রোজ সকালে, সূর্য ওঠার আগে যখন পৃথিবীর চোখে ঘুমের আবেশ জড়িয়ে থাকত, আর আকাশের পূর্ব দিগন্তে সঙ্গীবিহীন শুক্র তারাটা মিটমিট করে জ্বলত একা একা, তখন ভোরের ঝিরঝির বাতাসে ভেসে আসা তার সুমধুর কণ্ঠস্বরে ঘুম ভেঙে যেত আমার।
রোজ শুনতাম।
রোজ জানালা গলিয়ে তার মিষ্টি গলার উদাত্ত আহ্বান কানে এসে বাজত। বিছানায় শুয়ে শুয়ে আমি শুনতাম:
‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার
আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ,
.
রোজ শুনতাম।
তার কণ্ঠস্বরের আশ্চর্য মধুরতা আর অকৃত্রিম আবেগ আমার হৃদয়কে স্পর্শ করত। নাড়া দিত। বিছানায় শুয়ে শুয়ে আমি দেখতাম তাকে। চুনকালি ওঠা আধভাঙা মিম্বরটার ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে লোকটা, অসংখ্য তালি দেওয়া লম্বা একটা জোব্বা গায়ে তার। পরনে একখানা ছেঁড়া লুঙ্গি। মাথায় সাদা কাপড়ের গোল একটা টুপি। খালি পায়ে মিম্বরটার ওপর দাঁড়িয়ে ঘুমন্ত শহরের বাসিন্দাদের নামাজের জন্য ডাকছে সে।
শীত কি বর্ষা কখনো এর ব্যতিক্রম হতো না।
ঝোড়ো বাতাস আর অবিরাম বৃষ্টিধারার ভেতর দাঁড়িয়েও আজান দিতে তাকে দেখেছি আমি। হালকা লিকলিকে গড়ন। শ্যামলা রং। বার্ধক্যজর্জরিত চেহারা। লোকটা ছিল আমাদের পাড়ার পুরোনো মসজিদটার ইমাম।
ওই মসজিদ ছাড়া আরও চার-পাঁচটা মসজিদ ছিল এ পাড়ায়।
কোনোটা ছোট, কোনোটা মাঝারি, কোনোটা আয়তনে বেশ বড়। গলির মাথার চার গম্বুজওয়ালা মসজিদটাই ছিল এ পাড়ার সবচেয়ে বড় মসজিদ। দেখতেও বেশ সুন্দর ছিল ওটা। রোজ শুক্রবারে মাইক লাগিয়ে খুতবা পড়া হতো সেখানে আর নামাজ শেষে মিষ্টি খাওয়ানো হতো সবাইকে। তাই অন্য মসজিদগুলোর তুলনায় সেখানে ভিড় হতো খুব বেশি। কোনোটা নতুন, কোনোটা পুরোনো, কোনোটা ভাঙা–জর্জরে; একটা থেকে আরেকটা মসজিদের দূরত্বও ছিল অত্যন্ত পরিমিত। এর কারণ জিজ্ঞেস করে একদিন ইমাম সাহেবের কাছ থেকে জেনেছিলাম, ওগুলো তুলেছেন পাড়ার সরদারেরা। একেকটা মসজিদের মালিক একেকজন সরদার। কারও কারও আবার চার-পাঁচটা মসজিদও আছে। মসজিদের আয়তন, বিশালতা, চাকচিক্য আর স্থাপত্য, তার মালিকের ধনসম্পদ আর প্রতিপত্তির কথা ঘোষণা করে।
আমাদের বাসাসংলগ্ন মসজিদটা ছিল অনেক দিনের পুরোনো, ভাঙা আর জর্জরে। গোল গম্বুজটার ওপর মস্ত বড় একটা ফাটল ধরেছিল তার। আর বাইরের দেওয়ালগুলো শেওলা পড়ে সবুজ হয়ে গিয়েছিল অনেকটা।
প্রায় দীর্ঘ আঠারো বছর ধরে ও মসজিদের ইমামতি করছিল ইমাম সাহেব। জুলেখার জন্মের বছর তিন–চারেক আগে থেকে। ‘তখন কি আর দুনিয়ার অবস্থা এমন ছিল সাহেব! সবকিছু ছিল অন্য রকম।’ পাকা দাড়ির ভেতর হাত বোলাতে বোলাতে ইমাম সাহেব বলত। ‘তখন লোকে খোদাকে ভয় করত, নামাজ–রোজা করত ঠিকমতো। ঝুট বলত না, মুনাফিকি করত না। আর আজ?’ বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ত ইমাম সাহেব।
ইমামতির পারিশ্রমিকস্বরূপ মাসে ত্রিশ টাকা ভাতা পেত সে।
সকালে নামাজান্তে পাড়ার কয়েকটা ছেলেমেয়েকে কোরআন শরিফ পড়াত ইমাম সাহেব। আর দিনের বাকি সময়টায় কখনো দাওয়ায় বসে সুচ আর সুতো হাতে বেশ যত্নসহকারে নিজের কিংবা ছেলেমেয়েদের জামা-কাপড়গুলো রিপু করত সে। কখনো অসুস্থ লোকদের ঝাড়ফুক আর তাবিজ
লিখে দিত।
এ ছাড়া আরও একটা কাজ ছিল তার। ধর্মীয় গ্রন্থ বিক্রি করা। শহরের বড় বড় দোকান থেকে পাইকারি হারে ছোট–বড়–মাঝারি বিভিন্ন রকম ধর্মগ্রন্থ কিনে আনত সে। তারপর সেগুলো একটা কাপড়ের পুঁটলিতে বেঁধে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিক্রি করত ইমাম সাহেব।
বগলে পুঁটলি, হাতে একটা সরু লাঠি, প্রায়ই দেখতাম ঈষৎ কুঁজো হয়ে ধীর–মন্থরপায়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছে সে। অসংখ্য জ্যামিতি রেখায় ভরা ভাঙা মুখে ক্লান্তির স্বেদবিন্দু আঁকা। ছানি পড়া চোখ জোড়া মাটিতে নোয়ানো।
রাস্তায় দেখা হলে হাত তুলে সে সালাম জানাত আমায়। তারপর দুঠোঁটে অমায়িক হাসি ছড়িয়ে জিজ্ঞেস করত, ‘আপনার বালবাচ্চা, বিবি খোদা চাহে ওরা সব ভালো আছে তো?’
‘জি হ্যাঁ, খোদা চাহে তো ছোট মেয়েটা পেটের অসুখে ভুগেছে, নইলে আর সবাই ভালো। তারপর, আপনি কেমন আছেন?’
‘আমার আর থাকা! খোদা যেমনি রেখেছে, তেমনি আছি!’ বলে কাঁধের ওপর থেকে গামছাটা টেনে নিয়ে মুখের ঘাম মুছত সে। তারপর বিদায় সালাম জানিয়ে, উত্তর পঞ্চাশের বুড়ো আবার ধীরপায়ে এগিয়ে যেত জীবনের পাথেয়র খোঁজে।
এ পাড়ায় আসার আগে ওর সঙ্গে কোনো রকম আলাপ ছিল না আমার। আসার প্রায় দিন সাতেক পর পুঁটলিটা বগলে নিয়ে আমার বাসায় এসে হাজির হলো সে। আমি তখন বারান্দায় বসে বসে কী একটা খবরের কাগজ পড়ছিলাম। যথারীতি সালাম জানিয়ে পুঁটলিটা সে খুলে বসল আমার সামনে। তারপর কয়েকখানা কোরআন শরিফ দেখিয়ে বলল, ‘খাস মক্কায় ছাপানো কোরআন, হুজুর। একটা কিনবেন?’ বললাম, ‘আমার ঘরে পুরোনো এক জেলদ আছে, আর লাগবে না।’
এতে সে দমল না। পকেট ডিকশনারি সাইজের আর একখানা কোরআন দেখিয়ে বলল, ‘এটা কিনুন, হুজুর। সব সময় সঙ্গে সঙ্গে রাখতে পারবেন। এতে বালামুসিবত কাছ ঘেঁষবে না। শয়তান সব সময় দূরে দূরে থাকবে।’
কিন্তু ওটাও যখন কিনতে আমি রাজি হলাম না, তখন কয়েকটা ছোট ছোট ধর্মগ্রন্থ বের করে সে দেখাল আমায়। বলল, ‘এগুলোয় ইসলামি আইন-কানুন শরা–শরিয়ত লেখা আছে, এগুলো কিনবেন?’
ঈষৎ বিরক্তির সঙ্গে বললাম, ‘থাক, ওসবে দরকার নেই আমার।’
কথাটা ওর হৃদয়ে ঘা দিয়েছিল হয়তো। তাই দেখলাম, মুখখানা আষাঢ়ে মেঘের মতো কালো হয়ে গেল তার। চুপচাপ কিতাবগুলো পুঁটলিতে বেঁধে যাবার আগখান দিয়ে একটা সালাম জানিয়ে চলে গেল সে। তার কণ্ঠে যে মৃদু অসন্তুষ্টির ভাব ছিল, তা বেশ বুঝতে পেরেছিলাম।
এখানে আসার পর থেকে প্রায় বিকেলে ছবিকে নিয়ে বাইরে বেরোতাম আমি। কোনো দিন হয়তো সিনেমায়, কোনো দিন যেতাম কেনাকাটা করতে। সামনের গলিটা পায়ে হেঁটে বড় রাস্তায় গিয়ে রিকশা নিতাম। কোনো দিন তা–ও নিতাম না। সেদিন, বিকেলে কোথায় যেন যাচ্ছিলাম আমরা, সঙ্গে বাচ্চা মেয়েটাও ছিল। কিছুদূর যেতে দেখি, উল্টো দিক থেকে ইমাম সাহেব আসছে। বগলে পুঁটলিটা যথারীতি আছে। কাঁধে একখানা গামছা, হাতে একটা শতছিন্ন ছাতা। আমাদের দিকে দৃষ্টি পড়তেই চোখ জোড়া বুজে ফেলল সে। তারপর ছাতা দিয়ে মুখখানা আড়াল করে মাঝরাস্তা থেকে সরে গেল রাস্তার এক পাশে।
ওর কাণ্ড দেখে ফিক করে হেসে দিল ছবি। বলল, ‘আমি বেপর্দা চলছি দেখে ইমাম সাহেব নিজে পর্দা করছেন।’
আমি বললাম, ‘না, আসলে তোমার বেপর্দা হয়ে চলা যে উচিত নয়, সেটাই আকারে–ইঙ্গিতে সে বুঝিয়ে দিচ্ছে। বড় ঝানু লোক।’
এর দিন কয়েক পর হঠাৎ ভীষণ অসুখে পড়েছিলাম আমি।
ছবি তখন বাসায় ছিল না। ছেলেমেয়েদের নিয়ে দেশের বাড়িতে গিয়েছিল সে। বাচ্চা চাকরটাকে নিয়ে একা বাসায় থাকতাম। হোটেল থেকে ভাত আনিয়ে খেতাম, দুপুরে–সন্ধ্যায়।
বোধ হয় হোটেলের ভাত খেয়েই অসুখটা হয়েছিল।
জ্বরের প্রকোপে প্রায় অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলাম। চোখ মেলতে দেখি, ঘরময় ধূপকাঠির মিষ্টি গানু (গন্ধ) বাতাসে ভুরভুর করছে। মাথার পাশে বসে ইমাম সাহেব হাতপাখা দিয়ে মৃদু মৃদু বাতাস করছে আমায়। আর বিড়বিড় করে কী সব পড়ে সারা গায়ে ফুঁ দিচ্ছে আমার।
চোখ মেলে তাকাতে গম্ভীর মুখখানায় উন্মগ্ন হাসির আভা ফুটে উঠল তার। হাতপাখাটা এক পাশে সরিয়ে রেখে টেবিলের ওপর থেকে পিতলের গ্লাসটা তুলে দিয়ে আমার মুখের কাছে এনে বললে, ‘সব খোদার ইচ্ছা। তিনিই বাঁচান, তিনিই মারেন। নিন, বিসমিল্লাহ বলে খেয়ে ফেলুন।’
কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিল। তবু বললাম, ‘ওটা কী?’
একটু অপ্রস্তুত হয়ে সে বলল, ‘খোদার কালাম। নিন, বিসমিল্লাহ বলে খেয়ে ফেলুন।’
পড়া পানিটা আমায় খাইয়ে দিয়ে, গামছায় মুখখানা সে আমার মুছে দিল। এতক্ষণ চোখে পড়েনি, ভালো করে তাকাতে দেখি, বাজুতে আমার ইতিমধ্যেই দু–দুটো তাবিজ বেঁধে দিয়েছে সে। গলায় বেঁধে দিয়েছে আরেকটা। খাটের চার কোণে চারটে ধূপকাঠি জেলে দিয়েছে সে। আর মাথার কাছে ঝুলিয়ে রেখে গেছে একটা কোরআন শরিফ। আমাকে চারপাশে তাকাতে দেখে সে যেন একটু-আধটু ব্যস্ত হয়ে পড়ল। গায়ের লেপটা আমার ভালোভাবে কাঁধ পর্যন্ত টেনে দিয়ে বলল, ‘আপনি এখন ঘুমোন। খোদা চাহে তো, চিন্তার কিছু নেই। আমি একটু বার্লি তৈরি করে নিয়ে আসি। পেট ভরা থাকলে বোখারের সঙ্গে যুঝবার তাকত আসে গায়ে।’ বলে মৃদু হাসল সে।
ইমাম সাহেব চলে যেতে বাচ্চা চাকরটাকে দিয়ে ডাক্তারের কাছ থেকে ওষুধ এনেছিলাম এক বোতল। এক দাগ ওষুধ খেয়ে বোতলটা সরিয়ে রাখতে বললাম ওকে।
ও বলল, ‘কেন, টেবিলের ওপরই থাক না ওটা।’
চোখ মেলে তাকাতে গম্ভীর মুখখানায় উন্মগ্ন হাসির আভা ফুটে উঠল তার। হাতপাখাটা একপাশে সরিয়ে রেখে টেবিলের ওপর থেকে পিতলের গ্লাসটা তুলে দিয়ে আমার মুখের কাছে এনে বললে, ‘সব খোদার ইচ্ছা।বললাম, ‘তুই ওই সব বুঝবি না। নে, বোতলটা তাকের ওপর বইয়ের আড়াল করে তুলে রাখ।’
কিন্তু যে জন্য ওটা সরিয়ে রেখেছিলাম, তা সফল হলো না।
আমাকে বার্লি খাওয়ানোর পালা চুকিয়ে একটু পরে তাকের ওপর থেকে বোতলটা আবিষ্কার করে ফেলল ইমাম সাহেব। তারপর কপালে বিস্ময় এঁকে জিজ্ঞেস করল,
‘এখানে কী?’
আমি কিছু বলবার আগেই চাকরটা বলে উঠল, ‘ওখানে ওষুধ।’
‘কার ওষুধ?’
‘সাহেবের। মোড়ের ডাক্তারখানা থেকে এনেছি।’
কথাটা শুনে রীতিমতো গম্ভীর হয়ে গেল ইমাম সাহেব। মুখ ফুটে কিছু না বললেও ঠিক বুঝতে পারলাম, সে আহত হয়েছে।
রাতে বারতিনেক ঘুম ভেঙেছিল আমার। আর যখনই ঘুম ভেঙেছে, তাকিয়ে দেখেছি, ইমাম সাহেব মেঝেতে একটা মাদুর বিছিয়ে চুপচাপ নামাজ পড়ছে আর জোড়হাতে মোনাজাত করছে খোদার কাছে। তার এই মোনাজাতের ভেতর একটা জিনিস বারবার লক্ষ করতাম আমি। আদম থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত যারা মারা গেছে, প্রথম তাদের সবার রুহের মাগফিরাত কামনা করত সে। তারপর মৃত বাপ-দাদা, ভাইবোন ও আত্মীয়স্বজনদের কবরের আজাব যাতে মাফ করে দেওয়া হয়, তার জন্য অনুরোধ জানাত খোদাকে। মৃতদের জন্য প্রার্থনা শেষ করে জীবিত ছেলেমেয়ে, আত্মীয়–পরিজনের জন্য প্রার্থনা করত ইমাম সাহেব। তারপর পাড়াপড়শিদের সুখ–শান্তি কামনান্তে মসজিদের মালিক নশু সরদারের উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধির আবেদন করত সে। ‘তাকে আরও ধন দাও, দৌলত দাও, তার বংশবৃদ্ধি করো।’ ঢলে ঢলে সে বলত। আর সবশেষে দুনিয়ার সমস্ত মুসলমানের শুভ কামনা করে মোনাজাত করত ইমাম সাহেব।
প্রায় দিন সাতেক অসুখে ভুগেছিলাম আমি।
আর এই সাত দিন খুব অল্প সময়ের জন্য আমার কাছছাড়া হয়েছিল ইমাম সাহেব। প্রায়ই দেখতাম, মাথার কাছে বসে মৃদু মৃদু সে পাখা করছে আমায়। আর ঘন ঘন কপালের উত্তাপ নিচ্ছে হাতের চেটো দিয়ে।
মাঝে মাঝে বলতাম, ‘আপনি কেন শুধু শুধু এত কষ্ট করছেন ইমাম সাহেব?’
‘তওবা তওবা! কী যে বলেন।’ দাঁতে জিব কাটত সে। বলত, ‘কষ্ট তো আমার হচ্ছে না। বোখার হয়ে আপনি কষ্ট পাচ্ছেন। খোদা আপনার ওপর এহসান করুক!’ বলে দুহাত জোড় করে আমার জন্য দোয়া করত সে।
সেই থেকে তার সঙ্গে বেশ একটা হৃদ্যতার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল আমার।
ছবির কাছ থেকে শুনেছিলাম, লোকটার নাকি তিন ছেলে আর এক মেয়ে। মেয়েটা সবার বড়। বিয়ের লায়েক হয়েছে। বউও বেঁচে আছে ওর। তবে বউটা কালা, কানে বড্ড কম শোনে।
ছবি বলছিল, ‘উ! কী করে যে ও ঘরে থাকে ওরা! ভাবতে আমার মাথা ঘুরে ওঠে। আমি হলে এক দিনেই মারা যেতাম।’
কৌতূহল দমাতে না পেরে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কেন? কী হয়েছে?’
হাত নেড়ে নেড়ে ছবি বলল, ‘ঘরের ভেতর সামান্য একটু আলো–বাতাস আসার জো নেই। ঘুটঘুটে অন্ধকার।’
কেন? জানালা নেই ঘরে?
আরে, জানালা তো আছে। থাকলে কী হবে, চট দিয়ে সেগুলো কি আর রেখেছে? একে তো অন্ধকার, তার ওপর ডগডগে গরম। উ! কী করে যে আছে ওরা!’ ওদের জন্য সব সময় দুঃখ করত ছবি।
মাঝেমধ্যে ওরা বেড়াতে আসত আমাদের বাসায়।
দিনে আসত না। আসত রাতের বেলায়।
কখনো হয়তো সামান্য একটু তেল ধার চাইতে আসত। কখনো ধার চাইত একবাটি নুন কিংবা দুটো দেশলাইয়ের কাঠি। কোনো দিন হয়তো দু–একটা টাকাও ধার চাইত ওরা, দু–এক আনা পয়সা। থাকলে না করত না ছবি। যা পারত, দিয়ে দিত। ওদের প্রতি কোনো অবজ্ঞা ছিল না ওর। এলে আপনজনের মতো ব্যবহার করত সে, কথা বলত। ‘তোমার মা এখন কী করছেন, জুলেখা?’
‘কাপড় কাচছেন।’
‘বাবা?’
‘মসজিদ ধুচ্ছেন।
‘দিনের ভেতর কয়বার ধোন মসজিদটাকে? যখনই আসো, শুনি মসজিদ ধুচ্ছেন।’
এ কথার উত্তর দিতে রীতিমতো লজ্জা পেত জুলেখা। বলত, ‘ওটা বাবার বাতিক হয়ে গেছে। দিনের ভেতর প্রায় দু–তিনবার ধোন মসজিদটাকে। একটা ধুলাও পড়তে দেন না মেঝেতে।’
আসলে কিন্তু ওটা বাতিক ছিল না ইমাম সাহেবের। ওটা ছিল মসজিদের প্রতি ওর অকৃত্রিম ভালোবাসার প্রকাশ। মাঝে মাঝে ও নিজেই বলত, ‘জানেন, এ মসজিদ আমার প্রাণ। এটাকে ফেলে এক দিনের জন্যও কোথাও থাকতে পারি না আমি।’ বলত আর শোকার্ত দৃষ্টিতে তাকাত মসজিদটার দিকে।
তখন কী মাস ছিল, মনে নেই। সকালে থলে হাতে বাজারে যাচ্ছিলাম, দেখি, মসজিদটার সামনে গরুর গাড়িভর্তি ইট আর বালু এনে জড়ো করা হচ্ছে। বেশ কয়েক বস্তা সিমেন্টও আনা হয়েছে সেখানে। দেখলাম, ইমাম সাহেব দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তদারক করছে সব। মুখখানা তার বেশ হাসিখুশি।
দৃষ্টি বিনিময় হতে সালাম জানিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী ব্যাপার!’ ইমাম সাহেব হাসতে হাসতে বলল, ‘খোদা চাহে তো, মসজিদটাকে বাড়ানো হবে। অনেক বড় কবে করা হবে এবার।’ বলে সে পকেট থেকে একটা নকশা বের করে দেখাল আমায়। তারপর আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেখিয়ে বলে গেল, ‘খোদা চাহে তো, মোট তিনটে গম্বুজ হবে, দুটো এখানে আর একটা ওদিকে। এই যে একটা গোল জায়গা দেখছেন, এখানে পানির হাউস হবে একটা অজু করার জন্য। আর এদিকে আট হাত চওড়া বারান্দা তৈরি করা হবে একটা। খোদা চাহে তো, ভেতরের মেঝেটা সাদা পাথর দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হবে।’
নকশাটা দেখাতে দেখাতে চোখ জোড়া কেমন স্বপ্নিল হয়ে উঠেছিল ইমাম সাহেবের। মুখখানা ভরে উঠছিল হাসির আভায়। তার পর থেকে মসজিদের কাজ নিয়েই সব সময় ব্যস্ত থাকতে দেখতাম তাকে। মসলার কড়াইগুলো নিজ হাতে মিস্ত্রিদের সামনে এগিয়ে দিত সে, নতুনভাবে তৈরি হবার পর মসজিদটা দেখতে কেমন সুন্দর হবে, তা–ই নিয়ে আলোচনা করত সবার সঙ্গে। উৎসাহের তার অন্ত ছিল না। পানির টবের ওপর বসে পুরোনো ইটগুলো ঘষে ঘষে পরিষ্কার করত সে। কখনো কখনো একটা হাতুড়ি দিয়ে ইট ভাঙত বসে বসে। আর বারবার কপালের ঘাম মুছত আর বলত, ‘খোদা চাহে তো, মসজিদে অনেক লোক ধরবে এবার।’
মসজিদের কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, এমন সময় একদিন রাতে, বাইরে থেকে ফিরে এলে ছবি বলল, ‘শুনেছ, ইমাম সাহেবরা এখান থেকে চলে যাচ্ছেন।’
‘সেকি, কোথায় যাচ্ছে?’ অবাক না হয়ে আমি পারলাম না।
ছবি বলল, ‘মসজিদের মালিক নাকি নতুন মসজিদের জন্য বড় দেখে ইমাম আনবেন একজন।’
‘কেন?’
‘কেন, তা আমি কী করে বলব।’ ছবি ভ্রু কুঁচকে বলল। ‘জুলেখা এসেছিল, ওর কাছ থেকে শুনলাম, গলির মাথার ওই নতুন মসজিদে নাকি জৌনপুর থেকে বড় ইমাম এনেছে একজন।’
‘হ্যাঁ, সে তো অনেক আগেই এনেছে, তাতে কী হয়েছে?’
‘আমার মাথা হয়েছে।’ ছবি রেগে উঠল হঠাৎ। ‘কী যে হয়েছে তোমার! একটা কথা বলতে গেলেই মাঝখানে বাধা দাও।’
‘আরে তাতে কী হয়েছে? বলো না শুনি, তারপর?’
‘তারপর, আমি জানিনে কিছু। ইমাম সাহেবের কাছ থেকে শোনো গিয়ে।’ বলে অভিমানে মুখটা অন্যদিকে ফিরিয়ে নিয়েছিল ছবি।
পরদিন সকালে ভেবেছিলাম, ইমাম সাহেবের সঙ্গে দেখা হবে। কিন্তু বাসায় খোঁজ নিয়ে পাওয়া গেল না তাকে। পাওয়া গেল সেদিন বিকেলে আরেক পাড়ায়। সেখানকার একটা মসজিদ থেকে বেরোচ্ছিল সে। এ কদিনে শরীরটা যেন অর্ধেক হয়ে গেছে তার। ছানি পড়া চোখ জোড়া ম্লান, নিষ্প্রভ। আমাকে দেখে মৃদু হাসল সে। সালাম জানিয়ে বলল, ‘আপনার বাচ্চা–বিবি, খোদা চাহে ওরা ভালো আছে তো?’
‘হ্যাঁ, খোদা চাহে, ওরা ভালোই আছে। আপনি কেমন? শুনলাম, আমাদের পাড়া থেকে নাকি চলে যাচ্ছেন আপনি?’
‘কার কাছ থেকে শুনলেন?’ গামছা দিয়ে ঘাম করা মুখখানা মুছতে মুছতে ইমাম সাহেব বলল। ‘সব খোদার ইচ্ছা, বুঝলেন কিনা! আমাদের সরদার সাহেব কানপুর থেকে একজন বড় ইমাম আনবেন বলে ঠিক করেছেন।’
‘আপনি কোথায় যাবেন?’
‘খোদা যেখানে নেন, সেখানে।’ মৃদু গলায় সে জবাব দিল। ‘বালবাচ্চাগুলো যদি না থাকত, তাহলে খোদা চাহে তো মক্কায় চলে যেতাম।’ বলে থামল সে। তারপর বগলের পুঁটলিটা দেখিয়ে বলল, ‘আগের দিনে খোদার কালাম বিক্রি করেও দু–চার পয়সা পাওয়া যেত। আজকাল লোকে তা–ও কেনে না।’
‘এখানে কী জন্য এসেছিলেন?’ হঠাৎ মাঝপথে জিজ্ঞেস করলাম আমি।
‘এখানে?’ একটু ইতস্তত করে সে বলল, ‘এ মসজিদে একজন ইমাম নেবার কথা ছিল, তাই খোঁজ নিতে এসেছিলাম।’
‘কিছু হলো?’
‘না’ মৃদু গলায় সে বলল। ‘এত দিন কি আর খালি পড়ে থাকে? খোদা চাহে ইমামতির লোক তো কম নেই। অনেক আগেই একজন নিয়ে নিয়েছে।’ বলে একটুকরো ম্লান হাসি ছড়িয়ে ছিল ইমাম সাহেব।
এর দিন কয়েক পর, রাত্রে বসে বসে কার কাছে যেন চিঠি লিখছিলাম আমি। পাশের ঘরে ইমামগিন্নি তার মেয়েকে নিয়ে ছবির সঙ্গে আলাপ করছিল। প্রায়ই যেমন আলাপ করে।
একটু পরে জুলেখা গুটি গুটি পায়ে এসে সামনে দাঁড়াল আমার। তাকিয়ে দেখলাম, পরনে আধখানা আকাশি রঙের আধময়লা শাড়ি, মাথায় ঘোমটা চড়ানো, উপুড় হয়ে পা ধরে আমার সালাম করল সে।
হঠাৎ একটু অপ্রস্তুত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী ব্যাপার?’
মেয়েটা একটু সরে গিয়ে ভাঙা গলায় বলল, ‘আমরা কাল সকালে চলে যাচ্ছি, চাচাজান।’
‘কোথায়?’
ও কোনো জবাব দেবার আগেই ছবি এসে বলল, ‘দেশের বাড়িতে চলে যাচ্ছে ওরা। ইমাম সাহেব তো অনেক চেষ্টা করেছিলেন, যদি কোনো মসজিদে একটা ইমামতি পাওয়া যায়। কিন্তু পেলেন না, কী আর করবেন!’ বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়েছিল সে। সে রাতে অনেক-অনেকক্ষণ ধরে ওদের কথা আলোচনা করেছিলাম আমি আর ছবি। তারপর কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম মনে নেই, ঘুম ভেঙে গিয়েছিল তার ডাকে।
খালি পায়ে নতুন মিম্বরটার ওপর দাঁড়িয়ে সেদিন শেষবারের মতো শহরের ঘুমন্ত বাসিন্দাদের আহ্বান করেছিল সে।
‘আল্লাহু আকবার; আল্লাহু আকবার...’ সে ডেকেছিল। মিঠে গলায় অকৃত্রিম আবেগ নিয়ে সে সেদিন শেষবারের মতো ডেকেছিল সবাইকে।
‘আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম
আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম।’
বিছানায় শুয়ে শুয়ে শুনলাম, হঠাৎ কেন যেন মনে হয়েছিল, গলাটা সেদিন কাঁপছিল ইমাম সাহেবের। সেতারের ছেঁড়া তারের মতো একটা ভাঙা ভাঙা শব্দ হচ্ছিল ওর গলায়। গলাটা সেদিন কাঁপছিল তার।
সংগ্রহ ও ভূমিকা: কাজী জাহিদুল হক জহির রায়হানউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ জ ঞ স করল ম জ জ ঞ স কর র ওপর থ ক ছ ল ম আম ন মসজ দ মসজ দ র সব সময় ল আম র আম র ম র জন য আম দ র পর থ ক আল ল হ করত স ত রপর বলল ম সরদ র ক রআন
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।