জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টাকে আমন্ত্রণ
Published: 27th, February 2025 GMT
জাতীয় নাগরিক কমিটির (এনসিপি) আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেন নতুন দলের পক্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়দের মধ্যে আব্দুল হান্নান মাসুদ, নুসরাত তাবাসসুম ও সাইফ মোস্তাফিজ।
প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টাদের পাশাপাশি বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ অভ্যুত্থানে যুক্ত রাজনৈতিক দলগুলোকেও আমন্ত্রণ জানাবে নতুন দলটি।
আগামীকাল শুক্রবার বিকেল ৩টায় রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় নাগরিক পার্টি নামে নতুন এ রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করবে, যা গঠনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন গণঅভ্যুত্থানের তরুণ নেতারা।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে নতুন এ দল গঠন করা হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টাকে আমন্ত্রণ জানানোর পর যমুনার বাইরে এসে হান্নান মাসুদ সাংবাদিকদের বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে আমাদের দাওয়াত গ্রহণ করেছেন এবং শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সব রাজনৈতিক দল মিলেমিশেই আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবে। সবাই একসাথে যেন দেশের জন্য কাজ করতে পারে তিনি সেই পরিবেশ উপহার দেবেন।
সব রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ করার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা আজকে দুপুরের পর থেকেই দাওয়াতের প্রক্রিয়া শুরু করেছি এবং এটা মাত্র তিন দিনের প্রস্তুতিতে আমরা শুরু করেছি। আমাদের প্রস্তুতির কিছুটা অভাব রয়েছে, যার কারণে আমরা সবাইকে নিয়ে সব জায়গায় যেতে পারছি না। কাউকে মেইলের মাধ্যমে, কাউকে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে কাউকে সরাসরি গিয়ে আমরা দাওয়াত করছি।
বিএনপির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের কাছে চিঠি পৌঁছানোর পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন ও গণতন্ত্র মঞ্চ এসব দলকে সরাসরি চিঠি পৌঁছানোর চেষ্টা করার কথা বলেন তিনি। বলেন, আমাদের বিভিন্ন টিম বিভিন্ন জায়গায় দাওয়াত নিয়ে কাজ করছে।
গণ আন্দোলনে নিহতদের পরিবারের সদস্য ও আহতদেরও অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ করার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশের সব শ্রেণিপেশার মানুষের উপস্থিতি চাচ্ছি। আমরা যেহেতু জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী জনআকাঙ্খাকে ধারণ করে একটি পলিটিক্যাল পার্টি করতে চাচ্ছি, সেই জায়গা থেকে আমরা শহীদ পরিবারকে দাওয়াত করেছি, আহতদেরকে দাওয়াত করেছি।
একই সঙ্গে সুশীল সমাজ, বিদেশি বন্ধু ও কূটনীতিকদের নিমন্ত্রণ করার কথা বলেন হান্নান মাসুদ।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে মামলা মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ মির্জা ফখরুলের
গণঅভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে মামলা মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিকালে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নে দলীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গণসংযোগের সময় দেওয়া বক্তব্যে এই আহ্বান রাখেন তিনি।
শেখ হাসিনার শাসন আমলে বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল। গুম, খুন, ভিত্তিহীন মামলা, লুটপাট, টাকা পাচার, বাকস্বাধীনতা হরণ ও ভোট চুরিসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি।
আরো পড়ুন:
জুলাই গণহত্যা: শেখ হাসিনাসহ ৪০৮ জনের বিরুদ্ধে আরেক মামলা
হাসিনা-রেহানাসহ ২২ জনের গ্রেপ্তার-সংক্রান্ত প্রতিবেদন ১২ মে
শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমাদের নেতাকর্মীদের গুম করা হয়েছে। লাখ লাখ নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে, তাদের ঘরে থাকতে দেননি আপনি। আমরা তো কোথাও পালিয়ে যাইনি। আদালতে মিথ্যা মামলা আইনের মাধ্যমে ফেইস (মোকাবিলা) করেছি। উকিল ধরে জামিন নিয়েছি। আপনি (শেখ হাসিনা) পালিয়ে আছেন কেন? আপনিও মামলা লড়েন। আপনি দেশে এসে দাড়ান না দেখি।”
জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা অনেকে মনে করেন শেখ হাসিনা আবারো দেশে ফিরে আসবেন। তিনি তো ১৫ বছর দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার বাবা শেখ মুজিবুর রহমান একজন বিখ্যাত মানুষ ছিলেন। তার তো দেশ থেকে পালানোর কথা ছিল না। তিনি পালালেন কেন? কারণ তিনি একজন ডাইনি ছিলেন। জনগণের ওপর এমন নির্যাতন করেছেন যে, তিনি পালাতে বাধ্য হয়েছেন। জনগণ যদি সেদিন তাকে পেত, তাহলে ছিঁড়ে খেত।”
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, “হাসিনা দেশে ফিরে রাজনীতি করলে আমাদের কিছু করতে হবে না, জনগণই তাকে দেখে নেবে।”
আওয়ামী লীগের শাসনামলের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “বিএনপির নেতাকর্মীরা যেন আওয়ামী লীগের মতো অন্যায় না করে; এতে মানুষ ভালোবাসবে না। দলের কোনো নেতাকর্মীরা অন্যায় করলে যেন জেলার নেতারা তাদের শক্ত হাতে দমন করেন; তারা যেন অন্যায়কারীদের পুলিশের হাতে তুলে দেন। তাই অপকর্ম বন্ধ করুন, না হলে আওয়ামী লীগের মতো অবস্থা হবে।”
ত্রোদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দৃষ্টি রেখে জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। মির্জা ফখরুলসহ দলটির শীর্ষ নেতারা সভা-সমাবেশ করছেন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা, না রাখা নিয়ে ব্যাপক মতপার্থক্য রয়েছে; সেই সঙ্গে আইনি ঝক্কিও সামনে আসছে।
গণহত্যার দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একাধিক মামলায় আসামি করা হয়েছে শেখ হাসিনাকে। এ ছাড়া কয়েক শত ফৌজদারি মামলায় তিনি আসামি। অনেক মামলায় তাকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। তবে ভারতের আশ্রয়ে থাকা শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানোর কোনো নিশ্চয়তা এখনো তৈরি হয়নি।
গণঅভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ছোট বোন রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। সেদেশে উচ্চনিরাপত্তা শৃঙ্খলে বসবাস করছেন বলে আন্তর্জাতিক সাংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়ে থাকে। সেখান থেকে দেশে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে অনলাইনে তার কথোপকথনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যা নিয়ে অস্বস্তির কথা ভারতকে জানিয়ে রেখে অন্তর্বর্তী সরকার।
ঢাকা/মঈনুদ্দীন/মাসুদ