প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের গানে পথচলার শুরুটা যেমন ছিল
Published: 27th, February 2025 GMT
সৃষ্টিশীল মানুষকে কি অনেকের চেয়ে আলাদা হতে হয়? বসন-ভূষণে পৃথক হতে হয়? কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী যদিও বলেছেন, ‘সৃষ্টি করার জন্য, কবিতা লেখার জন্য আলাদা রকমের মানুষ হবার দরকার নেই। লম্বা-লম্বা চুল রাখার দরকার নেই। সর্বক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকবার দরকার নেই।’ তবে কবি, লেখক ও শিল্পীদের অনেকের মধ্যে ‘সাধারণত্ব’ অনুভব করা যায়। প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের এই সাধারণত্বের কথায় স্মৃতিচারণামূলক লেখায় উল্লেখ করেছেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতুলের সঙ্গে পরিচয়ের বিবরণ দিতে গিয়ে সুদীপ লিখেছেন, ‘তিনি নন আতশ কাচের সংগীতবেত্তা। চেনা কিসিমের “ক্রাউড-পুলার”ও তিনি নন। তিনি নন শ্রোতা-কম অভিমানে মঞ্চ ছাড়ার মানুষও। তিনি অসাধারণভাবে সাধারণ।’
প্রতুল সম্পর্কে সুদীপের এই ‘অসাধারণভাবে সাধারণ’ কথার মধ্যেই গ্রথিত আছে প্রতুলের জীবনাচরণ, ভাবনা, ভাবধারা, পৃথিবী দেখার চোখ ও মানব পূজার দর্শন। ১৫ ফেব্রুয়ারি পৃথিবীকে বিদায় জানিয়েছেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়। তাঁর জন্ম ১৯৪২ সালে। অবিভক্ত বাংলার বরিশালে।
দেশভাগের পর স্কুলশিক্ষক বাবা প্রভাতচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ও গৃহবধূ মা বীণাপাণি মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে পাড়ি জমান পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার চুঁচুড়ায়। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়, ক্লাস ফোরের আগে কোনো স্কুলে তিনি পড়েননি। তারপর যখন স্কুলে যাওয়া শুরু করেন, সেই দিনগুলোও ছিল অন্য রকম। খালি পায়ে স্কুলে যেতেন। পা দুটি ধুলায় মাখামাখি হয়ে যেত। পায়ের ওপর পা ঘষে পা পরিষ্কার করে নিতেন। গায়ে একটা ইজের (ইজের হচ্ছে বোতামটোতাম না, দড়ি দিয়ে বাঁধা) দেওয়া জামা যদিও থাকত; কিন্তু নিচে গেঞ্জি থাকত না। ক্লাস সিক্স থেকে নাইন পর্যন্ত এভাবেই স্কুলে গেছেন প্রতুল। সাধারণ সারল্যময় শৈশব। এক সাক্ষাৎকারে নিজেও এ প্রসঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। বলেছেন, ‘এখন হয়তো একটা ভালো পোশাক-টোশাক পরি। কিন্তু শৈশবের সেই আবরণ এখনো আমার মধ্যে রয়েছে। খুব সহজভাবে মানুষের সঙ্গে কথা বলা, নিজের মনটাকে মানুষের সামনে একবারে খুলে দেওয়া—এই জিনিসগুলো কিন্তু এখনো আছে। সেটা হয়তো আমরা যেভাবে মানুষ হয়েছি, সেই আবহের জন্য হয়েছে।’
প্রতুল মুখোপাধ্যায়.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।