চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে আওয়ামী লীগের এক নেতার মেয়ের বিয়েতে থানার ওসির উপস্থিতি ঘিরে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে ওসির এমন সখ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীরা।

গত ৬ ফেব্রুয়ারি উপজেলার চরলক্ষ্যা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা হোসেন তালুকদারের মেয়ের বিয়ের গায়ে হলুদ অনুষ্ঠিত হয় উপজেলার সৈন্যারটেকের একটি কনভেনশন সেন্টারে। বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন কর্ণফুলী থানার ওসি মোহাম্মদ শরীফ। প্রতিবেদকের হাতে আসা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ নেতা হোসেনসহ কর্ণফুলীর থানার ওসি শরীফ স্টেজে ছবি তুলছেন। বিষয়টি জানাজানি হলে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

হোসেন তালুকদার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমাতে শুরু থেকে রাজপথে সক্রিয় ছিলেন বলে অভিযোগ আছে। সমকাল প্রতিবেদকের হাতে আসা ছবিতে দেখা যায়, গত ৪ আগস্ট উপজেলার মইজ্জারটেকে ছাত্র-জনতাকে রুখতে কর্ণফুলী আওয়ামী লীগের বিশেষ টিমের কঠোর অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন এ নেতা।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী শফিকুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের এ নেতা আন্দোলন চলাকালে ছাত্রদের বিরুদ্ধে মাঠে দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁর পরিবারের বিয়েতে গিয়ে ছবি তোলা মানে অভ্যুত্থানের সঙ্গে বেইমানি করা।

উপজেলা বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার এতদিন দেশে দুঃশাসন কায়েম করে মানুষকে সীমাহীন যন্ত্রণার মধ্যে রেখেছিল। আন্দোলন চলাকালে দেশের মানুষের ওপর গুলি ছুড়েছে। ওই সংগঠনের নেতার অনুষ্ঠানে কীভাবে একজন ওসি গিয়ে ছবি তোলেন? তৎকালীন আওয়ামী লীগের ক্ষমতার অপব্যবহার করে পুলিশ দানবে পরিণত হয়েছিল, সেই পিছুটান কি এখনও রয়ে গেছে?

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি মোহাম্মদ শরীফ বলেন, ‘বিএনপি নেতা নুর উদ্দীনের দাওয়াতে ওই বিয়েতে গিয়েছিলাম। এটা যে আওয়ামী লীগ নেতার মেয়ের বিয়ে, তা জানতাম না। আমি কয়েক মিনিট ছিলাম। ভাতও খাইনি। ছবি তুলে চলে এসেছি।’ তবে তিনি প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, ‘একজন মানুষ কি কোনো বিয়েতে যেতে পারে না?’

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বাকলিয়া থানার সাবেক ছাত্রদল সভাপতি নুর উদ্দীন বলেন, ‘হোসেন তালুকদার আমার আত্মীয়। আমার অনুরোধেই ওসি সেখানে গিয়েছিলেন।’ তবে খোঁজ নিয়ে বিএনপি নেতার সঙ্গে আওয়ামী লীগের এ নেতার সম্পর্কের কোনো সূত্র পাওয়া যায়নি।

অভিযোগ আছে, ওসি মোহাম্মদ শরীফ কর্ণফুলীতে যোগদানের পর থেকে অভিযান করে ‘চুনোপুঁটি’ আটক করে কৃতিত্ব দেখালেও বড় নেতাকর্মীর সঙ্গে গোপন সম্পর্ক বজায় রাখছেন। নানা সময় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। চলতি মাসে উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের এক ব্যবসায়ী এবং এক ইউপি সদস্যকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়ার পথে গাড়ি থেকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপজ ল র আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতি মেয়ে

ফরিদপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর কমিটি গঠনের দায়িত্ব পেয়েছেন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহ্মুদা বেগমের মেয়ে সৈয়দা নীলিমা দোলা।গত মঙ্গলবার এনসিপির সদস্যসচিব আক্তার হোসেন ও মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক চিঠি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ওই চিঠিতে ফরিদপুর অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক করা হয়েছে মো. আব্দিুর রহমানকে এবং সংগঠক করা হয়েছে মো. রাকিব হোসেনকে।
 
এছাড়া ফরিদপুর অঞ্চলের পাঁচটি জেলা, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী জেলার দু’জন করে ব্যক্তিকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।  

ফরিদপুর জেলার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে যে দু’জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের একজন হলেন সৈয়দা নীলিমা দোলা। তিনি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহ্মুদা বেগমের মেয়ে এবং জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোহাম্মদ নাসিরের ভাগনি। দোলার বাবা সৈয়দ গোলাম দস্তগীর পেশায় ব্যবসায়ী।

সৈয়দা নীলিমা ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগীত বিভাগে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি কিছুদিন একটি মোবাইল ফোন কোম্পানিতে চাকরি করেন। বর্তমানে ‘সিনে কার্টেল’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী।
 
এ বিষয়ে সৈয়দা নীলিমা দোলা বলেন, ‘আমার পরিবারের সদস্যদের আওয়ামী রাজনীতি করা সংক্রান্ত কিছু পোস্ট আপনাদের সামনে আসতে পারে। আমি নিজে এর একটা ব্যাখ্যা রাজপথের সহযোদ্ধাদের দিয়ে রাখতে চাই। আমি ১০ বছর ধরে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন করছি। নো মেট্রো অন ডিইউ মুভমেন্ট, রামপাল বিরোধী আন্দোলন, ডিএসএ বাতিলের আন্দোলন, সুফিয়া কামাল হলকে ছাত্রলীগ মুক্ত করাসহ অন্যান্য সকল আন্দোলনে আমি পরিচিত মুখ। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমার লেখালেখিও পুরনো। ২০১২ সালে পরিবার ছাড়ার পর রাজপথই আমার আসল পরিবার। জুলাইয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অন্যতম মামলা তাহির জামান প্রিয় হত্যা মামলার একজন প্রত্যক্ষদর্শী আমি।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরাসরি ছাত্রলীগ করে অনেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন। আমি কখনও ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না, তাই আমার নাগরিক কমিটির সদস্য হতে বাধা কোথায়? এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা জেনে-বুঝে এবং আমি ‘লিটমাস’ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরই আমাকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য করা হয়েছে।’ 

আওয়ামী লীগ নেত্রীর মেয়ে দায়িত্ব পেয়েছেন জেলার এনসিপি কমিটি গঠনে-এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব সোহেল রানা বলেন, ‘তার (সৈয়দা নীলিমা) পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড আওয়ামী লীগ। আমরা দেখেছি, গত জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে তার মামা গোলাম নাসির কিভাবে আমাদের ওপর নির্বিচার গুলি ছুড়েছিল। তার মায়ের কর্মকাণ্ডও আমাদের অজানা নয়।’ 

সৈয়দা নীলিমা দোলার সঙ্গে আমাদের পরিচয় পর্যন্ত নেই মন্তব্য করে সোহেল রানা বলেন, ‘আসলে দায়িত্ব দেওয়ার আগে সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে নেওয়া হলে ভাল হতো। যাচাই-বাছাই করা হলে এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নবীজির (সা.) অদ্ভুত দোয়া
  • অর্থ আত্মসাত: খুলনায় নারী ব্যাংক কর্মকর্তা গ্রেপ্তার
  • বগুড়ায় সারজিসের উপস্থিতিতে মারামারির ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ৪ নেতা হাসপাতালে
  • অমিতাভের চিরকুট কিংবা ফ্যাশন নিয়ে রাধিকার ১০ প্রশ্নের জবাব, ১০ ছবি
  • মাঠ নিয়ে শ্রাবণের আফসোস
  • একজন চা শ্রমিকের দিনে আয় ১৭৮ টাকা
  • বড় বন্দরে ভারী কাজ করেও চলে না সংসার 
  • নাটোরে ছুরিকাঘাতে প্রাণ গেল একজনের
  • ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতির মেয়ে
  • ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতি মেয়ে