ইংরেজি ও বাংলা ভাষার আগ্রাসনে দেশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের ভাষা সংকুচিত হচ্ছে। একইভাবে নীতির সংকটে ইংরেজি ভাষার ব্যবহার বাড়ছে। ফলে বাংলা ভাষাও সংকুচিত হচ্ছে।

রোববার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ‘মাতৃভাষাভিত্তিক বহুভাষী শিক্ষা’ শীর্ষক সেমিনারে ভাষা গবেষকরা এসব কথা বলেন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট দুই দিনব্যাপী এ সেমিনারের আয়োজক।

বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, জাতি গঠনে বৈচিত্র্যের জন্য মাতৃভাষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভাষাগত বৈচিত্র্যের লালন ও সুরক্ষার ওপর জোর দিতে হবে, যাতে ভাষার কারণে কোনো বিরোধ ও বৈষম্যের সৃষ্টি না হয়। সব ভাষার প্রতি সমান শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, দেশে বাংলাসহ ৪১টি ভাষার অস্তিত্ব রয়েছে। তবে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ১৪টি ভাষা বিপন্নপ্রায়। এর মধ্যে খাড়িয়া ভাষায় মাত্র দু’জন কথা বলেন, দুই বোন তারা। তাদের মৃত্যুতে এ ভাষাটিও হারিয়ে যাবে। জাতিসংঘে বাংলাকে দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতির জন্য এখনই প্রশ্ন তুলতে হবে। দেশের সংবিধান ও আইনে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা ব্যবহারের কথা রয়েছে। কিন্তু এটি এখনও কার্যকর হয়নি। আদালতে সমানে ইংরেজি ব্যবহার হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট নামেই আন্তর্জাতিক। আমরা আশাবাদী নতুন নেতৃত্বে ইনস্টিটিউট লক্ষ্য পূরণে এগিয়ে যাবে।

ঢাবির আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের সাবেক অধ্যাপক মনসুর মুসা বলেন, ইংরেজি ও বাংলা ভাষার ব্যবহার বহুবিধ। সংবিধানে ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা হয়েছে স্বীকৃতির মাধ্যমে। বাংলা ভাষার অবয়ব পরিকল্পনা হয়নি এখনও। আমাদের জ্ঞানের জগৎ অত্যন্ত পশ্চাৎপদ। ভাষানীতি প্রণয়নসহ সার্বিক বিষয়ে সরকারের কাঠামো প্রণয়ন করা জরুরি।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মুহাম্মদ আসাদুজ্জামানের সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তৃতা করেন ঢাবির ভাষা বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক গুলশান আরা বেগম, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী প্রমুখ।

সেমিনারের শেষ দিনে রোববার চারটি বিষয়ে পৃথক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভাষা গবেষকরা। ‘মাতৃভাষাভিত্তিক বহুভাষী শিক্ষা: সংকট ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিনুর রশিদ বলেন, মাতৃভাষা বাংলা নিয়ে নানা সমস্যা আছে। যদিও কিছু মানুষ ভাষাকে জাগ্রত করছে। অন্য ভাষাগুলোর অবস্থা শোচনীয়। বিভিন্ন ভাষা থেকে মাতৃভাষায় শেখানোটা জোরদার হলে সংকট কেটে যাবে।

তিনি বলেন, সরকারি কাঠামোতে ইংরেজি ভাষাকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। ইংরেজি যত বেশি বিস্তৃত হবে মাতৃভাষা বাংলা ততই সংকুচিত হবে। অসমতা তৈরি করছে। বাংলা ভাষাও একইভাবে আদিবাসীদের ভাষাকে সংকুচিত করছে। এ ভাষার আগ্রাসন ক্রমশই বাড়ছে। শিক্ষার সূত্রপাত হবে মাতৃভাষায়। এ জন্য সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো থাকা দরকার। পাশাপাশি কৌশল, নিরাপদ পরিবেশ, শক্তিশালী প্রচারাভিযান ও টেকসই অর্থায়ন থাকতে হবে।

‘মাতৃভাষা আশ্রয়ী শিক্ষায় প্রমিত বাংলার প্রয়োগ’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আব্দুর রহিম। তিনি বলেন, বাংলা ভাষার ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। এ ভাষার গুরুত্ব যেন অবহেলায় পরিণত না হয়।

সেমিনারে পৃথক অধিবেশন ‘উচ্চ শিক্ষায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের মাতৃভাষার ব্যবহার: প্রসঙ্গ বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিলেটের পাসকপের প্রধান নির্বাহী গৌরাঙ্গ পাত্র এবং ঢাবির তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক আহমেদুল কবির ‘মাতৃভাষাভিত্তিক বহুভাষিক শিক্ষায় প্রযুক্তির ব্যবহার’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

সভাপতির বক্তব্যে আসাদুজ্জামান বলেন, প্রশ্নটা অনেক ক্ষেত্রে উচ্চারিত হচ্ছে, আমরা কতটা সফল হচ্ছি? তবে এটি মনে রাখা উচিত প্রতিষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক যাত্রা ২০১০ সালে শুরু হয়েছে। আমরা লক্ষ্যপূরণে চেষ্টা করছি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ব যবহ র

এছাড়াও পড়ুন:

রাশিয়ার কাছাকাছি দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েনের নির্দেশ ট্রাম্পের

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের ‘অত্যন্ত উস্কানিমূলক’ মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন ‘যথাযথ অঞ্চলে মোতায়েন’ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

শুক্রবার (১ আগস্ট) ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, “ওই মন্তব্য় যদি নেহাতই বোকামি ও উস্কানিমূলক বক্তব্য না হয়ে, তার থেকে বেশি কিছু হয়, তাই আমি দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছি।” খবর বিবিসির।

ট্রাম্প আরো লিখেছেন যে, “শব্দগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ। এর প্রভাবও অপ্রত্যাশিত হতে পারে। তবে আশা করি এই বিবৃতি তেমন কিছু ঘটাবে না।” 

আরো পড়ুন:

পুতিনকে এবার ১০ দিনের আল্টিমেটাম দিলেন ট্রাম্প

পুতিনকে এবার ১২ দিনের আল্টিমেটাম দিলেন ট্রাম্প

মার্কিন সামরিক প্রোটোকল মেনে দুটি সাবমেরিন কোথায় মোতায়েন করা হচ্ছে, তা তিনি বলেননি।

একদিন আগেই ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে মস্কোকে আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন ট্রাম্প। এরপরই প্রতিক্রিয়া দেন মেদভেদেভ।

পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় জানিয়ে শুক্রবার ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, “রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ, যিনি বর্তমানে রাশিয়ান ফেডারেশনের নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান, তার অত্যন্ত উস্কানিমূলক বক্তব্যের ভিত্তিতে, আমি দুটি পারমাণবিক সাবমেরিনকে উপযুক্ত অঞ্চলে মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছি।”

ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট পারমাণবিক চালিত নাকি পারমাণবিক অস্ত্রধারী সাবমেরিনের মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছেন, তা খোলাসা করেননি। 

রাশিয়া এবং আমেরিকার কাছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পারমাণবিক অস্ত্র আছে এবং উভয় দেশেরই পারমাণবিক সাবমেরিনের বহর রয়েছে।

শুক্রবার পরবর্তীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প বলেন, “একটি হুমকি দেওয়া হয়েছিল এবং আমরা এটিকে উপযুক্ত মনে করিনি। তাই আমাকে খুব সতর্ক থাকতে হবে।”

মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, “আমি মার্কিন জনগণের নিরাপত্তার ভিত্তিতে এটি করেছি। রাশিয়ার একজন সাবেক প্রেসিডেন্ট হুমকি দিয়েছিলেন। এবং আমরা আমাদের জনগণকে রক্ষা করব।”

ক্রেমলিন এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো প্রকাশ্য মন্তব্য করেনি, তবে ট্রাম্পের বক্তব্যের পর মস্কোর শেয়ার বাজারে ধস নেমেছে।

সম্প্রতি ট্রাম্প এবং মেদভেদেভ সোশ্যাল মিডিয়ায় একে অপরের বিরুদ্ধে একাধিক ব্যক্তিগত আক্রমণে জড়িয়ে পড়েছেন।

ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার জন্য ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে দুই দফায় নতুন করে সময় বেধে দিয়েছেন, তবে যুদ্ধ থামানোর কোনো লক্ষণ পুতিন এখনও দেখাননি।

মেদভেদেভ- যিনি ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন- এই সপ্তাহের শুরুতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ‘রাশিয়ার সঙ্গে আল্টিমেটাম খেলা’ খেলার অভিযোগ করেছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে মেদভেদেভ বলেছিলেন, “প্রতিটি নতুন আল্টিমেটাম একটি হুমকি এবং যুদ্ধের দিকে একটি পদক্ষেপ।”

এর আগে, তিনি জুলাইয়ের শুরুতে তিনি ট্রাম্পের আল্টিমেটামকে ‘নাটকীয়’ বলে অভিহিত করে বলেছিলেন, “রাশিয়া এসবের পরোয়া করে না।”

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) টেলিগ্রামে একটি পোস্টে মেদভেদেভ ট্রাম্পকে রাশিয়ার ‘ডেড হ্যান্ড’ সম্পর্কে সতর্ক করেন। সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, ‘ডেড হ্যান্ড’ হলো রাশিয়ার প্রতিশোধমূলক পারমাণবিক হামলা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কোডনাম।

এরপরই শুক্রবার ট্রাম্প মেদভেদেভের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় প্রথমবারের মতো প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি  মেদভেদেভকে ‘রাশিয়ার ব্যর্থ সাবেক প্রেসিডেন্ট, নিজেকে এখনো প্রেসিডেন্ট বলে ভাবেন’ বলে কটাক্ষ করেন। 

ট্রাম্প মেদভেদেভকে ‘তার কথার দিকে নজর রাখার’ বিষয়ে সতর্কও করে বলেন, “তিনি খুব বিপজ্জনক অঞ্চলে প্রবেশ করছেন!”

মেদভেদেভ ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণাঙ্গ আক্রমণকে সমর্থন করেন এবং পশ্চিমাদের একজন স্পষ্ট সমালোচক।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাশিয়ার কাছাকাছি দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েনের নির্দেশ ট্রাম্পের
  • ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের
  • মেসি বনাম ইয়ামাল: ফিনালিসিমার সময়-সূচি ঘোষণা