নসরুল হামিদ ও পরিবারের ২০ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
Published: 20th, February 2025 GMT
সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এবং তাঁর স্ত্রী সীমা হামিদের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা ২০টি হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত। দুদকের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বুধবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন। বিপু ও তাঁর পরিবারের এসব ব্যাংক হিসাবে ২ কোটি ১০ লাখ ৯৭ হাজার ১১৬ টাকা রয়েছে।
এ ছাড়া পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি গাজী মোজাম্মেল হকের নামে থাকা ৬৫ বিঘা জমি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এসব জমির মূল্য ২ কোটি ১৯ লাখ ৩২ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে। পাশাপাশি জব্দ করা হয়েছে তাঁর স্ত্রী ফারজানা মোজাম্মেলের নামে থাকা ২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা মূল্যের ১২টি দলিলের জমি ও সন্তান গাজী বুশরা তাবাসসুমের নামে থাকা ৭৯ লাখ ৮৩ হাজার টাকা মূল্যের ১০টি দলিলের জমি। একই সঙ্গে তাদের নামে থাকা ২৮টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এসব হিসাবে ১৪ কোটি ৫৬ লাখ ৬৩ হাজার টাকা রয়েছে। গতকাল ঢাকার একই আদালত এ আদেশ দেন।
একই দিন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা প্রয়াত এমপি এইচ টি ইমামের ছেলে তানভীর ইমাম, তাঁর স্ত্রী মাহিন ইমাম ও মেয়ে মানিজা ইসমত ইমামের ৬৯টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের নির্দেশ দেন আদালত। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ ও সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতের বিচারক জাকির হোসেন গতকাল এ নির্দেশ দেন। এসব হিসাবে ২০ কোটি ২৯ লাখ ৭৯ হাজার টাকা রয়েছে। এ ছাড়া তাদের নামে থাকা স্থাবর সম্পদ জব্দের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া দুদকের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একই আদালত গত সরকারের সময় বহুল আলোচিত সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদেরও এদিন ১০০ বিঘা জমি, পাঁচটি ভবন ও দুটি ফ্ল্যাট ক্রোকের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে হারুনের নামে বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি হিসাব অবরুদ্ধ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়। এসব হিসাবে হারুনের জমা রয়েছে ১ কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৬৮ টাকা।
এদিকে ২০১৫ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় মতিঝিল থানার হত্যাচেষ্টা মামলায় সাবেক মন্ত্রী ফারুক খান, হাসানুল হক ইনু ও রাশেদ খান মেননের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল তাদের আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা প্রত্যেকের পাঁচ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করেন। শুনানি শেষে আসামিদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার মহানগর হাকিম এম এ আজহারুল ইসলাম। উত্তরায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মাহিন হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের আরও পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন একই আদালত।
গ্রেপ্তারের পর সাবেক এমপি মিয়াজী রিমান্ডে
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, ঝিনাইদহ-৩ আসনের সাবেক এমপি ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক সামরিক সচিব মেজর জেনারেল (অব.
এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে সালাহ উদ্দিন মিয়াজীকে যশোর জেলা সদরের রুদ্রপুর গ্রামের শ্যামলছায়া পার্কে অবরুদ্ধ করে রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মী ও এলাকাবাসী। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গিয়ে তাঁকে হেফাজতে নেয়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: নসর ল হ ম দ হ স ব অবর দ ধ জ র কর গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।