কুয়েট উপাচার্যের বাসভবনে তালা না দিয়ে ফিরে গেলেন শিক্ষার্থীরা
Published: 25th, February 2025 GMT
পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে তাঁর বাসভবনে আবারও তালা লাগাতে গিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলার পর শিক্ষার্থীরা তালা না লাগিয়ে সেখান থেকে ফিরে যান। আজ মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ওই ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ কার্যালয়ের উপপরিচালক সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকেরা মিলে ভিসি স্যারের সঙ্গে মিটিং করছিলাম। আমরা শুনলাম, শিক্ষার্থীদের কয়েকজন উপাচার্য স্যারের বাসভবনে তালা দিতে এসেছে। তারা পাঁচ মিনিটের মধ্যে সবাইকে বের হতে আলটিমেটামও দেয়। পরে আমরা গিয়ে তাদের বুঝিয়েছি, এটা আবাসিক ভবন; এখানে তালা দেওয়া যাবে না। পরে তারা চলে গেছে।’
এর আগে গতকাল সোমবার রাতে কুয়েটের উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদ ঢাকা থেকে খুলনা ফিরে বাসভবনে অবস্থান নিয়েছেন এমন সংবাদে ক্ষুব্ধ হন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা উপাচার্যকে আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে বাসভবন থেকে বের হয়ে যেতে সময় বেঁধে দেন। একই সঙ্গে উপাচার্যের বাসভবনে আবারও তালা ঝোলানোর ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।
আজ দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী তালা ও শিকল নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের প্রধান ফটকের সামনে আসেন। তাঁরা সেখানে অবস্থান নিয়ে হ্যান্ডমাইকে উপাচার্যসহ অন্যদের পাঁচ মিনিটের মধ্যে বাসভবন ত্যাগ করতে বলেন। পাঁচ মিনিট পর আবারও পাঁচ মিনিট সময় বেঁধে দেন শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে উপাচার্যের বাসভবন থেকে জ্যেষ্ঠ শিক্ষকেরা বের হয়ে গেটের ভেতরে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা তাঁদের ওপর হওয়া হামলায় চিহ্নিত ব্যক্তিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে উপাচার্যের ওপর তাঁদের অসন্তোষের কথা জানান। ভেতর থেকে শিক্ষকেরা বলতে থাকেন, শিক্ষার্থীরা যদি এতটা আক্রমণাত্মক হয়ে যায়, তাহলে তাঁদের পক্ষে পাঠদান করা সম্ভব হবে না। শিক্ষার্থীদের তালা না মেরে আলোচনায় বসার জন্য আহ্বান করেন। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে চলে যান।
আরও পড়ুনকুয়েট উপাচার্যের বাসভবনে আবারও তালা লাগানোর ঘোষণা শিক্ষার্থীদের৪ ঘণ্টা আগেএর আগে গত শুক্রবার রাতে পদত্যাগের দাবিতে উপাচার্যের বাসভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা।
কুয়েটের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশস টেকনোলজির (আইআইসিটি) পরিচালক ও ইইই বিভাগের অধ্যাপক আশরাফুল গণি ভূঁইয়া বলেন, ‘প্রশাসন আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। ছাত্র-শিক্ষক সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। সুন্দরভাবে ক্যাম্পাসকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। ছাত্রদের দাবিগুলো যৌক্তিক। আমরাও চাই না ক্যাম্পাসে রাজনীতি আসুক। তাদের দাবিগুলোর সঙ্গে আমরা একমত। কিন্তু কিছু কিছু ছাত্র তাদের সীমাটা অতিক্রম করছে। তারা স্যারদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করছে, আমাদের বিভিন্ন সময় গালিগালাজ করছে। এটা আমরা কখনো আশা করিনি। তারা আমাদের বাসায় তালা দেবে, খারাপ ব্যবহার করবে, এটা আমরা পছন্দ করছি না। কুয়েট ভালোভাবে চলুক, এটা আমরা চাই।’
এদিকে গত রোববার ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে কুয়েটে সাম্প্রতিক সংঘর্ষের ঘটনায় শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। এতে হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার, উপাচার্যের পদত্যাগসহ ছয় দফা দাবি জানানো হয়েছে।
সময় বাড়ানোর আবেদন তদন্ত কমিটির
১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে কুয়েটে শিক্ষার্থীদের দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যার সভাপতি কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এম এম এ হাসেম। গতকাল তাঁর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, কমিটির তদন্ত কার্যক্রম চলমান। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে কমিটি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে এবং প্রাপ্ত তথ্যাদি গভীরভাবে পর্যালোচনার জন্য সাত কর্মদিবস সময় বৃদ্ধি করার জন্য প্রশাসন বরাবর আবেদন করেছে তদন্ত কমিটি।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গোপালগঞ্জে ডিসির বাসভবনে হামলার ঘটনায় ১০১ জনের বিরুদ্ধে মামলা
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচি ঘিরে হামলা ও সংঘর্ষের জেরে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) বাসভবনে হামলার ঘটনায় আরও একটি মামলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে সদর থানার সহকারী উপপরিদর্শক ফারুক হোসেন বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলাটি করেন।
মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৪১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৬ জুলাই এনসিপির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জ পৌর পার্ক, লঞ্চঘাট, কাঁচাবাজার এলাকাসহ সড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে জনগণের মনে ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করে যান চলাচল ব্যাহত করা হয়। কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের পক্ষে মিছিল করা হয়। আসামিরা অসৎ উদ্দেশ্যে ও এনসিপির পথসভা নস্যাৎ করতে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টিসহ সরকারি সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করতে জনসাধারণের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করেন। এ সময় জেলা প্রশাসকের বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়।
এ নিয়ে গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলা ও ককটেল নিক্ষেপ, পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, জেলা কারাগারে হামলা, জেলা প্রশাসকের বাসভবনে হামলা, রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে জড়ানোর অভিযোগে ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মোট ১৪টি মামলা করা হলো। সদর, কাশিয়ানী, টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া থানায় মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে। ১৪টি মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১ হাজার ১৭৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ১৪ হাজার ৫৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় ১৬ জুলাই থেকে গত সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৩৩৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
১৬ জুলাই এনসিপির কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মী ও সমর্থকেরা হামলা চালান। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেদিন প্রথমে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। রাতেই কারফিউ জারি করা হয়। পরে কারফিউর মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হয়। পরে ২০ জুলাই রাত আটটায় কারফিউ ও ১৪৪ ধারা তুলে নেওয়া হয়।