গ্রামে শিরনির আয়োজন করা নিয়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের ৩০ জন আহত হয়েছেন। আজ শনিবার সকালে সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়নের ঠাকুরভোগ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরভোগ গ্রামের গবাদিপশু যাতে রোগবালাইয়ে আক্রান্ত না হয়, এ জন্য প্রতিবছর সবাই মিলে শিরনির আয়োজন করেন। এবার শিরনির আয়োজন নিয়ে গ্রামের দুটি পক্ষের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। বিএনপির সমর্থকেরা আওয়ামী লীগের সমর্থকদের আয়োজনে যুক্ত না করায় গ্রামে উত্তেজনা দেখা দেয়।

গ্রামের বাসিন্দা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি নূর মিয়া বলেন, গ্রামের সবাই মিলেই প্রতিবছর এই শিরনির আয়োজন করেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের সুফি মিয়া, আবদাল মিয়াসহ কয়েকজন ঝামেলা করায় এবার তাঁদের যুক্ত করা হয়নি। আজ সকালে শিরনি প্রস্তুত করে বিতরণের সময় মসজিদের মাইকে আবদাল মিয়ার পক্ষের লোকজন এই শিরনি বাতিল বলে ঘোষণা দেন। এতে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে গ্রামের মাঠে দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে ৩০ জন আহত হন।

নূর মিয়া বলেন, আবদাল মিয়া ও সুফি মিয়া আওয়ামী লীগের লোক। তাই গ্রামের লোকজন শিরনিতে তাঁদের রাখেননি। তাঁরা মাইকে ঘোষণা দেওয়ার পরই উত্তেজনা দেখা দেয়, পরে মারামারি হয়। এতে তাঁদের পক্ষের ১৫ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের সুনামগঞ্জ ও সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের নেতা আবদাল মিয়ার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি নিজে আহত জানিয়ে পরে কথা বলবেন বলে জানান। কিন্তু পরে একাধিকবার কল করলেও ধরেননি।

এ ব্যাপারে শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.

আকরাম আলী বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। একজনকে আটক করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত আছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আবদ ল ম য় স ঘর ষ ব এনপ আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।

আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।

বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’

এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্‌স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ