জার্মান মেয়েটির সঙ্গে আমার প্রেমের শুরুটা যেভাবে
Published: 22nd, February 2025 GMT
তখন আমি জার্মানির একটা টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে ডেটা সায়েন্সে ব্যাচেলর করছি। বার্লিনের পথঘাট কিছুই চিনি না। শুধু ভার্সিটিতে যাই আর আসি। তার ওপরে এখানে ইংরেজির কোনো ব্যবহারই নেই বললেই চলে। ভার্সিটির নোটিশ বোর্ড থেকে রেস্তোরাঁর খাবার মেনু—সবই জার্মান ভাষায়। ক্লাস লেকচারটা ইংরেজিতে হয় বলে রক্ষে।
ভোরে ঘুম থেকে উঠে ক্লাসে যাই। তারপর লাইব্রেরিতে পড়াশোনা। এরপর রাতে সুপারমার্কেটে কাজ। জীবনটা যেন শুধু দায়িত্ব আর সংগ্রামের নাম। প্রতিদিন এই একঘেয়ে রুটিন।
এই সুপারমার্কেটেই লিয়ার সঙ্গে পরিচয়। আমার মতো পার্টটাইম কাজ করে। প্রাণবন্ত একটা মেয়ে। ইংরেজিটাও ভালোই রপ্ত করেছে। প্রথম প্রথম টুকটাক হাই, হ্যালো হতো। একদিন শেলফ গোছানোর সময় হুট করে পিছলে পড়ে যাই, আর লিয়া দ্রুত হাত বাড়িয়ে আমাকে ধরে ফেলে।
ইংরেজিতে পুরো বাক্য বলে, ‘লাগে নি তো? তুমি ঠিক আছ?’
বাংলা সিনেমায় হলে অবশ্য মেয়েটারই এভাবে পড়ার কথা। সে ক্ষেত্রে নায়ক এসে আলগোছে নায়িকাকে ধরে সম্ভাব্য পতন ঠেকাবে। কিন্তু জীবন তো আর সিনেমা নয়, বাঙালি পুরুষ আমি আকস্মিক ঘটনায় লজ্জাই পাই।
এর পর থেকে কথা বাড়তে থাকে। আমার দেশের শীতকাল, মানুষ সম্পর্কে জানতে চাইত ও।
বলতাম, ‘তেমন নয়, শুধু হালকা ঠান্ডা, অনেকটা শরতের মতো।’
একদিন বলল, ‘তাহলে এত ঠান্ডায় এখানে কীভাবে থাকো?’
মজা করে বললাম, ‘জার্মান মেয়েদের হাসি সুন্দর তো তাই শীত কম মনে হয়!’
লিয়া একটু লজ্জা পেল, কিন্তু মুচকি হেসে বলল, ‘এশিয়ানদের এই একটা ভালো গুণ, ফ্লার্ট করে কিন্তু ভদ্রতা বজায় রেখে!’
শুধু সুপারমার্কেট নয়, কাজ শেষে কফিশপে বসে গল্প করা, শপিং মলে ঘোরা, বার্লিনের ছোট ছোট ক্যাফেগুলোয় বসে শীতের সন্ধ্যা কাটানো—আমাদের বন্ধুত্ব কোথা থেকে যেন অন্য রং নিতে শুরু করে। বুঝতে পারছিলাম, লিয়া আমার জন্য বিশেষ কেউ হয়ে উঠছে।
কিন্তু আমার মনের এক কোনায় সব সময় একটা চিন্তা কাজ করত—আমার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। পড়াশোনা শেষ হলে কি আমি এখানেই থাকতে পারব, চাকরি পাব, নাকি একদিন সব ফেলে ফিরে যেতে হবে?
এক সন্ধ্যায় কাজ শেষে লিয়া আমাকে বলল, ‘তুমি কি সত্যিই এখানে থাকবে, নাকি একদিন চলে যাবে?’
জানালার বাইরে তাকিয়ে বললাম, ‘জানি না, লিয়া। আমি চেষ্টা করছি, লড়ছি। কিন্তু জানি না সব কেমন হবে।’
সে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে, তারপর আমার হাতটা ধরে। সেদিন বুঝলাম, ভালোবাসা শুধু দুজন মানুষের সম্পর্ক নয়, একসঙ্গে লড়াই করার প্রতিশ্রুতি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: একদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।
এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।
প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।
মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।
নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।