অতিরিক্ত নিবন্ধন ফিতে কমেছে জমি বেচাকেনা
Published: 20th, February 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে অতিরিক্ত নিবন্ধন ফি নির্ধারণ করায় জমি ক্রয়-বিক্রয় কমে গেছে। এতে কমেছে রাজস্ব, বিপাকে পড়েছে দলিল দাতা, গ্রহীতাসহ নিবন্ধন সংশ্লিষ্টরা।
ভূমিগ্রহীতারা জানিয়েছেন, জমি নিবন্ধনে ফি কমানোর দাবিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে স্মারকলিপি দিয়েও কোনো লাভ হয়নি। গত বছর ৩ সেপ্টেম্বর গণস্বাক্ষর দিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের ভবনাথপুর গ্রামের শহিদ সরকার জনসাধারণের পক্ষে এ স্মারকলিপি দেন। স্মারকলিপির অনুলিপি নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক, নারায়ণগঞ্জ জেলা রেজিস্ট্রার ও সোনারগাঁ উপজেলা সাব রেজিস্ট্রারকেও দেওয়া হয়েছিল। এরপর পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই। অতিরিক্ত নিবন্ধন ফির কারণে সোনারগাঁ সাব রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে সাফ কবলা দলিল তৈরি কমে গেছে।
জানা যায়, সোনারগাঁ উপজেলার সব মৌজায় জমি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কাঠাপ্রতি বিক্রয় মূল্যের ওপর নিবন্ধন ফি ছিল তিন শতাংশ। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) আওতাধীন অঞ্চলের জন্য এ নিবন্ধন ফি ছিল চার শতাংশ। গত বছর ২৭ আগস্ট জমি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কাঠাপ্রতি ৫০ হাজার টাকা নিবন্ধন ফি নির্ধারণ করা হয়।
স্থানীয়দের দাবি, নারায়ণগঞ্জের ৫টি উপজেলার মধ্যে শুধু সোনারগাঁয়ে অতিরিক্ত ফি দিয়ে জমি নিবন্ধন হয়। জমি নিবন্ধন ফি বহুগুণ বেড়ে যাওয়ায় জমি ক্রয়-বিক্রয় কমে গেছে।
নোয়াগাঁও ইউনিয়নের চৌরাপাড়া গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রবাসে যাওয়ার জন্য ৩০ শতাংশ বা ২০ কাঠা জমি ৬ লাখ টাকায় বিক্রয় করেন। সাফ কবলা দলিল করতে ১২ লাখ টাকা নিবন্ধন ফি দিতে হবে বলে জমিগ্রহীতা দলিল করছেন না। ফলে প্রবাসে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তিনি জানান, এই পরিমাণ জমি আগের পদ্ধতিতে বিক্রি করলে নিবন্ধন ফি দিতে হতো ১ লাখ ৭০ থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
বারদী ইউনিয়নের নুনেরটেক গ্রামের শহিদুল্লাহ মিয়া বলেন, জমি বিক্রয় করে তাঁর মেয়ের বিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। ১৭ শতাংশ বা ১১.
সোনারগাঁ সাব রেজিস্ট্রি অফিসে কর্মরত দলিল লেখক বিল্লাল হোসেন জানান, নতুন নিবন্ধন ফি নির্ধারণের ফলে সাফ কবলা দলিল সৃজন প্রায় বন্ধ। আড়াইহাজার ও রূপগঞ্জ উপজেলায় কাঠাপ্রতি নিবন্ধন ফি ২০ হাজার টাকা। অথচ এ উপজেলায় নিবন্ধন ফি ৫০ হাজার টাকা। ফলে দাতা ও গ্রহীতার মাঝে সাফ কবলা দলিল তৈরিতে সমস্যার সৃষ্টি হয়। আগের পদ্ধতিতে নিবন্ধন ফি নিলেই বিষয়টির সমাধান সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
আরেক দলিল লেখক মফিজুল ইসলাম বলেন, ফি অনেক বেড়ে যাওয়ায় জমি নিবন্ধন কমে গেছে। ফলে অনেকেই বেকার হয়ে পড়েছেন। দ্রুত নতুন ফি নির্ধারণ জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার মুজিবুর রহমান বলেন, অতিরিক্ত নিবন্ধন ফি নির্ধারণ করায় সাফ কবলা দলিল সৃজন কমে যাচ্ছে। দলিল সৃজন কমে যাওয়ায় রাজস্ব কমে গেছে। আগের পদ্ধতিতে জমি নিবন্ধন করতে পারলে দলিল সৃজন ও রাজস্ব বাড়বে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আব্দুল হাফিজ বলেন, সোনারগাঁ ছাড়া অন্যান্য উপজেলায় নতুন নিবন্ধন ফি নির্ধারণ করে দলিল করা হচ্ছে। সোনারগাঁয়ে নতুন করে নিবন্ধন ফি নির্ধারণ প্রয়োজন। তাহলেই দলিল করার সংখ্যা বাড়বে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ স ম রকল প স ফ কবল উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ফতুল্লায় নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের নিচে অবৈধ পাকিংয়ে তীব্র যানজট, জনদুর্ভোগ চরমে
বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো যানজট। এ যানজটের কারণে মাত্র ৫ মিনিটের রাস্তা পেরুতে সময় লেগে যায় ঘন্টার পর ঘন্টা। ফলে প্রতিনিয়ত চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে নারায়ণগঞ্জবাসীকে।
নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক বিভাগ কিংবা সিটি কর্পোরেশন এ যানজট থেকে জেলাবাসীকে পরিত্রাণ দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে দিন যতই বড়ছে ততই বাড়ছে নারায়ণগঞ্জবাসীর দুর্ভোগ।
নারায়ণগঞ্জে এমন কোন সড়ক নাই সেই সড়কে যানজট নাই। মূল সড়ক থেকে শুরু করে অলি-গলি সব জায়গায়ই যানজট আর যানজট। তবে এ যানজটের পেছনে মূল সড়কের যানজটকেই দায়ি করছেন অনেকে।
তারা বলছেন, মূল সড়ক যদি যানজট মুক্ত থাকতো তাহলে এর আশেপাশের সড়কগুলো যানজটের সুষ্টি হতো না। মূল সড়কে তীব্র যানজটের কারণেই এর প্রভাব পড়ছে অন্য সড়কগুলোতেও।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বর্তমানে শহরের চাইতে চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণে করেছে। এ সড়ক দিয়ে চলাচলের কথা শুনলেই মানুষ আতকে উঠে। কারণ, যানজটের মাত্র পনেরো মিনিটের রাস্তা পাড় হতে সময় লাগে ঘন্টার পর ঘন্টা।
এ রাস্তায় এ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ীকেও যানজটে আটতে থাকতে দেখা যায় ঘন্টার পর ঘন্টা। একবার যানজটে আটকা পড়লেই দিন শেষ। কখন বাড়ী কিংবা অফিসে যাবেন তার কোন ঠিক নেই।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, এ যানজটের প্রধান কারণ হচ্ছে পঞ্চবটি-মুক্তারপুর ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ। ফ্লাইওভারের কর্মযজ্ঞের ফলে যানবাহনগুলোকে একটু ধীর গতিতে যেতে হয়। ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়।
তবে এ যানজটের আরও একটি বড় কারণ চোঁখে পড়ে, আর তা হলো পঞ্চবটি এলাকায় ফ্লাইওভারের নিচে এবং চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কের দু’পাশে ট্রাক ও কভার্ডভ্যানগুলো অবৈধভাবে পাকিং করে রাখা।
এসব যানবাহনগুলো সড়কের দু’পাশে পার্কিং করে রাখার কারণে মূল সড়ক অনেকটাই সরো হয়ে যায়। ফলে এ সড়ক দিয়ে অন্যসব যানবাহনগুলো ঠিকমত চলাচল করতে পারে না। ফলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
অথচ, পঞ্চবটির খুব কাছেই রয়েছে ট্রাক ও কভার্ডভ্যান স্ট্যান্ড। যানবাহনের চালকরা ওই স্ট্যান্ডে গাড়ী না রেখে সড়কের পাশে অবৈধভাবে বাঁকাত্যাঁড়া গাড়ীগুলো রাখছেন। এর ফলে যে, ওই সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে এবং যানজটের কবলে পড়ে মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে, এ বিষয়ে যেন তাদের কোন মাথা ব্যথা নেই।
তাদের ভাব-নমুনা দেখা মনে হয় যে, তারাই যেন এ সড়কটির মূল মালিক। না পুলিশে তাদের কিছু বলে, না তারা জনগণের কোন কথা শোনে। তারা তাদের ইচ্ছেমত গাড়ীগুলো রেখে যানজটের সৃষ্টি করছেন।
চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কে চলাচল করা ভুক্তভোগী পথচারিরা বলছেন, এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করাটা বর্তমানে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এত ভয়াবহ যানজট আমরা কখনোই চোঁখে দেখিনি। পঞ্চবটি ফ্লাইওভারের নিচে যেভাবে ট্রাক-কভার্ডভ্যানগুলো রাখা হয় পুরো সড়কটা তারা কিনে নিয়েছে। পুলিশও কিছু বলে না।
এছাড়া চাষাঢ়া থকে পঞ্চবটি পর্যন্ত পুরো সড়কে দু’পাশেই তারা গাড়ীগুলো রাখছেন। রাস্তাটি পাশে এমনিতেই জায়গা কম, আবার যদি তারা এভাবে গাড়ী রাখেন তাহলে যানজটের সৃষ্টিতো হবেই। এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের সচেতন মহল বলেন, আসলে নিতাইগঞ্জ এলাকা থেকে ট্রাক স্ট্যান্ডটি সরিয়ে নেয়ার জন্য সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আইভী একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। তিনি শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে পঞ্চবটি এলাকাতে সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে একটি ট্রাক স্ট্যান্ড গড়ে তোলেন এবং সেখানে এ স্ট্যান্ডকে স্থানান্তর করেন। কিন্তু কোন লাভ হয়নি।
এখন তারা কিছু গাড়ী ওই স্ট্যান্ডে রাখে বাকি গাড়ীগুলো সড়ক দখল করে এলোপাথারিভাবে রাখে। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হলেও যেন কারো কোন কিছু বলার নেই। কারণ, এ সমস্যা নিয়ে বহুবার ডিসি-এসপির সাথে বসা হয়েছে, আলোচনা হয়েছে কিন্তু সুরাহা হয় নাই।
তবে, ৫ আগস্টে দেশে একটি বড় পরিবর্তনের পর আশা করছিলাম এবার হয়তো এর একটা সুরাহা হবে। কিন্তু না। সড়ক দখল করে রাখা ট্রাক-কভার্ডভ্যানগুলো বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে মানুষকে বাধ্য হয়েই যানজটের মত দুর্ভোগ দুর্দশাময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে পথ চলতে হচ্ছে।
তারা বলেন, আসলে দেশে শান্তি শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য সেদিন ছাত্র-জনতা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে এতবড় একটা পরিবর্তন নিয়ে এসেছিলো। কিন্তু দেশের মানুষ যদি সেই শান্তি শৃঙ্খলা ভোগই করতে না পারে, তাহলে এত প্রাণ দিয়ে কি লাভ হলো?
আমরা জানিন না, প্রশাসন আসলে কাদেরকে খুশি করাতে চাচ্ছেন? মুষ্টিম কিছু চালকদের জন্য হাজার হাজার মানুষের এ কষ্ট কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি করবো, তারা যেন খুব শীঘ্রই এ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়। নারায়ণগঞ্জবাসীকে যেন কিছুটা স্বস্তি দেয়।
এ বিষয়ে টিআই করিম বলেন, ৫ আগস্টের পর নারায়ণগঞ্জে যানজটের যে ভয়াবহতা সৃষ্টি হয়েছিলো বর্তমানে তা কমে আসছে। আশাকরছি, আগামীতে পরিস্থিতি আরও ভালো হবে। পঞ্চবটি সড়কে ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এজন্য এ রুটে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
এমতাবস্তায় যদি কোন চালক রাস্তা দখল করে অবৈধভাবে গাড়ী পার্কিং করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেবো।