তিন স্পিনার নিয়ে খেলবে ভারত, কেমন হবে বাংলাদেশের একাদশে
Published: 19th, February 2025 GMT
পুরো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি দুবাইতে খেলবে ভারত। সেখানকার শুষ্ক ও স্পিন বান্ধব উইকেটের কথা বিবেচনা করা দলে পাঁচ স্পিনার রেখেছেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের নির্বাচকরা। এর মধ্যে বাংলাদেশের বিপক্ষে বৃহস্পতিবারের ম্যাচে একাদশে তিন স্পিনার রাখার বিষয়টি এক প্রকার নিশ্চিত।
রবীন্দ্র জাদেজার একাদশে থাকা নিশ্চিত। কুলদীপ যাদব খেলবেন নাকি বরুণ চক্রবর্তী এটার ওপর নির্ভর করবে অক্ষর প্যাটেল ও ওয়াশিংটন সুন্দরের মধ্যে একজনের একাদশে থাকা। এছাড়া পেস আক্রমণে হার্শিট রানার চেয়ে এগিয়ে বাঁ-হাতি পেসার অর্শদ্বীপ।
অলরাউন্ডার মিলিয়ে ভারতের ব্যাটিং লাইন আপ খুবই শক্তিশালী। যে কারণে ঋষভ পান্তের একাদশে জায়গা পাওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কম। ভারতের এই স্পিন অ্যাটাকের বিপক্ষে বাংলাদেশ কেমন একাদশ সাজাবে সেটা নিয়ে আছে বেশ আলোচনা।
তাওহীদ হৃদয় স্পিন ভালো খেলেন। যে কারণে মিডল অর্ডারে একাদশে থাকার বড় দাবিদার তিনি। অভিজ্ঞতা বিবেচনায় মাহমুদউল্লাহ থাকবেন একাদশে। আবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ফিনিশার রোলে অসাধারণ খেলা জাকের আলীকে বাদ দেওয়া কঠিন হবে। বাস্তবতা হচ্ছে- এই তিনজনের অন্তত একজনকে রাখতে হবে একাদশের বাইরে।
ভারতের বিপক্ষে কেমন একাদশ সাজাবেন? এমন প্রশ্নে অধিনায়ক নাজমুল শান্ত ম্যাচের আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেছেন। ভারতের এক সংবাদ মাধ্যম মধ্যে দাবি করেছে, ভারতের স্পিন আক্রমণ সামলাতে এই তিন জনের দু’জনকে একাদশে রাখতে পারে বাংলাদেশ। সেক্ষেত্রে তানজিদ তামিমকে বাদ দেওয়া হতে পারে। নাজমুল শান্ত ওপেনিংয়ে এসে তিনে মিরাজকে খেলানো হতে পারে।
ভারতের টপ অর্ডারের ব্যাটিং লাইন আপ ডানহাতিতে ভরা। একাদশে বাঁ-হাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ তাই অটোমেটিক চয়েজ হতে পারেন। মিরাজের সঙ্গে স্পিন আক্রমণে থাকতে পারেন রিশাদ হোসেনও। নাজমুল শান্তর ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে ভারতীয় সাংবাদিকরা নাহিদ রানাকে নিয়েই প্রশ্ন করেছেন বেশি। নাহিদকে হুমকি মানতে শুরু করেছেন ভারতীয়রা।
অধিনায়ক শান্ত নাহিদের প্রশংসা করলেও একাদশে থাকার নিশ্চয়তা দেননি। পেসার তাসকিন আহমেদ এই দলে অটোচয়েজ হয়ে উঠেছেন। দুবাইয়ের উইকেটে মুস্তাফিজ হতে পারেন তার অটোমেটিক সঙ্গী। ভারতকে ব্যাটিং দিয়ে হারানো কঠিন। বাংলাদেশ তাই ছয় বোলার নিয়ে নামতে পারে। সেক্ষেত্রে তানজিম সাকিব ও নাহিদ রানার মধ্যে একজনকে বেছে নিতে হবে। প্রস্তুতি ম্যাচে নাহিদকে মাত্র ২ ওভার বোলিং করিয়ে তাকে সতেজই রেখেছে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট।
বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ: তানজিদ তামিম, সৌম্য সরকার, নাজমুল শান্ত, মেহেদী মিরাজ, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, রিশাদ হোসেন, নাসুম আহমেদ, তাসকিন আহমেদ, নাহিদ রানা, মুস্তাফিজুর রহমান।
ভারতের সম্ভাব্য একাদশ: রোহিত শর্মা, শুভমন গিল, বিরাট কোহলি, শ্রেয়াস আইয়ার, কেএল রাহুল, অক্ষর প্যাটেল, হার্ডিক পান্ডিয়া, রবীন্দ্র জাদেজা, মোহাম্মদ শামি, অর্শদ্বীপ সিং, বরুণ চক্রবর্তী।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আহম দ
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষক পদায়নে নীতিমালা লঙ্ঘন কোথাও বাড়তি, কোথাও ঘাটতি
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক পদায়নে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ৪০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন করে শিক্ষক পদায়নের কথা থাকলেও অনেক বিদ্যালয়ে তা মানা হয়নি। কোনো বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক কম, কোনো প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক বেশি। শিক্ষক সংকটে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠানে। এমন চিত্র বাঞ্ছারামপুর উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে।
অভিযোগ রয়েছে, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বিদ্যালয়ভিত্তিক চাহিদা নির্ণয়, সরেজমিন পরিদর্শন এবং স্বচ্ছ তালিকা প্রণয়ন করার কথা থাকলেও কোনো নিয়ম মানা হয়নি বাঞ্ছারামপুরে প্রাথমিকের শিক্ষক পদায়নে। নিজস্ব পছন্দ, ব্যক্তিগত লাভ ও রাজনৈতিক চাপের কাছে জলাঞ্জলি দিয়েছেন নীতিমালা। অনেক নারী শিক্ষককে ২৩ কিলোমিটার দূরের বিদ্যালয়ে পদায়ন করা হয়েছে, যা যাতায়াত ও নিরাপত্তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। পুরুষ শিক্ষকের ক্ষেত্রে নীতিমালায় দূরবর্তী এলাকায় পদায়নের নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে দেখা গেছে, কয়েকজন শিক্ষককে নিজের এলাকায় পদায়ন করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ১৩৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৮৪৫ জন সহকারী শিক্ষকের পদের বিপরীতে ফাঁকা ছিল ১১২টি। এসব শূন্য পদ পূরণ করতে গত ১৩ মার্চ নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের বিভিন্ন বিদ্যালয় পদায়ন করা হয়। একাধিক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৯টি বিদ্যালয়ে। একাধিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট না থাকার পরও নতুন শিক্ষক দেওয়া হয়েছে। ২৮টি বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকের পদ ফাঁকা থাকলেও কোনো নতুন শিক্ষক পদায়ন করা হয়নি। নতুন নিয়োগ পাওয়া ৫২ শিক্ষকের মধ্যে ১৯ জনকে প্রতিস্থাপন সাপেক্ষে বদলি হওয়াদের স্থলে পদায়ন করা হয়েছে। ৯টি বিদ্যালয়ে পদায়ন করা হয়েছে ২৭ জনকে।
তাতুয়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে ১৬৬ জন। প্রধান শিক্ষকসহ সাতটি শিক্ষকের পদ রয়েছে। চারটি শূন্য পদের বিপরীতে চারজনকে পদায়ন করা হয়েছে। এখানে শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক সংখ্যা অতিরিক্ত। উলুকান্দি উত্তর সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৯২ জন। এখানে প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষকের সাতটি পদে কর্মরত ছিলেন পাঁচজন। শিক্ষার্থী অনুপাতে পর্যাপ্ত শিক্ষক থাকার পরও নতুন একজনকে পদায়ন করা হয়েছে।
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বিদ্যালয় দুটি। এর মধ্যে কালাইনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রাথমিকে ২৪৯ ও মাধ্যমিকে ১১৭ জন। এখানে প্রধান শিক্ষকসহ কর্মরত ছিলেন ১০ জন। নতুন করে একজনকে পদায়ন করা হয়েছে। অথচ আগামী বছর থেকে এই বিদ্যালয়ের নিম্ন মাধ্যমিকের কার্যক্রম থাকবে না। চরশিবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাথমিকে ৫১০ জন ও নিম্ন মাধ্যমিকে ২৯৮ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রধান শিক্ষকসহ ১৩টি শিক্ষকের পদ রয়েছে। এর মধ্যে সহকারী শিক্ষকের পাঁচটি শূন্য পদে পাঁচজনকে পদায়ন করা হয়েছে। আগামী বছর থেকে এই বিদ্যালয়ের নিম্ন মাধ্যমিকের কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে যাবে।
ডোমরাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৬৪ জন। প্রধান শিক্ষকসহ এখানে কর্মরত ছিলেন ছয়জন। শিক্ষক সংকট না থাকার পরও আরও একজনকে পদায়ন করা হয়েছে। চরমানিকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০৩ জন। এখানে কর্মরত ছিলেন পাঁচ শিক্ষক। প্রধান শিক্ষকসহ পাঁচটি পদ শূন্য থাকলেও নতুন করে মাত্র একজন সহকারী শিক্ষক দেওয়া হয়েছে। শিক্ষক সংকটে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।
দরিয়া দৌলত দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৮৮। প্রধান শিক্ষকসহ এখানে কর্মরত ছিলেন আটজন। শিক্ষক সংকট না থাকার পরও নতুন করে একজনকে পদায়ন করা হয়েছে। শান্তিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৩২। এখানে কর্মরত ছিলেন চারজন। প্রধান শিক্ষকসহ দুটি পদ শূন্য। এখানে একজনকে পদায়ন করা হয়েছে, তাও আবার প্রতিস্থাপনকৃত বদলি হয়ে থাকা শিক্ষককে ছাড় করার জন্য। বর্তমানে দুটি পদ শূন্য।
দড়িকান্দি পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৩৭। কর্মরত রয়েছেন ছয়জন শিক্ষক। প্রধান শিক্ষকসহ দুটি পদ শূন্য থাকলেও একজনকেও পদায়ন করা হয়নি। শেখেরকান্দি সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৮০। প্রধান শিক্ষকসহ কর্মরত রয়েছেন ছয়জন। একটি পদ শূন্য থাকলেও কাউকে পদায়ন করা হয়নি। পাঠামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ২০৮। প্রধান শিক্ষকসহ কর্মরত ছিলেন তিনজন। তিনটি শূন্য পদের বিপরীতে একজনকে পদায়ন করা হয়েছে।
উপজেলায় মেধা তালিকা প্রথম স্থান অধিকার করা জুয়েল রানাকে পদায়ন করা হয়েছে নিজ গ্রাম মরিচাকান্দি থেকে ২২ কিলোমিটার দূরের পাঠামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পাহারিয়াকান্দি গ্রামের জান্নাতুল ফেরদৌসকে পদায়ন করা হয়েছে নিজ গ্রাম থেকে ২৩ কিলোমিটার দূরের তাতুয়াকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। অগ্রাধিকার তালিকা প্রণয় না করে ইচ্ছেমতো পদায়ন করায় শিক্ষকরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সদ্য নিয়োগ পাওয়া সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘আমার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব ২৩ কিলোমিটার। যাতায়াতে অনেক কষ্ট হয়। কাছাকাছি পদায়ন করলে অনেক ভালো হতো, কারণ আসা-যাওয়ায় শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’
সহকারী শিক্ষক জুয়েল মিয়া জানান, তিনি মেধা তালিকায় প্রথম হয়েছেন। ভেবেছিলেন কাছাকাছি কোনো বিদ্যালয়ে পদায়ন করা হবে, কিন্তু দেওয়া হয়েছে গ্রাম থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে।
নগরীরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন পদায়ন হওয়া শিক্ষক শাহ আলী বলেন, ‘নতুন মাত্র চাকরি পেয়েছি, তারপরও আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রধান শিক্ষক হিসেবে। আমি কাজের কিছুই বুঝি না। বিদ্যালয়ে মাত্র তিনজন শিক্ষক। অফিসের কাজ নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে গেলে পাঠদান ব্যাহত হয়।’
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ জানান, তারা তালিকা পাঠিয়েছিলেন, সেই হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। শিক্ষক সংকট রয়েছে এমন বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদায়ন না করে থাকলে তাঁর কিছু বলার নেই, কারণ পদায়ন করেছে ডিপিও অফিস।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামসুর রহমানের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, নীতিমালা অনুসরণ করেই শিক্ষক পদায়ন করা হয়েছে। শিক্ষক সংকটের বিষয়টি তাঁর জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনে অন্য জায়গা থেকে শিক্ষক দিয়ে তা পূরণ করা হবে।