ফুটবলার মোরসালিনের বিরুদ্ধে যৌতুকের মামলা, সমন জারি
Published: 26th, February 2025 GMT
বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড় শেখ মোরসালিনের বিরুদ্ধে যৌতুকের মামলা দায়ের করা হয়েছে।  
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মোরসালিনের স্ত্রী সেঁজুতি বিনতে সোহেল বাদী হয়ে মামলার আবেদন করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে আসামি শেখ মোরসালিনকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করেছেন।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে সেঁজুতি বিনতে সোহেলের আইনজীবী ইশফাকুর ররহমান গালিব বলেছেন, “প্রেমের সম্পর্কের পর শেখ মোরসালিনের সঙ্গে সেঁজুতির বিয়ে হয়। কিন্তু, দীর্ঘদিন ধরে আসামি বাদীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন না। আসামি বাদীর কাছে গাড়ি কেনার জন্য ২০ লাখ টাকা যৌতুকও দাবি করেছেন। বাদী ন্যায়বিচারের জন্য আদালতে এসেছেন।”
এ বিষয়ে সেঁজুতি বিনতে সোহেল বলেছেন, “প্রেমের সম্পর্কের পর মোরসালিনের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। বিয়ের পর তার আচরণে পরিবর্তন এসেছে। আমার কাছে যৌতুক চেয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সে আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখে না। আমি তার সাথে সংসার করতে চাই।”
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের ২৯ নভেম্বর শেখ মোরসালিনের সঙ্গে সেঁজুতি বিনতে সোহেলের বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই ব্যক্তিগত গাড়ি কেনার জন্য ২০ লাখ টাকা যৌতুক দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন মোরসালিন। বিয়ের পর সেঁজুতি বুঝতে পারেন— মোরসালিন পরধনলোভী এবং পরনারীতে আসক্ত। আসামি যৌতুক দাবি করে বারবার বাদীকে মানসিক চাপ দেন এবং সেঁজুতির বাবার সব সম্পত্তি বিক্রি করে নগদ টাকা মোরসালিনের হাতে তুলে দিতে বলেন। এরপর বাদী অনুনয় করে আসামিকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, তার বাবা-মার যা সাধ্য ছিল, তা বিয়ের সময় খরচ করেছেন। মাথা গোঁজার শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে দিলে তাদের পথে বসতে হবে।
মামলার অভিযোগে আরো বলা হয়, শতবার বোঝানোর চেষ্টা করা হলেও মোরসালিন সেঁজুতির ওপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেন। সেঁজুতি অন্য উপায় না দেখে বাবার বাসায় চলে যান।
পরে ২০২৪ সালের ১০ ডিসেম্বর রাত ১০টার সময় মোরসালিন শ্বশুরবাড়িতে যান। এ সময় সেঁজুতি মোরসালিনের জন্য রাতের খাবারের ব্যবস্থা করতে গেলে তিনি বলেন, “আমি খাবার খেতে আসিনি। ২০ লাখ টাকা নেওয়ার জন্য এসেছি।” তখন ঘটনাস্থলে উপস্থিত সেঁজুতির বাবা-মা জানান, ২০ লাখ টাকা দেওয়ার মতো সামর্থ তাদের নেই। তখন মোরসালিন স্ত্রী ও শ্বশুর-শাশুড়িকে গালি ও হুমকি দিতে থাকেন।
ঢাকা/মামুন/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ২০ ল খ ট ক র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন
যশোরের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহের জন্য খেজুরগাছ প্রস্তুতের (রস সংগ্রহের উপযোগী করা) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে চৌগাছা উপজেলার হায়াতপুর গ্রামে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনুর আক্তার।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, রস-গুড় সংগ্রহের জন্য গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি খেজুরগাছ প্রস্তুত করা হবে। এ বছর জেলায় অন্তত তিন লাখের বেশি গাছ প্রস্তুত করা হবে। যশোরে খেজুরের রস ও গুড়ের ১০০ কোটির বেশি টাকার বাজার রয়েছে। অন্তত ছয় হাজার কৃষক এই পেশায় যুক্ত।
যশোরের খেজুর গুড় জিআই পণ্য হলো যেভাবে
২০২২ সালে চৌগাছার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (বর্তমানে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট) ইরুফা সুলতানা খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য সংরক্ষণে খেজুর গুড়ের মেলা, গাছিদের প্রশিক্ষণ, গাছি সমাবেশ, গাছিদের সমবায় সমিতি গঠন, খেজুরগাছ রোপণ ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন। একই বছর জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির জন্য যশোরের খেজুর গুড়ের আবেদন করেন তিনি। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সেটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায়।
শতকোটি টাকার বাজার ধরতে ব্যস্ত গাছিরা
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, যশোরের প্রায় ছয় হাজার গাছি খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে খেজুরগাছ প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়েছে। গাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। খেজুরগাছ সংরক্ষণ, রোপণ, গাছিদের প্রশিক্ষণ, প্রণোদনাসহ নানাভাবে সহযোগিতার মাধ্যমে গুড় উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজার সম্প্রসারণে কাজ করছে কৃষি বিভাগ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যশোর জেলায় খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫টি। এর মধ্যে রস আহরণের উপযোগী গাছের সংখ্যা ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি। গাছ থেকে ৩ কোটি ৭১ লাখ ৩ হাজার লিটার রস ও ২ হাজার ৭৪২ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজারদর অনুযায়ী প্রতি লিটার রসের দাম ৩৫ টাকা ও গুড়ের কেজি ৩৪০ টাকা। সেই হিসাবে রস ও গুড়ের বাজার দর ৯৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রামের গাছি আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমার দাদা খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। দাদার সঙ্গে বাবাও যুক্ত ছিলেন। বাবার পেশায় আমিও যুক্ত হয়েছি। বাবা আর আমি এবার ৩০০টি খেজুরগাছ থেকে রস-গুড় তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছি। গতবছর ভালো দাম পেয়েছি। এবারও ভালো দাম পাব বলে আশা করি।’
গাছিরা জানান, কার্তিক মাস শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই খেজুরগাছ ছেঁটে রস ও গুড় তৈরির প্রস্তুতি শুরু করেন তাঁরা। শীত মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষকদের অন্যতম আয়ের উৎস এটি। এখানকার কারিগরদের দানা পাটালি তৈরির সুনাম রয়েছে। পাটালি ও ঝোলা গুড় তৈরি ছাড়াও চাষিরা শীতের ভোরে ফেরি করে কাঁচা রস বিক্রি করেন। কাঁচা রস প্রতি মাটির ভাঁড় ১৫০-২০০ টাকা, দানা গুড় ৩৫০-৪০০ টাকা আর পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকায় বিক্রি হয়।
অনলাইন প্ল্যাটফর্ম কেনারহাটের উদ্যোক্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর আমাদের কাছে ভোক্তার চাহিদা ছিল সাড়ে ছয় হাজার কেজি পাটালি গুড়। সরবরাহ করতে পেরেছিলাম দুই হাজার কেজি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতিবৃষ্টি, শীত কম হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী পাটালি গুড় সরবরাহ করতে পারিনি। এ বছর ইতিমধ্যে অর্ডার আসতে শুরু করেছে।’