বেক্সিমকো শিল্পপার্কের ১৪টি লে–অফ প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধে ৫২৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা দিচ্ছে সরকার। পাওনা পরিশোধে কোম্পানিটিকে ঋণ হিসেবে এই অর্থ দেওয়া হচ্ছে, যা পরে বেক্সিমকো গ্রুপকে পরিশোধ করতে হবে। পাওনাদারদের মধ্যে শ্রমিক রয়েছেন ৩১ হাজার ৬৭৯ জন, আর কর্মচারী ১ হাজার ৫৬৫ জন। আগামী ৯ মার্চ থেকে এই পাওনা পরিশোধ শুরু হবে। রমজানের মাঝামাঝি পর্যন্ত ধাপে ধাপে এসব পাওনা পরিশোধ করা হবে।

সচিবালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বেক্সিমকো শিল্পপার্কের প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা–সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক শেষে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.

) এম সাখাওয়াত হোসেন এসব তথ্য জানান।

এ সময় আরও জানানো হয়, আজ শুক্রবার থেকে বেক্সিমকো শিল্পপার্কের ১৪টি প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করা হবে। বন্ধ এসব প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ দেবে ৩২৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। বাকি ২০০ কোটি টাকা নেওয়া হবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কেন্দ্রীয় তহবিল থেকে। ৯ মার্চ থেকে বেক্সিমকো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

বেক্সিমকো শিল্পপার্কের প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও সাংবাদিকদের জানানো হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী ছয় সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটির নেতৃত্ব দেবেন। বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় থেকে একজন করে সদস্য থাকবেন কমিটিতে। আর থাকবেন বেক্সিমকো লিমিটেডে নিযুক্ত রিসিভার। কমিটির সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান।

বেক্সিমকো শিল্পপার্কের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ২০০৮-২০২৪ সময়ে জনতা ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ দেওয়া হয়েছে। অনিয়মের ভিত্তিতে এসব ঋণ দেওয়ার জন্য ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসইসির কর্মকর্তাদেরও দায় আছে। এসব কথা উল্লেখ করে শ্রম উপদেষ্টা জানান, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মাধ্যমে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আর ঋণ দেওয়ার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা যেন দেশের বাইরে যেতে না পারেন, সে জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

গত ৫ আগস্ট সরকার বদলের পর বেক্সিমকো গ্রুপের অন্যতম কর্ণধার ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্পবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান গত ১৩ আগস্ট থেকে কারাগারে রয়েছেন। ২৯ আগস্ট সালমান এফ রহমান, তাঁর ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান, পুত্রবধূ শাজরেহ রহমানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শুরুতে বেক্সিমকো গ্রুপের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রি করে শ্রমিকদের পাওনা মেটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা কমিটি। পরে শেয়ার বিক্রিতে জটিলতা দেখা দেওয়ায় সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের সিদ্ধান্ত হয়।

শ্রম উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা কোনো শ্রমিকের বিরুদ্ধে না। কোনো শ্রমিকের চাকরি চলে যাক, তা আমরা চাই না। কারণ, তাঁদেরও পরিবার আছে।’ বেক্সিমকোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এমন কিছু করবেন না, যাতে সরকারকে কঠোর হতে হয়—এমন হুঁশিয়ারও করেন সাখাওয়াত হোসেন।

* শ্রমিক ৩১ হাজার ৬৭৯ জন, কর্মচারী ১,৫৬৫ জন।
* অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ দেবে ৩২৫ কোটি টাকা।
* শ্রম মন্ত্রণালয় দেবে ২০০ কোটি টাকা।
* ঋণ হিসেবে দেওয়া হচ্ছে এই অর্থ।

এদিকে উপদেষ্টা কমিটির সিদ্ধান্তের আগে গত বুধবার বেক্সিমকো গ্রুপের পক্ষ থেকে ১৪টি কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কাজ না থাকায় এসব কোম্পানি ১৬ ডিসেম্বর থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত লে-অফ ঘোষণা করা হয়েছিল। এরপরও কাজের কোনো সংস্থান না হওয়ায় আজ শুক্রবার থেকে কারখানাগুলোর কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সেই সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শ্রম আইন মেনে ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

প্রসঙ্গ সেনাপ্রধানের বক্তব্য

দেশ ও জাতির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করে গত মঙ্গলবার বক্তব্য দেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। রাজধানীর রাওয়া কনভেনশন হলে জাতীয় শহীদ সেনা দিবস-২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সেদিন সেনাপ্রধান যে বক্তব্য দেন, তা নিয়ে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে শ্রম উপদেষ্টার বক্তব্য জানতে চান সাংবাদিকেরা। জবাবে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘সেনাপ্রধান আমার জন্য অনেক উঁচু স্তরের লোক। তিনি একটি বাহিনী চালাচ্ছেন। কোনো কথা তিনি না বুঝে বলেননি। এর ইন্টারপ্রিটেশন (ব্যাখ্যা) কী, আপনারা জানেন।’

সেনাপ্রধান প্রসঙ্গে শ্রম উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি যতটুকু চিনি, তিনি ভেরি স্ট্রেট ফরওয়ার্ড ম্যান (সোজাসাপ্টা কথা বলার লোক)। ভেরি ভেরি স্ট্রেট ফরওয়ার্ড ম্যান (খুবই সোজাসাপ্টা কথা বলার লোক)। যা বলার মানুষের মুখের ওপর বলেন, বলার মতো লোক। সো আই হ্যাভ লট অব রেসপেক্ট ফর হিম (তাঁর প্রতি আমার অনেক শ্রদ্ধা)। উনি কী বলেছেন, না বলেছেন, সেটার ব্যাখ্যা আমি দিতে পারব না, উনিই দিতে পারবেন।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস থ পর শ ধ কম ট র র কর ম রহম ন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমি কি এখনো স্বপ্ন দেখছি’—লিখলেন পলাশ মুচ্ছল

বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে ভারতীয় তারকা ক্রিকেটার স্মৃতি মান্ধানার সঙ্গে তোলা একটি ছবি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করে বলিউডের সংগীত পরিচালক ও নির্মাতা পলাশ মুচ্ছল লিখেছেন, ‘আমি কি এখনো স্বপ্ন দেখছি?’

স্মৃতির সঙ্গে পলাশের পাঁচ বছরের প্রেম রয়েছে, এর মধ্যে বিয়ের ঘোষণাও দিয়েছেন পলাশ। নভেম্বরেই বিয়ে হওয়ার কথা রয়েছে।

এই জুটির ছবিটি তিন ঘণ্টার ব্যবধানে ছড়িয়ে পড়েছে, প্রায় দেড় লাখ ‘রিঅ্যাক্ট’ পড়েছে। সাড়ে ৭০০ মন্তব্য জমা পড়েছে। একজন লিখেছেন, ‘দুজনকে দারুণ লাগছে।’

ঘণ্টা পাঁচেক আগে ট্রফি হাতে তোলা আরেকটি ছবি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছেন পলাশ

সম্পর্কিত নিবন্ধ