিবেদন সম্পর্কে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষদের ওরিয়েন্টেশন’ আয়োজন করে বাংলাদেশ মেডিকেল এডুকেশন অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল।

স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, আমরা যে পেশাতেই যাই না কেন, সবার আগে আমাদের নিজেকে ভালো মানুষ হতে হবে। ডাক্তার, শিক্ষক, ইঞ্জিনিয়ার যে কোনো পেশাতেই ভালো মানুষ হওয়াটা পূর্বশর্ত।

স্বাস্থ্য খাতে মানসম্মত শিক্ষার বিকল্প নেই জানিয়ে নূরজাহান বলেন, আমাদের শিক্ষাটা মানসম্মত হতে হবে। চারপাশটা অন্যরকম হয়ে গেছে। আমাদের দক্ষ, ভালো, মানবিক পেশাজীবী গড়ে তুলতে হবে। তাহলে এই অবস্থা থেকে আমরা দাঁড়িয়ে উঠতে পারবো।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত দেশের সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষদের উদ্দেশ্যে নূরজাহান বেগম বলেন, আপনারা মানুষ তৈরি করার কারিগর। যথার্থ মানুষ তৈরি করতে পারলে এই দেশটার এমনিতেই পরিবর্তন ঘটবে। আমরা আমাদের মেডিকেল কলেজগুলোর শিক্ষার গুণগত মান বাড়িয়ে যথার্থ ভালো ডাক্তার তৈরি করতে পারলে স্বাস্থ্য খাতের মানোন্নয়ন সম্ভব।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মেডিকেল এডুকেশন অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা.

মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান, স্বাস্থ্য শিক্ষা সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা মো. আবু জাফর, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন প্রমুখ।

এসময় দেশের সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ এবং বাংলাদেশ মেডিকেল এডুকেশন অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বিএইচ

উৎস: SunBD 24

কীওয়ার্ড: ম ড ক ল কল জ উপদ ষ ট আম দ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।

জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।

পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।

মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ