Samakal:
2025-11-03@07:52:54 GMT

অন্যরকম ‘দ্য ব্রুটালিস্ট’

Published: 27th, February 2025 GMT

অন্যরকম ‘দ্য ব্রুটালিস্ট’

স্থাপত্য কেবল ভবন নির্মাণের রূপরেখা নয়; বরং ইতিহাস, সংস্কৃতি ও মানুষের আবেগের বহিঃপ্রকাশ। পরিচালক উলফ কেজেল গুরের ‘দ্য ব্রুটালিস্ট’ ঠিক এমনই এক সিনেমা, যেখানে স্থাপত্যের আড়ালে মানব জীবনের উত্থান-পতনের গল্প দেখানো হয়েছে। এ সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্র হলোকাস্ট থেকে বেঁচে ফেরা এক প্রতিভাবান স্থপতি লাসজলো টোথ [অ্যাড্রিয়েন ব্রডি] ও তাঁর স্ত্রী এরজসেবেট [ফেলিসিটি জোন্স]। তাদের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে প্রেম, স্বপ্ন এবং এক রহস্যময় শিল্পপতির প্রভাব। তাদের যাত্রা শুরু হয় ইউরোপ থেকে আমেরিকায়। 

শুরু হয় নতুন জীবনের স্বপ্ন। কিন্তু সেই স্বপ্ন ধীরে ধীরে এক জটিল বাস্তবতায় রূপ নেয়। সিনেমার গল্পে দেখা যায় লাসজলো একজন হাঙ্গেরীয়-ইহুদি স্থপতি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তাঁর স্ত্রী ও ভাগনির কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। যুদ্ধোত্তর সময়ে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন গ্রহণ করেন এবং তাঁর চাচাতো ভাই আটিলার কাছে আশ্রয় নেন। পেশাগতভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগেই তিনি এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হন।

ধনী শিল্পপতি হ্যারিসন লি ভ্যান বুরেনের সঙ্গে তাঁর দেখা হয় ফিলাডেলফিয়ায়। যেখানে তিনি একটি লাইব্রেরি সংস্কার প্রকল্পে যুক্ত। শুরুতে হ্যারিসন তাঁর কাজের প্রতি তেমন আগ্রহী ছিলেন না, কিন্তু পরবর্তী সময়ে লাসজলোকে আমেরিকান স্থাপত্য জগতের অংশ করে তোলেন। হ্যারিসনের সহযোগিতায় লাসজলো তাঁর স্বপ্নের আধুনিক স্থাপত্য নির্মাণের সুযোগ পান। কিন্তু এ সুযোগের পেছনে ছিল এক ভয়ঙ্কর বাস্তবতা, যা ধীরে ধীরে তাঁর জীবনকে এক দুঃস্বপ্নে পরিণত করে।

‘দ্য ব্রুটালিস্ট’ চলচ্চিত্রটি ইতিহাস, স্থাপত্য ও মানবিক সম্পর্কের এক অপূর্ব মেলবন্ধন। সিনেমাটির সিনেমাটোগ্রাফি দর্শকদের ১৯৪০ থেকে ১৯৮০-এর আমেরিকায় নিয়ে যায়, যেখানে অভিবাসীদের স্বপ্ন ও সংগ্রামের বাস্তব চিত্র ফুটে ওঠে। চলচ্চিত্রের প্রথমার্ধে, লাসজলো ও তাঁর পরিবারের পুনর্মিলনের গল্প দেখানো হয়, যেখানে এরজসেবেট শারীরিকভাবে দুর্বল ও হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী, আর তাদের ভাগনি সোফিয়া যুদ্ধের ট্রমায় নীরব।

এখানেই ধীরে ধীরে দর্শক বুঝতে পারেন, লাসজলো ও তাঁর পরিবার শুধু শারীরিক নয়, মানসিকভাবেও এক অসম লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এ স্বপ্ন ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ে, যখন লাসজলো বুঝতে পারেন যে, হ্যারিসন শুধু একজন পৃষ্ঠপোষক নন; বরং তাঁর জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করতে চান। লাসজলো যখন হ্যারিসনের ক্ষমতার সীমাহীন প্রভাব বুঝতে পারেন, তখন তিনি নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন না।

একদিকে হ্যারিসনের সঙ্গে তার নৈতিক দ্বন্দ্ব, অন্যদিকে পরিবারের প্রতি তার দায়িত্ববোধ তাকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেয়। তার স্বপ্নের নির্মাণ প্রকল্পটি ধ্বংসের পথে হাঁটে এবং শেষ পর্যন্ত তাঁর ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবন সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ১৯৮০ সালে, এরজসেবেটের মৃত্যুর পর লাসজলো স্থাপত্য জগতে তাঁর অবদানের জন্য স্বীকৃতি পান। সোফিয়া তখন তাঁর স্মৃতিচারণে বলেন, ‘গন্তব্য নয়; বরং যাত্রাই গুরুত্বপূর্ণ।’ এ বক্তব্য পুরো সিনেমার সারসংক্ষেপ বহন করে।

‘দ্য ব্রুটালিস্ট’ শুধু স্থাপত্য কিংবা অভিবাসনের গল্প নয়; বরং এটি আধুনিক সমাজের ক্ষমতার দখলদারিত্ব, সম্পর্কের জটিলতা এবং স্বপ্নভঙ্গের গল্প। পরিচালক অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে দেখিয়েছেন, কীভাবে যুদ্ধপরবর্তী অভিবাসী জীবন, ক্ষমতার দ্বন্দ্ব এবং মানবিক সম্পর্কের টানাপোড়েন একজন শিল্পীর মনস্তাত্ত্বিক গঠনে প্রভাব ফেলে।

লাসজলো টোথ চরিত্রটি শুধু একজন স্থপতির প্রতিচ্ছবি নয়, বরং সে যুদ্ধোত্তর পৃথিবীর এক নিঃসঙ্গ যোদ্ধা, যে নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য সমাজের বিভিন্ন শক্তির সঙ্গে লড়াই করে। কিন্তু বাস্তবতা সবসময় স্বপ্নের অনুকূলে চলে না; বরং তা ধীরে ধীরে একটি কঠিন বাস্তবতায় রূপ নেয়।

‘দ্য ব্রুটালিস্ট’ এক বিস্ময়কর সিনেমা, যা দর্শকদের শুধু একটি গল্প নয়; বরং একটি সময়ের ছবি দেখায়। এটি এমন এক চলচ্চিত্র যা স্থাপত্যের নান্দনিক সৌন্দর্যের মাধ্যমে মানব জীবনের সবচেয়ে কঠিন বাস্তবতাকে তুলে ধরে। আধুনিক সমাজের আলো-ছায়া, ক্ষমতার লড়াই এবং একজন শিল্পীর স্বপ্নভঙ্গের গল্পে এটি এক অনবদ্য সংযোজন। যারা ইতিহাস, স্থাপত্য ও মনস্তাত্ত্বিক সিনেমার প্রেমী, তাদের জন্য ‘দ্য ব্রুটালিস্ট’ এক দারুণ সিনেমা। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব স তবত ক ষমত র জ বন র ল সজল

এছাড়াও পড়ুন:

দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা

সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।

উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’

তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’

ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।

ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’

পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।

গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।

তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।

জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।

দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ব্যালটে মামদানি, অদৃশ্য ‘প্রার্থী’ ট্রাম্প
  • দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
  • ‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
  • যদি ঠিক পথে থাকো, সময় তোমার পক্ষে কাজ করবে: এফ আর খান
  • বিবাহবিচ্ছেদ ও খোরপোষ নিয়ে ক্ষুদ্ধ মাহি
  • ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স