জান্তার বিমান হামলায় ১০ দিনে নিহত ৫৩
Published: 22nd, February 2025 GMT
মিয়ানমারজুড়ে বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে জান্তা বাহিনী। স্কুল, বাস্তুচ্যুত মানুষের শিবির, হাসপাতাল, ধর্মীয় স্থানসহ বিভিন্ন স্থানে চালানো নির্বিচার এ হামলায় গত ১০ দিনে অর্ধশতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। নিহত সবাই বেসামরিক নাগরিক। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও অনেকে। বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের জান্তার বিমান হামলায় ১০ দিনে অন্তত ৫৩ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং আরও ৮০ জন আহত হয়েছেন। ফাইটার জেট, ওয়াই১২ বিমান, হেলিকপ্টার ও মোটরচালিত প্যারাগ্লাইডাররা গত ১০ থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্কুল, বাস্তুচ্যুত শিবির, হাসপাতাল, ধর্মীয় স্থানসহ বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে কমপক্ষে ৩৫টি আক্রমণ পরিচালনা করেছে।
ম্যাগওয়ে, সাগাইং, মান্দালয় ও তানিনথারি অঞ্চল এবং রাখাইন, কাচিন, শান, মন এবং কারেনি (কায়া) প্রদেশে বিমান হামলার খবর পাওয়া গেছে। তায়াং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি বুধবার রাতে নাওংকিওতে আবাসন ও একটি সরকারি হাসপাতালে বিমান হামলার কথা জানিয়েছে। উত্তরাঞ্চলীয় শান প্রদেশের এ শহরটি ওই সশস্ত্র গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রণ করছে।
টিএনএলএ জানিয়েছে, বিমান হামলায় তিনজন বেসামরিক লোক নিহত এবং চারজন আহত হয়েছেন। এর আগে এই সপ্তাহে টিএনএলএ ইউনান প্রদেশের কুনমিং-এ চীনা-মধ্যস্ততায় শান্তি আলোচনা থেকে বেরিয়ে আসে। সশস্ত্র গোষ্ঠীটি বাসিন্দাদের বিমান হামলার বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য সতর্ক করেছিল, কারণ সরকার বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করে হামলা করছে।
এছাড়া গত শনিবার জান্তা বাহিনীর হারবিন ওয়াই ১২ বিমান নাউনঘকিও শহরের একটি গ্রামে ৩৮টি বোমা ফেলেছিল বলে টিএনএলএ জানিয়েছে। গত ১০ ফেব্রুয়ারি উত্তর মান্দালয় অঞ্চলের টিএনএলএ-অধিকৃত রুবি শহর মোগোকে প্রায় ২০টি বোমাবর্ষণ করা হয়েছিল। এতে পাঁচজন বেসামরিক লোক নিহত এবং আরও ১৯ জন আহত হয়েছিলেন।
এদিকে, মিয়ানমারের থাইল্যান্ড সীমান্তবর্তী এলাকার অবৈধ স্ক্যাম চক্রে হাজার হাজার মানুষ আটকা পড়ে আছে বলে জানিয়েছেন থাইল্যান্ডের মানব পাচারবিরোধী সংস্থার প্রধান পুলিশ জেনারেল থাচাই পিটানিলাবুট। তিনি জানান, ৩০ থেকে ৪০টি চীনা অপরাধী গোষ্ঠী পরিচালিত এসব কেন্দ্রে আনুমানিক ১০ হাজার থেকে ১ লাখ পর্যন্ত মানুষ আটকে থাকার আশঙ্কা রয়েছে। সম্প্রতি এসব নির্মূলে সীমান্তবর্তী এলাকায় বড় ধরনের অভিযান শুরু করেছে থাইল্যান্ড। এর পরপরই মিয়ানমারের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী ২৬০ জন স্ক্যাম কর্মীকে মুক্তি দিয়েছে, যাদের মধ্যে ফিলিপাইন, ইথিওপিয়া, ব্রাজিল, নেপাল ও থাইল্যান্ডের নাগরিকও রয়েছেন। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, শত শত মানুষ পাচারের শিকার হয়ে এসব চক্রের ফাঁদে পড়ে। প্রতারণার মাধ্যমে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাদের এসব কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয় এবং ইচ্ছার বিরুদ্ধে অনলাইন স্ক্যামে কাজ করানো হয়। খবর ইরাবতী ও দ্য গার্ডিয়ানের।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ ন ত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে গুরুত্ব আরোপ
কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কার্যত সামরিক সংঘাতে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। এ পরস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে ফোন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। বুধবার দুজনকে করা এ ফোন কলে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া উত্তেজনা কমানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এছাড়া দুই
ফোনালাপের বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে দেওয়া পৃথক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় মার্কো রুবিও বলেন, তিনি পেহেলগাম হামলায় নিহতদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তবে তিনি আরও বলেন, ভারত যেন পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করার আগে সতর্ক থাকে, কারণ এখনও পর্যন্ত ভারত এই হামলায় পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার কোনও প্রমাণ প্রকাশ করেনি।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক বিবৃতিতে বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণহানির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনা কমাতে এবং শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে ভারতকে পাকিস্তানের সঙ্গে কাজ করার জন্য বলেছেন।
পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে ফোনালাপে রুবিও- ২২ এপ্রিল ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পর্যটন কেন্দ্র পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।
তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, রুবিও এই অযৌক্তিক হামলার তদন্তে পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ বলেন, ভারতের উস্কানিমূলক আচরণ শুধু উত্তেজনাই বাড়াচ্ছে এবং পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টাকে বিভ্রান্ত করছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা ভারতের ওপর দায়িত্বশীল আচরণ ও ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে চাপ প্রয়োগ করে।
এর আগে গত ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে কাশ্মীরের পেহেলগাম জেলার বৈসরণ তৃণভূমিতে বন্দুকধারীদের হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হন, যাদের প্রায় সবাই পর্যটক। হামলার দায় স্বীকার করে রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট নামে একটি সংগঠন। এটিকে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়্যেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে মনে করা হয়।
এ ঘটনায় আরও বেশ কয়েকজনকে আহত হন। যাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তারা সবাই পুরুষ। বস্তুত, ২২ এপ্রিলের হামলা ছিল ২০১৯ সালের পুলোয়ামা হামলার পর জম্মু ও কাশ্মীরে সবচেয়ে বড় প্রাণঘাতী হামলা। বর্তমানে এ ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
পেহেলগামের ভয়াবহ ওই হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত। জবাবে সিমলা চুক্তি স্থগিত ও ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান।
তাছাড়া, হামলার পরে দুই দেশই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের ভিসা বাতিল করে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। সূত্র-এএফপি