শৈশব থেকেই খেলাধুলায় পাকা। স্কুল রাগবি, প্রাদেশিক স্কোয়াশের সাফল্যের রেণুটা রায়ান ডেভিড রিকেলটন নিয়ে যান ভারোত্তোলনেও। দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম জনপ্রিয় খেলা রাগবি বলে অনেকেই ভেবেছিলেন রিকেলটন বুঝি ছোটবেলার প্রিয় খেলাতেই নাম লেখাবেন। কিন্তু টিভি পর্দায় অস্ট্রেলিয়ার দুই বাঁহাতি ম্যাথু হেইডেন ও অ্যাডাম গিলক্রিস্টের মারদাঙ্গা ব্যাটিংয়ে মুগ্ধতা ছড়িয়েছে রিকেলটনকে। ছোটবেলা থেকে তাঁর কোচ হিসেবে পাশে থাকা বাবা ইয়ান রিকেলটনেরও বুঝতে বাকি নেই ছেলের মন বদলে গেছে। 

জোহানেসবার্গের সেন্ট সিথিয়ান্স কলেজের ভূগোলের শিক্ষক এবং ক্রীড়া প্রধান ইয়ান তাঁর সন্তানের হাতে ব্যাট-বল তুলে দেন। ২০২২ সালের মার্চে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে প্রোটিয়া দলে অভিষেক ঘটে রিকেলটনের। পরের বছর ওয়ানডেতেও পথচলা শুরু হয় তাঁর। গত বছর অনুষ্ঠিত টি২০ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা দলে জায়গা হয় তাঁর। কিন্তু সেই আসরে কোনো ম্যাচ না খেলা রিকেলটনকে বেঞ্চে সময় কাটাতে হয়েছে বেশি। এক বছর না যেতেই আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মঞ্চে গড়েছেন অনন্য কীর্তি। 

আইসিসি টুর্নামেন্টে প্রথমবার খেলতে নেমেই সেঞ্চুরিতে রাঙিয়েছেন নিজেকে। গতকাল করাচিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে ১০৬ বলে ১০৩ রানের ইনিংস খেলে দক্ষিণ আফ্রিকার গ্রেটদের কাতারে নাম লিখিয়েছেন রিকেলটন। প্রথমে ব্যাট করা প্রোটিয়ারা সংগ্রহ করে ৬ উইকেটে ৩১৫ রান। রানের এই পাহাড় টপকাতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলে আফগানরা। করাচিতে ৫০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বসা দলটি শেষ পর্যন্ত ২০৮ রানে অলআউট। রিকেলটনের সেঞ্চুরিতে ভর দেওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা জয় পায় ১০৭ রানের। আফগানদের হয়ে সবচেয়ে বেশি ৯০ রান করেন রহমত শাহ। জেনসেন, এনগিরি ও রাবাদা; তিন প্রোটিয়া পেসার মিলে শিকার করেন ৬ উইকেট।

রিকেলটনের আগে আইসিসির এই আসরে শতক হাঁকিয়েছিলেন হার্শেল গিবস, হাশিম আমলা, গ্রায়েম স্মিথ ও জ্যাক ক্যালিস। এ ব্যাটারের আগে আইসিসির কোনো টুর্নামেন্টে অভিষেক ম্যাচে সেঞ্চুরি করার কীর্তি শুধু গিবসের। ১৯৯৬ বিশ্বকাপে রাওয়ালপিন্ডিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে অপরাজিত ১৮৮ রানের ইনিংস খেলেছিলেন গিবস; যা ওয়ানডেতে প্রোটিয়াদের হয়ে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ। কুইন্টন ডি কক অবসর নেওয়ার পর রিকেলটনকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখে আসছিল দক্ষিণ আফ্রিকানরা। এদিন দ্বিতীয় উইকেটে টেম্বা বাভুমার সঙ্গে ১২৯ রানের জুটি গড়েন ২৯ বয়সী এ ক্রিকেটার। দুর্ভাগ্যজনকভাবে রান আউট হওয়ার আগে তাঁর ১০৩ রানের ইনিংসটি সাজানো ছিল ৭টি চার এবং ১টি ছয়ের সৌজন্যে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ক লটন র উইক ট আইস স

এছাড়াও পড়ুন:

দহন থেকে  জংলি

‘আমি নিয়মিত অনেক চিত্রনাট্য পাচ্ছি। নিয়মিত সেসব সিনেমা করলে প্রচুর টাকা কামাতে পারব। ফিন্যান্সিয়ালি জায়গাটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দর্শক আমাকে যেভাবে দেখতে চাচ্ছেন, তেমন গল্প পাচ্ছি না। দর্শক-প্রত্যাশার চেয়ে ভালো কিছু দিতে চাই। যখন সামগ্রিক চিন্তা করি, তখন ভাবতে হয় আমি কতটা আয় করলাম তার চেয়েও দর্শকের সামনে কীভাবে আসছি, সেটি মুখ্য। এটি একটি প্যাকেজ। মাঝে একটি-দুটি গল্প পছন্দ হয়। সেসব টিমের যে অবস্থা, বাজেট সামগ্রিকভাবে দেখতে গেলে ভালো গল্প তুলে আনা কঠিন হবে। তখন আমি না করে দিই। আমি চাইছি নিজের মতো করে কাজ করতে। জীবনে অনেক সিনেমা করতে হবে, এমন চিন্তা নেই। আমার মতো করে অল্প কিছু কাজ করে যেতে চাই।’ বলছিলেন সিয়াম আহমেদ।

গেল ঈদে মুক্তি পেয়েছে সিয়াম আহমেদ অভিনীত সিনেমা ‘জংলি’। যে সিনেমার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নায়কের আবেগ ও পরিশ্রমের দীর্ঘ গল্প। সিনেমাটি করতে একচুলও ছাড় দেননি সিয়াম। ফলাফল হিসেবে পেয়েছেন দর্শকের অবারিত ভালোবাসা। জংলি মুক্তির পর তাই গল্পটি হয়ে উঠেছে সবার। দর্শকরা হলে গিয়ে কেঁদেছেন, গল্পে বুঁদ হয়ে থেকেছেন। করেছেন সিয়াম ও তাঁর টিমের প্রশংসা। 

সিয়াম বললেন, ‘এ সিনেমায় আমি দীর্ঘ সময় দিয়েছি। সিনেমার জন্য চুলদাড়ি বড় করেছি। একটি সিনেমার জন্য আমার পাগলামি নিয়ে মা-বাবার মনে হয়তো প্রশ্ন ছিল, ছেলেটি চুল-দাড়ি বড় করে কী করছে? কী করেছি, এটি তো তাদের বোঝানো যায় না। তবে আমার আত্মবিশ্বাস ছিল, সিনেমাটি মুক্তির পরে গল্পটি তাদের টাচ করবে। কারণ, গল্পটিই এমন, এটি প্রথম যদি কাউকে টাচ করে, সেটি সন্তানের মা-বাবাদের। যে কারণে তাদের একসঙ্গে হলে নিয়ে কাছ থেকে অনুভূতি জানার চেষ্টা করেছি। এখন পর্যন্ত মা-বাবার কাছ থেকে সেরা ফিডব্যাক পেয়েছি। বাবা-মেয়ের গল্পটি দেখে তারা ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলেন। শুধু আমার বাবা-মা নন, অন্য মা-বাবাদের কাছেও গল্পটি নিজেদের হয়ে উঠেছে। তারা সিনেমাটি দেখে কেঁদেছেন। হল রিঅ্যাকশনের সেসব ভিডিও সবাই দেখেছেন। সব মিলিয়ে আমরা সফল। আমাদের জংলি সফল।’

মুক্তির পর থেকে ‘জংলি’ সিনেমার এগিয়ে যাওয়ার গ্রাফ দেখলে শুধু দর্শকের ভালোবাসায় সফল নয়, ব্যবসায়িকভাবেও সিনেমাটি যে সফল তার চিত্র বিদ্যমান। মাত্র ৮টি শো দিয়ে শুরু হওয়া সিনেমাটি ঈদের এতদিন পরও মাল্টিপ্লেক্সে ত্রিশটির মতো শো নিয়ে দাপিয়ে চলছে। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও জংলি হয়ে উঠেছে দর্শকদের সিনেমা।  

প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান টাইগার মিডিয়ার কর্ণধার জানিয়েছেন, জংলি প্রায় ছয় কোটির (গ্রস) ক্লাবে প্রবেশ করেছে। 

ঈদে মুক্তির পর থেকে ক্রমশ দর্শকপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘জংলি’। এমনকি, দেশের সিনেমাপ্রেমীদের মন জয় করে কানাডা, আমেরিকা ও ইউকে’র ৪০টি থিয়েটারে মুক্তি পেয়েছে ‘জংলি’। গত ২৫ এপ্রিল থেকে স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো-এর পরিবেশনায়, ঈদের সিনেমাগুলোর মধ্যে দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি থিয়েটারে একযোগে মুক্তি পেয়েছে এ সিনেমাটি। কানাডা ও আমেরিকার বক্স অফিসে প্রথম ৩ দিনের গ্রস ৩৫,০০০ ডলার আয় করে শুভসূচনা করেছে ‘জংলি’।

ঈদে আরও অনেক ছবি মুক্তি পেয়েছে। সেগুলোর মধ্যে জংলি বিশেষ হয়ে উঠেছে কেবল বাবা-মেয়ের গল্পের কারণে। সঙ্গে সিয়ামের নজরকাড়া অভিনয়। নৈঋতার পাখি হয়ে ওঠার দারুণ চেষ্টা। দিমিত্রি থে স্টোনহার্ট নামে এক মনীষী বলেছেন, ‘একজন বাবা বলেন না যে তিনি তোমাকে ভালোবাসেন; বরং তিনি দেখিয়ে দেন যে, তিনি তোমাকে ভালোবাসেন’ জংলি সিনেমায় সিয়াম সেটি বোঝাতে পেরেছেন। ফলে সিনেমাটি হয়ে উঠেছে সবার।

প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন– ‘পৃথিবীতে আসার সময় প্রতিটি মানুষই একটি করে আলাদিনের প্রদীপ নিয়ে আসে, কিন্তু খুব কম মানুষই সেই প্রদীপ থেকে ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগাতে পারে।’ 
সিয়াম তাঁর জীবনের সেই দৈত্যকে জাগাতে পেরেছেন। পেরেছেন বলেই হয়তো আজ তিনি সাধারণ সিয়াম থেকে নায়ক সিয়াম হয়ে উঠেছেন। সিয়ামের যাত্রাটা শুরু বেশ আগে হলেও পুরোপুরি শুরু হয় ‘দহন’ সিনেমার মাধ্যমে। রায়হান রাফী পরিচালিত এ সিনেমাটির মাধ্যমে সিয়াম নাটক থেকে পুরোপুরি চলচ্চিত্রের মানুষ হয়ে ওঠেন। সে যাত্রা এখনও চলছে। প্রথম সিনেমায় যে সিয়ামকে সবাই  দেখেছেন, জংলির সেই সিয়াম যেন আকাশ-পাতাল। তখন সিয়াম ছিলেন তরুণ, এই সিয়াম এখন বাবা। পর্দায় ও বাস্তবে দুই জায়গাতে দারুণ এক বাবা হয়ে উঠেছেন তিনি। নিজের অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়ে আগামী পরিকল্পনা কী? প্রশ্ন রাখলে নায়ক বলেন, ‘আমি নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে চাই। যারা আমার আগের কাজ দেখেছেন, তারা যেন বলেন, আগের কাজকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছি। আরেকজনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া কঠিন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ