‘নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ঘোলাটে করার চেষ্টা করবেন না’
Published: 20th, February 2025 GMT
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “আগামী দিনের বাংলাদেশের যে সংস্কার কার্যক্রম হবে সেটি হতে হবে সংসদে, সুতরাং এখন সংস্কারের কথা বলে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ঘোলাটে করার চেষ্টা করবেন না। সারাদেশে ধানের শীষের জোয়ার উঠে গেছে, এ জোয়ার কেউ রুখতে পারবে না। কেউ যদি মনে করে ষড়যন্ত্র করে বিএনপিকে ক্ষমতার বাইরে রাখবে, এমন কোন শক্তি নেই। হাসিনা-এরশাদ চেষ্টা করে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। এই বিএনপি মানুষ হৃদয়ে ধারণ করেছে। আমাদের অস্থা জনগণের উপর। যাদের আস্থা নেই তাদের বলছি, মাঠে গিয়ে আস্থা ফেরাতে চেষ্টা করুন।”
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে লক্ষ্মীপুর আউটার স্টেডিয়ামে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “অন্য মতের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে, উচ্ছৃঙ্খলতা চলবে না, রাজনীতিতে সহনশীলতা ও সম্মানবোধ থাকতে হবে শুধূ সংস্কার দিয়ে রাজনীতি বদলানো যাবে না, রাজনৈতিক সংস্কৃতি বদলাতে হবে, তা যদি না বদলায় তাহলে সংস্কার দিয়ে কিছু হবে না। সহ্যের, ধৈর্যের, সহনশীলতার এবং অপরের প্রতি সম্মানবোধসহ তারেক রহমানের ৩১ দফাকে ধারণ করে সকলের জন্য সমান বাংলাদেশ গঠনের বাইরে কিছু করার সুযোগ নেই।”
তিনি আরো বলেন, “বর্তমান সরকার হচ্ছে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে নির্বাচন পর্যন্ত বাংলাদেশ একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে নিয়ে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। তার বাইরে তাদের আর কিছু করার ক্ষমতা নেই। যেসব বিষয়ে ঐক্যমত রয়েছে সেগুলো করতে এক সময়ের বেশি সময় লাগবে না। সুতরাং এসমস্ত কথা বলে বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়ার যে ষড়যন্ত্র করছেন সে ষড়যন্ত্রকে আমাদের রুখে দিতে হবে।”
সমাবেশে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবুল খায়ের ভূঁইয়া, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশিদ (ভিপি হারুন) ও ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান ও বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি নুর নবী প্রমুখ।
নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষনা, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ও পতিত ফ্যাসিবাদের নানা চক্রান্তের অপচেষ্টা মোকাবেলাসহ বিভিন্ন জনদাবিতে আয়োজিত এ সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোনায়েম মুন্না।
জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব সাহাব উদ্দিন সাবু ও যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট হাসিবুর রহমানের সঞ্চালনায় এতে অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা নাজিম উদ্দিন আহমদ ও কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
যুগ্ম মহাসচিব এ্যানি বলেন, “অদৃশ্য শক্তি আমাদের দিনের আলোতে হত্যা করতে চায়, থাবা মারতে চায়। কোন কারণে যদি নির্বাচন না হয়, তাহলে আমাদের সব আন্দোলন সংগ্রাম বৃথা যাবে। জনগণের টার্গেট নিয়ে আমরা যে ১৬-১৭ বছর আন্দোলন করেছি, সব শেষ জুলাই বিপ্লবে। সব কিছু শেষ হয়ে যাবে।”
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আবুল খায়ের ভুঁইয়া বলেন, “নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে, আইন শৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে, কারা করেছে তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে।”
এসময় বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, কৃষকদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দলের জেলা- উপজেলাসহ বিভিন্ন ইউনিটের অর্ধ লক্ষাধিক নেতা-কর্মী-সমর্থক উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/জাহাঙ্গীর/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ র আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা ইশরাকের
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব দেওয়ার দাবিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনে ঈদের বিরতির পর ফের অবস্থান নিয়েছেন সংস্থাটির কর্মচারীরা। এর সঙ্গে ঢাকাবাসীর ব্যানারে নগরভবনে একত্রিত হয়েছেন ইশরাকের অনুসারীরা। সেখানে উপস্থিত হয়ে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন ইশরাক হোসেন।
আজ রোববার সকাল থেকে ইশরাকের অনুসারীরা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগরভবনে একত্রিত হয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করলেও। সকাল ১১ টার দিকে নগরভবনে প্রবেশ করেন ইশরাক হোসেন এবং আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন তিনি।
ইশরাক হোসেন বলেন, সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করেন। তাহলে অচল অবস্থা কেটে যাবে। এই সমস্যা সুরাহা না করা পর্যন্ত এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের এই আন্দোলন চলমান থাকবে। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা সংবিধান লংঘন করেছেন। আন্দোলন চলমান থাকবে। এখান থেকে ফিরে আসার কোনো সুযোগ নেই। এই লড়াই থেকে ফিরে আসার কোনো সুযোগ নেই। প্রধান উপদেষ্টাকে আহ্বান জানাবো, তিনি যেন বিষয়টি সরাসরি নিজে তত্ত্বাবধান করেন। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিচালনায় বিশ্বাস করি। এখন আমাদের আন্দোলন যেভাবে চলছে কোনো অবস্থাতেই আমরা এখান থেকে ফিরে যেতে পারি না। আদালতের রায় জনগণের রায়কে আপনারা মেনে নিন।
ইশরাক বলেন, আমরা যদি এখান থেকে পেছনের দিকে চলে যাই, তাহলে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হবে না। সরকারকে আহ্বান জানাবো, আপনারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটা নিষ্পত্তি করেন। নইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এই সংকটে চলবেই। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের যেসব দৈনন্দিন কার্যক্রম চলবে, জনগণের জন্য ভোগান্তি না হয়। এগুলো আমাদের তত্ত্বাবধানে চলমান থাকবে।
এদিকে তারা ‘শপথ শপথ শপথ চাই, ইশরাক ভাইয়ের শপথ চাই’, ‘মেয়র নিয়ে তালবাহানা, সহ্য করা হবে না’, ‘চলছে লড়াই চলবে, ইশরাক ভাই লড়বে’, ‘নগর পিতা ইশরাক ভাই, আমরা তোমায় ভুলি নাই’- এমন নানা স্লোগান দিয়ে যাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। তাদের স্লোগানে উত্তাল ছিল পুরো নগরভবন। তাদের আন্দোলনের ফলে বিরতির আগে ১৫ মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত নগর ভবন থেকে দেওয়া সব নাগরিক সেবা বন্ধ ছিল। ঈদের ছুটির পর আজ থেকে ফের তারা আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন ইশরাকের অনুসারীরা।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়। সে সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফল বাতিল চেয়ে ২০২০ সালের ৩ মার্চ মামলা করেন ইশরাক।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে। এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু তাকে যেন শপথ পড়ানো না হয়; সেজন্য গত ১৪ মে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে গত ১৫ মে থেকে আন্দোলন নামেন ইশরাক সমর্থকরা। তাদের আন্দোলনের কারণে ডিএসসিসি নগর ভবন কার্যত অচল হয়ে পড়ে। কিন্তু আইনি জটিলতার কথা বলে ইশরাকের শপথের আয়োজন থেকে বিরত থাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
এরপর এ রিট মামলার ওপর কয়েক দফা শুনানির পর তা খারিজ করে আদেশ দেন হাইকোর্টের বেঞ্চ।