কথা ও কাজে কোনো রাখঢাক করেন না ভারতীয় বাংলা সিনেমার আলোচিত অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র। স্পষ্টভাষী হিসেবে তার ‘সুখ্যাতি’ রয়েছে। পেশাগত ও ব্যক্তিগত— দুটো বিষয় নিয়ে ফের সোজাসাপ্টা ভাবনার কথা জানালেন এই অভিনেত্রী।

কাজ কম পাওয়া নিয়ে বহুবার কথা বলেছেন শ্রীলেখা মিত্র। কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ‘স্পর্শকাতর’ মন্তব্য অতীতে করেছেন তিনি। এবার একটি এফএম রেডিওতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পেশাগত ও ব্যক্তিগত— উভয় বিষয় নিয়েই অকপট এই অভিনেত্রী।

শ্রীলেখা মিত্র বলেন, “কী কারণে তারা কাজ দেন না তা তো বলতে পারব না। এই প্রশ্নের উত্তর তারা দিতে পারবেন। ‘সদা সত্য কথা বলিবে, সত্য বই মিথ্যা বলিবে না’— এটা তো ছোট থেকে শিখে এসেছি। এর বাইরে কী করা যায় তা জানি না।”

আরো পড়ুন:

বেশ করেছে চুমু খেয়েছে, ঘুষ তো খায়নি: শ্রীলেখা

এই শীতে আমার একটাও প্রেমিক নাই: শ্রীলেখা

কাজ না পাওয়া নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অভিনেতা প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জির প্রসঙ্গ সামনে আসে। এ বিষয়ে শ্রীলেখা মিত্র বলেন, “প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জির সঙ্গে তো কখনো খারাপভাবে কথা বলিনি। তবে মিষ্টি করে কথা বললে কাজ হতো কি হতো না তা জানি না। বুম্বাদার ওই পছন্দের তালিকায় আমি ছিলাম না। সেটুকু আমি জানি। আমার ছোটবেলায় আমার সঙ্গে উনি তো অনেক কাজ করেছেন।”

শ্রীলেখার সংসার ভাঙার পর অনেকের সঙ্গে তার নাম জড়িয়েছে। তবে তার সঙ্গে প্রেম করতে হলে শর্তপূরণ করতে হবে। এ তথ্য জানিয়ে শ্রীলেখা মিত্র বলেন, “যদি কারো সঙ্গে প্রেম হয়, তাহলে প্রথম শর্ত— কুকুর ভালোবাসতে হবে। আমি তো দেখি না কেউ প্রেমেটেমে পড়ছে। কোথায় তারা? আর কুকুর বলতেও আমার কেমন জানি লাগে। ওরা আমার বাচ্চা, নাম ধরে ডাকি।”

শিলাদিত্য স্যান্যলের সঙ্গে সংসার ভাঙার পর আর বিয়ে করেননি শ্রীলেখা। প্রেম করলেও বিয়ে করতে চান না এই অভিনেত্রী। তার ভাষায়, “প্রেমে পড়তে চাই, প্রেমে পড়ে উঠতে চাই। আমি বিয়ে করতে চাই না। আমার প্রাক্তন, আমি ও আমার মেয়েকে এখনো একটা ইউনিট মনে হয়। এই ইউনিটটা ভাঙতে চাই না।”

ঢাকা/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে

সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’

বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।

এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।

এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’

আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ