গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ঘটনা। সুপার এইটের ম্যাচে বাংলাদেশ আফগানিস্তানকে হারালে সেমিফাইনালে যাওয়ার সুযোগ হতো অস্ট্রেলিয়ার। আর রান রেটের মারপ্যাঁচে আফগানিস্তান বাংলাদেশকে কঠিন সমীকরণে হারিয়ে দিলে সহজেই চলে যাবে সেমিফাইনালে।

আফগানিস্তানকে ১১৫ রানে আটকে দিয়েও বাংলাদেশ ম্যাচটা জিততে পারেনি। ৮ রানে হেরে নিজেরা হতাশায় পুড়েছে, অস্ট্রেলিয়াকেও পুড়িয়েছে। অন‌্যদিকে আফগানিস্তান প্রথমবার নিশ্চিত করে বৈশ্বিক আসরের সেমিফাইনাল।

বৃষ্টিবিঘ্নিত সেই ম্যাচে রোমাঞ্চের কমতি ছিল না। বিশেষ করে আফগান অলরাউন্ডার গুলবাদিন নাইবের পেশিতে ‘টান’ নিয়ে কম কথা হয়নি। আসলেই তা চোট ছিল নাকি অভিনয়, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে এখনো। বৃষ্টি আইনে সেন্ট ভিনসেন্টে ১১৩ রানের তাড়ায় ছিল বাংলাদেশ। বৃষ্টির আভাস। ডিএলএস পদ্ধতিতে বাংলাদেশ পিছিয়ে তখন ২ রানে। ডাগআউট থেকে আফগানিস্তানের প্রধান কোচ জোনাথন ট্রট সংকেত দিচ্ছিলেন, সময় নিতে।

ওই ইশারা দেখেই স্লিপে ফিল্ডিং করা নাইব হঠাৎ পায়ে টান পড়ার ভান করে শুয়ে পড়েন। এমন একটা ভঙ্গি করেন যেন ভয়ংকর চোটে পড়েছেন তিনি। ফিজিও ও সতীর্থ নাভিন উল হকের কাঁধে ভর করে মাঠ ছাড়া নাইব কিছুক্ষণের মধ্যে মাঠে নেমে বোলিং করেন। জয়ের পর দৌড়ে করেছেন উদযাপন।

নাইবের এই কাণ্ডে বিতর্ক ও সমালোচনার ঝড় উঠেছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। লম্বা সময় পর নাইব সেই ঘটনা নিয়ে মুখ খুললেন। তার সঙ্গে ছিলেন আফগান ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজও।

আইসিসির ফটোশুটে নেওয়া ভিডিওতে রহমানউল্লাহ বলেছেন, ‘‘আমি আসলে নিশ্চিত নই, সত্যিই চোট ছিল নাকি অভিনয়। সেটা আসলে ক্র‍্যাম্প ছিল তাই না? গুলবাদিন বলেছেন, ক্র‍্যাম্প হয়েছিল তার। আমরা কেউই নিশ্চিত নই। লোকে এ নিয়ে মজা নিচ্ছে। হয়তো তিনি চোটই পেয়েছিলেন। কারণ এটা তার শরীর। আমরা কিছু জানি না। কিছুটা অভিনয়ও হতে পারে। মাঝেমধ্যে ব্যাটিং, বোলিং কিংবা ফিল্ডিং ছাড়াও দলের প্রয়োজন পড়ে আপনার।’’

রহমানউল্লাহ যখন ওই মুহূর্ত নিয়ে কথা বলছিলেন তখন গুরবাজ ক‌্যামেরার পেছনে ছিলেন। হাসতে হাসতে ক‌্যামেরার সামনে গিয়ে তাকে বলতে দেখা যায়, ‘‘ম্যাচটি খুবই উত্তেজনাপূর্ণ ছিল। তবে, আমার কিছুটা সমস্যা হয়েছিল। কিন্তু, লোকে সেটাকে বড় ইস্যু বানিয়েছে। আমার জন্য ভালোই হয়েছে তা। ম্যাচ শেষে অনেক তারকা অভিনেতা আমাকে বার্তা পাঠিয়েছিল। সবাই বলছিল, আমি হলিউডে কাজ করতে পারি।’’

রহমানউল্লাহ এরপর যোগ করেন, ‘‘মজার বিষয় হলো, ক্র‍্যাম্প হওয়ার ৩-৪ মিনিট পর গুলবাদিন বাকি সবার চেয়ে দ্রুতগতিতে দৌড়াচ্ছিলেন। এ এক আশ্চর্যজনক ঘটনা। আমিও সেই একই চিকিৎসকের কাছে যেতে চাই। আমারও চোট পেয়েছিল, কিন্তু চিকিৎসক আমাকে দৌড়ানোর জন্য তৈরি করতে পারেননি।’’

ঢাকা/ইয়াসিন/রাজীব

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আফগ ন স ত ন

এছাড়াও পড়ুন:

দহন থেকে  জংলি

‘আমি নিয়মিত অনেক চিত্রনাট্য পাচ্ছি। নিয়মিত সেসব সিনেমা করলে প্রচুর টাকা কামাতে পারব। ফিন্যান্সিয়ালি জায়গাটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দর্শক আমাকে যেভাবে দেখতে চাচ্ছেন, তেমন গল্প পাচ্ছি না। দর্শক-প্রত্যাশার চেয়ে ভালো কিছু দিতে চাই। যখন সামগ্রিক চিন্তা করি, তখন ভাবতে হয় আমি কতটা আয় করলাম তার চেয়েও দর্শকের সামনে কীভাবে আসছি, সেটি মুখ্য। এটি একটি প্যাকেজ। মাঝে একটি-দুটি গল্প পছন্দ হয়। সেসব টিমের যে অবস্থা, বাজেট সামগ্রিকভাবে দেখতে গেলে ভালো গল্প তুলে আনা কঠিন হবে। তখন আমি না করে দিই। আমি চাইছি নিজের মতো করে কাজ করতে। জীবনে অনেক সিনেমা করতে হবে, এমন চিন্তা নেই। আমার মতো করে অল্প কিছু কাজ করে যেতে চাই।’ বলছিলেন সিয়াম আহমেদ।

গেল ঈদে মুক্তি পেয়েছে সিয়াম আহমেদ অভিনীত সিনেমা ‘জংলি’। যে সিনেমার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নায়কের আবেগ ও পরিশ্রমের দীর্ঘ গল্প। সিনেমাটি করতে একচুলও ছাড় দেননি সিয়াম। ফলাফল হিসেবে পেয়েছেন দর্শকের অবারিত ভালোবাসা। জংলি মুক্তির পর তাই গল্পটি হয়ে উঠেছে সবার। দর্শকরা হলে গিয়ে কেঁদেছেন, গল্পে বুঁদ হয়ে থেকেছেন। করেছেন সিয়াম ও তাঁর টিমের প্রশংসা। 

সিয়াম বললেন, ‘এ সিনেমায় আমি দীর্ঘ সময় দিয়েছি। সিনেমার জন্য চুলদাড়ি বড় করেছি। একটি সিনেমার জন্য আমার পাগলামি নিয়ে মা-বাবার মনে হয়তো প্রশ্ন ছিল, ছেলেটি চুল-দাড়ি বড় করে কী করছে? কী করেছি, এটি তো তাদের বোঝানো যায় না। তবে আমার আত্মবিশ্বাস ছিল, সিনেমাটি মুক্তির পরে গল্পটি তাদের টাচ করবে। কারণ, গল্পটিই এমন, এটি প্রথম যদি কাউকে টাচ করে, সেটি সন্তানের মা-বাবাদের। যে কারণে তাদের একসঙ্গে হলে নিয়ে কাছ থেকে অনুভূতি জানার চেষ্টা করেছি। এখন পর্যন্ত মা-বাবার কাছ থেকে সেরা ফিডব্যাক পেয়েছি। বাবা-মেয়ের গল্পটি দেখে তারা ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলেন। শুধু আমার বাবা-মা নন, অন্য মা-বাবাদের কাছেও গল্পটি নিজেদের হয়ে উঠেছে। তারা সিনেমাটি দেখে কেঁদেছেন। হল রিঅ্যাকশনের সেসব ভিডিও সবাই দেখেছেন। সব মিলিয়ে আমরা সফল। আমাদের জংলি সফল।’

মুক্তির পর থেকে ‘জংলি’ সিনেমার এগিয়ে যাওয়ার গ্রাফ দেখলে শুধু দর্শকের ভালোবাসায় সফল নয়, ব্যবসায়িকভাবেও সিনেমাটি যে সফল তার চিত্র বিদ্যমান। মাত্র ৮টি শো দিয়ে শুরু হওয়া সিনেমাটি ঈদের এতদিন পরও মাল্টিপ্লেক্সে ত্রিশটির মতো শো নিয়ে দাপিয়ে চলছে। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও জংলি হয়ে উঠেছে দর্শকদের সিনেমা।  

প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান টাইগার মিডিয়ার কর্ণধার জানিয়েছেন, জংলি প্রায় ছয় কোটির (গ্রস) ক্লাবে প্রবেশ করেছে। 

ঈদে মুক্তির পর থেকে ক্রমশ দর্শকপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘জংলি’। এমনকি, দেশের সিনেমাপ্রেমীদের মন জয় করে কানাডা, আমেরিকা ও ইউকে’র ৪০টি থিয়েটারে মুক্তি পেয়েছে ‘জংলি’। গত ২৫ এপ্রিল থেকে স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো-এর পরিবেশনায়, ঈদের সিনেমাগুলোর মধ্যে দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি থিয়েটারে একযোগে মুক্তি পেয়েছে এ সিনেমাটি। কানাডা ও আমেরিকার বক্স অফিসে প্রথম ৩ দিনের গ্রস ৩৫,০০০ ডলার আয় করে শুভসূচনা করেছে ‘জংলি’।

ঈদে আরও অনেক ছবি মুক্তি পেয়েছে। সেগুলোর মধ্যে জংলি বিশেষ হয়ে উঠেছে কেবল বাবা-মেয়ের গল্পের কারণে। সঙ্গে সিয়ামের নজরকাড়া অভিনয়। নৈঋতার পাখি হয়ে ওঠার দারুণ চেষ্টা। দিমিত্রি থে স্টোনহার্ট নামে এক মনীষী বলেছেন, ‘একজন বাবা বলেন না যে তিনি তোমাকে ভালোবাসেন; বরং তিনি দেখিয়ে দেন যে, তিনি তোমাকে ভালোবাসেন’ জংলি সিনেমায় সিয়াম সেটি বোঝাতে পেরেছেন। ফলে সিনেমাটি হয়ে উঠেছে সবার।

প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন– ‘পৃথিবীতে আসার সময় প্রতিটি মানুষই একটি করে আলাদিনের প্রদীপ নিয়ে আসে, কিন্তু খুব কম মানুষই সেই প্রদীপ থেকে ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগাতে পারে।’ 
সিয়াম তাঁর জীবনের সেই দৈত্যকে জাগাতে পেরেছেন। পেরেছেন বলেই হয়তো আজ তিনি সাধারণ সিয়াম থেকে নায়ক সিয়াম হয়ে উঠেছেন। সিয়ামের যাত্রাটা শুরু বেশ আগে হলেও পুরোপুরি শুরু হয় ‘দহন’ সিনেমার মাধ্যমে। রায়হান রাফী পরিচালিত এ সিনেমাটির মাধ্যমে সিয়াম নাটক থেকে পুরোপুরি চলচ্চিত্রের মানুষ হয়ে ওঠেন। সে যাত্রা এখনও চলছে। প্রথম সিনেমায় যে সিয়ামকে সবাই  দেখেছেন, জংলির সেই সিয়াম যেন আকাশ-পাতাল। তখন সিয়াম ছিলেন তরুণ, এই সিয়াম এখন বাবা। পর্দায় ও বাস্তবে দুই জায়গাতে দারুণ এক বাবা হয়ে উঠেছেন তিনি। নিজের অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়ে আগামী পরিকল্পনা কী? প্রশ্ন রাখলে নায়ক বলেন, ‘আমি নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে চাই। যারা আমার আগের কাজ দেখেছেন, তারা যেন বলেন, আগের কাজকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছি। আরেকজনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া কঠিন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ