পাশাপাশি তিনটি কবরে শুইয়ে দিলেন মা, স্ত্রী ও সাত মাসের সন্তানকে
Published: 24th, February 2025 GMT
কথা বলার শক্তি নেই বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা নোমানুর রশিদের। জানাজা শেষে পাশাপাশি তিনটি কবরে শুইয়ে দিয়ে এসেছেন মা, স্ত্রী ও শিশুসন্তানকে। চলাফেরার শক্তিও যেন নেই। কয়েকজনের কাঁধে ভর দিয়ে কোনোমতে কবরস্থান থেকে ঘরে এলেন। এরপর ঘরের উঠানের এক পাশে গিয়ে বসলেন। কোনো কথা নেই মুখে। কেবল চোখ মুছছিলেন বারবার।
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বড় উঠান ইউনিয়নের ফাজিলখার হাট মসজিদের উত্তর পাশে পাশাপাশি তিনটি কবর। আজ সোমবার দুপুরে জানাজা শেষে সেখানে নোমানের মা ফাতেমা বেগম (৬৫), স্ত্রী আইরিন সুলতানা (৩০) ও শিশুপুত্র আরহাম বিন নোমানকে (৭ মাস) দাফন করা হয়। দুপুরের দিকে নোমানদের বাড়িতে ঢুকতেই দেখা গেল, বাড়ির উঠান ভর্তি শোকার্ত মানুষের ভিড়। কীভাবে এমন ঘটনা ঘটে গেল, তা এখনো যেন বুঝে উঠতে পারছেন না স্বজনেরা। একসঙ্গে তিনটি মৃত্যুর শোকে কাতর নোমানকে কীভাবে সান্ত্বনা দেবেন, তা–ও ভেবে পাচ্ছিলেন না।
গতকাল রোববার দিবাগত রাত ১২টার দিকে নোমানের মা ফাতেমা বেগম মারা যান। এ খবর শুনে নোমান নিজের কর্মস্থল লক্ষ্মীপুর থেকে আর তাঁর স্ত্রী আইরিন শিশুপুত্র আরহামকে নিয়ে কক্সবাজারের রামুর বাবার বাড়ি থেকে কর্ণফুলী উপজেলার উদ্দেশে রওনা দেন। শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার পথে রাত তিনটার সময় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার উত্তর হারবাং এলাকায় আইরিনদের বহনকারী বাসের সঙ্গে একটি ট্রাকের সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলে সন্তানসহ নিহত হন তিনি। ওই সময় আইরিনের ছোট ভাই মো.
নোমানুর রশিদের স্বজনেরা জানালেন, ২০২৩ সালে তাঁর সঙ্গে কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার আইরিন সুলতানার বিয়ে হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বরে তাঁদের একটি ছেলেসন্তান হয়। ছেলেসন্তানকে নিয়ে আইরিন বাবার বাড়ি থাকছিলেন। সেখানে একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরিও নেন তিনি। অপর দিকে স্বামী মো. নোমানুর রশিদ লক্ষ্মীপুরে ইসলামী ব্যাংকের একটি শাখায় চাকরি করেন। ১৫ ফেব্রুয়ারি মারা যান আইরিন সুলতানার বাবা। এর ৯ দিন পরই এমন দুর্ঘটনা ঘটল।
নোমানের স্ত্রী আইরিন সুলতানা ও শিশুপুত্র আরহাম এখন কেবলইউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপজ ল র
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।