ফরিদপুরে শাহাদাত মুন্সী (১৫) নামে এক কিশোর ইজিবাইক চালককে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে তিন ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা অনাদায়ে তাদের আরও দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।

হত্যাকাণ্ডের শিকার কিশোর শাহাদাত ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার কাপুরিয়া সদরদী এলাকার বেলায়েত মুন্সীর ছেলে।

সোমবার বিকেল চারটার দিকে ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক অশোক কুমার দত্ত এ রায় প্রদান করেন।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার চৌধুরীকান্দা সদরদী গ্রামের আয়নাল শেখ (৩৬), স্বপন মুন্সী (৩৬) এবং আলামিন শেখ (৩৩)। রায় ঘোষণার সময় আলামিন শেখ আদালতে হাজির ছিলেন না। রায়ের পর আদালতে উপস্থিত আয়নাল শেখ ও স্বপন মুন্সীকে পুলিশ প্রহরায় জেলা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, শাহাদাত মুন্সী ইজিবাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করত। ২০১২ সালের ১২ জানুয়ারি বিকেল ৫টার দিকে ভাঙ্গা উপজেলা অটোস্ট্যান্ড থেকে নিখোঁজ হয়। পরদিন ১৩ জানুয়ারি দুপুর দুইটার দিকে তার লাশ পাওয়া যায় নগরকান্দার উপজেলার ডাঙ্গী ইউনিয়নের বাসাগাড়ি গ্রামে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পাশের একটি ডোবায়। আসামিরা কিশোর শাহাদাতের ইজিবাইক ছিনতাই করে তাকে গামছা দিয়ে পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।

এ ঘটনায় ওইদিনই (১৩ জানুয়ারি) শাহাদাতের ভাই আবু সাঈদ বাদী হয়ে নগরকান্দা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামিদের অজ্ঞাতনামা হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

এ মামলাটি তদন্ত করে ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ নগরকান্দা থানার উপপরিদর্শক মো.

আতিয়ার রহমান তিনজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। এরপর দীর্ঘ শুনানি শেষে আজ এ রায় প্রদান করা হল।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ওই আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) মো. রকিবুল ইসলাম বিশ্বাস বলেন, ১৮৪০ সালের পেনাল কোডের ৩০২ ধারাসহ তৎসংলগ্ন ধারায় এই রায় প্রদান করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এই রায়ে প্রমাণ হয়েছে অপরাধ করে পার পাওয়ার কোনও সুযোগ নেই। এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ঘাড়ব্যথার কারণগুলো কী কী, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা জেনে রাখুন

অনেক কারণে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—

১. সারভাইক্যাল স্পন্ডেলোসিস

২. সারভাইক্যাল স্পন্ডেলোসিস

৩. সারভাইক্যাল রিবস

৪. সারভাইক্যাল ক্যানেল স্টেনোসিস বা স্পাইনাল ক্যানাল সরু হওয়া

৫. সারভাইক্যাল ডিস্ক প্রলেপস বা হারনিয়েশন যেখানে হারনিয়াটেড ডিস্ক নার্ভের ওপর চাপ প্রয়োগ করে

৬. মাংসপেশি, হাড়, জোড়া, লিগামেন্ট, ডিস্ক (দুই কশেরুকার মাঝখানে থাকে) ও স্নায়ুর রোগ বা ইনজুরি

৭. অস্বাভাবিক পজিশনে নিদ্রা

৮. উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদ্‌রোগ

৯. হাড় ও তরুণাস্থির প্রদাহ এবং ক্ষয়

১০. অস্টিওপরোসিস বা হাড়ের ক্ষয় ও ভঙ্গুরতা রোগ

১১. হাড় নরম ও বাঁকা হওয়া

১২. রিউমাটয়েড-আর্থ্রাইটিস ও সেরো নেগেটিভ আর্থ্রাইটিস

১৩. সারভাইক্যাল অস্টিও-আর্থ্রাইটিস

১৪. ফাইব্রোমায়ালজিয়া

১৫. সামনে ঝুঁকে বা পাশে কাত হয়ে ভারী কিছু তুলতে চেষ্টা করা

১৬. হাড়ের ইনফেকশন

১৭. ডিস্কাইটিস (ডিস্কের প্রদাহ)

১৮. পেশাগত কারণে দীর্ঘক্ষণ ঘাড় নিচু বা উঁচু করে রাখলে ইত্যাদি।

উপসর্গ

ঘাড়ব্যথা কাঁধ, বাহু, হাত ও আঙুল পর্যন্ত ছড়াতে পারে।

কাঁধ, বাহু, হাত ও আঙুলে অস্বাভাবিক অনুভূতি বা অবশ ভাব।

বাহু, হাত ও আঙুল দুর্বল হতে পারে।

সব সময় ঘাড় ধরে বা জমে আছে মনে হয়।

ঘাড়ের মুভমেন্ট করলে, ঘাড় নিচু করে ভারী কিছু তোলার পর তীব্র ব্যথা।

হাঁচি, কাশি দিলে বা সামনে ঝুঁকলে ব্যথা বেড়ে যায়।

ব্যথা মাথার পেছন থেকে শুরু হয়ে মাথার সামনে আসতে পারে।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা

ঘাড়ব্যথার কারণ নির্ণয় করার জন্য প্রয়োজনীয় ল্যাবরেটরি পরীক্ষা হতে পারে—রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা, ঘাড়ের এক্স-রে, এমআরআই বা সিটি স্ক্যান।

চিকিৎসা

চিকিৎসা এর কারণগুলোর ওপর নির্ভর করে।

কনজারভেটিভ চিকিৎসা: ১. ব্যথা বা প্রদাহনাশক ওষুধ ২.ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা। বিভিন্ন ধরনের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা যেমন ম্যানুয়াল বা ম্যানুপুলেশন থেরাপি, থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রোমেডিকেল ইকুইপমেন্ট যেমন ইন্টারফ্যারেনশিয়াল থেরাপি, অতি লোহিত রশ্মি, মাইক্রোওয়েভ ডায়াথারমি, আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি, শর্টওয়েভ ডায়াথার্মি ও ইন্টারমিটেন্ট ট্র্যাকশন ইত্যাদির মাধ্যমে চিকিৎসা করা যায়।

সার্জিক্যাল চিকিৎসা: মেডিকেল চিকিৎসায় ভালো না হলে, ব্যথা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকলে, স্নায়ু সমস্যা দেখা দিলে, বাহু, হাত ও আঙুলে দুর্বলতা এবং অবশ ভাব দেখা দিলে এবং প্রস্রাব বা পায়খানার নিয়ন্ত্রণ না থাকলে দ্রুত সার্জিক্যাল চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।

ঘাড়ব্যথা প্রতিরোধে করণীয়

১. সামনের দিকে ঝুঁকে দীর্ঘক্ষণ কাজ করবেন না।

২. মাথার ওপর কোনো ওজন নেবেন না।

৩. প্রয়োজনীয় বিশ্রাম নিতে হবে।

৪. শক্ত বিছানায় ঘুমাবেন।

৫. শোবার সময় একটা মধ্যম সাইজের বালিশ ব্যবহার করবেন, যার অর্ধেকটুকু মাথা ও অর্ধেকটুকু ঘাড়ের নিচে দেবেন।

৬. তীব্র ব্যথা কমে গেলেও ঘাড় নিচু বা উঁচু করা, মোচড়ানো (টুইসটিং) বন্ধ করা।

৭. সেলুনে কখনোই ঘাড় মটকাবেন না।

৯. কাত হয়ে শুয়ে পড়বেন না বা টেলিভিশন দেখবেন না।

১০. কম্পিউটারে কাজ করার সময় মনিটর চোখের লেভেলে রাখবেন।

১১. গরম প্যাড, গরম পানির বোতল দিয়ে গরম সেঁক দেবেন।

১২. ঘাড়ের পেশি নমনীয় ও শক্তিশালী হওয়ার ব্যায়াম করতে হবে।

এম ইয়াছিন আলী, চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ঢাকা

আরও পড়ুনকাঁধের ব্যথা বা কাঁধ জমে যাওয়ার কারণ ও করণীয়১৭ এপ্রিল ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ