এভাবে বোধ হয় আর পারা যায় না। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সম্ভাবনা তো আগেই বাতিল; প্রিমিয়ার লিগেও যে অবস্থায় দাঁড়িয়ে, তাতে পরের মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের টিকিট পাওয়াই এখন চ্যালেঞ্জের। ম্যানসিটিতে তাঁর নিজের ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত। তাই এবারে না হোক, অন্তত পরবর্তী মৌসুমের জন্য একটা দল গুছিয়ে রেখে যেতে চান পেপ গার্দিওলা। আর ক্লাব কর্তৃপক্ষও জানে তিনি এই ফুটবল বিশ্বের একজন পাকা জহুরি। তাই হীরা বাছতে তাঁকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
গার্দিওলাও তাঁর জাল বিছিয়ে ফেলেছেন লাতিন থেকে এশিয়া হয়ে ইউরোপে। সেই জালেই তিনি খুঁজে পেয়েছেন ব্রাজিলের ভেটর রেইস, উজবেকিস্তানের আব্দুকরদির খুশানভ, স্পেনের নিকো গঞ্জালেস, জাপানের আয়মু উয়ামা ও জ্যামাইকার রিকো লুইসকে। গার্দিওলার বিশ্বাস, ম্যানসিটির পরিচর্যায় এরাই একদিন ফুল হয়ে ফুটবে। আর সিটির এই ইয়াং মিশনে গার্দিওলার গুরুকুলের সর্বশেষ সংযোজন হলেন আর্জেন্টিনার বছর উনিশের অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার ক্লদিও এচেভেরি। যাঁকে কিনা এরই মধ্যে আর্জেন্টাইনরা ‘নেক্সট মেসি’ বলে ডাকতে শুরু করেছেন।
লাতিন ফুটবলের বাজারে এখন তিনিই নাকি সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় খেলোয়াড়। অবশ্য এচেভেরির সঙ্গে ম্যানসিটির চুক্তি হয়েছিল গত বছরের জানুয়ারিতেই। তবে তারকাঠাসা সিটি তখনই তাঁকে মাঠে নামায়নি। আর্জেন্টিনার ক্লাব রিভার প্লেট আগ্রহ দেখানোয় সেখানে ১.
যা অবস্থা, তাতে কাল এফএ কাপের ম্যাচে প্লেমাউথের বিপক্ষেই এচেভেরিকে মাঠে নামিয়ে দিতে পারেন গার্দিওলা। তা ছাড়া তিনি নিজেও তৈরি মাঠে নামার জন্য। ‘আমি বলে বোঝাতে পারব না, অবশেষে ম্যানচেস্টারে এসে কতটা ভালো লাগছে আমার। ফুটবল আমার জীবন, আমার স্বপ্ন ছিল ইউরোপের সেরা দলগুলোর একটিতে খেলা। স্বপ্ন পূরণের খুব কাছাকাছি আমি। অপেক্ষায় আছি, সিটির হয়ে মাঠে নামার। ম্যানসিটি বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাব। এটা শুধু ট্রফি জেতার জন্যই নয়, তাদের সুন্দর ফুটবল উপস্থাপনার জন্যও। তারা বিশ্বের কাছে উদাহরণ তৈরি করে, কীভাবে মাঠে সুন্দর ফুটবল খেলতে হয়। এখন আমার মূল ফোকাস ট্রেনিংয়ে। সেখানে কঠোর পরিশ্রম করে আমাকে প্রমাণ করতে হবে, আমি যেন কোচের আস্থা অর্জন করে মূল দলে খেলতে পারি।’
দলের এই নেক্সট মেসির আগমনে আশাবাদী সিটির ফুটবল ডিরেক্টর জিকি ব্রেগিস্টেইনও। ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লাতিন আমেরিকার সবচেয়ে প্রতিভাবান খেলোয়াড় এই ক্লদিও। তার মধ্যে প্রকৃতি প্রদত্ত সব ধরনের ট্যালেন্ট রয়েছে। তার টাচ, টেকনিক, ড্রিবলিং সামর্থ্য, গোলের জন্য ক্ষুধা– সবই রয়েছে। এখন আমাদের দায়িত্ব তাঁকে পরিচর্যা করে বিশ্বমানের খেলোয়াড় হিসেবে গড়ে তোলা। সে যদি কঠোর পরিশ্রম করতে পারে, আর কোচের কথা শুনে চলে, তাহলে আমার কোনো সন্দেহ থাকবে না সে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের একজন হবে।’
২০২৮ সাল পর্যন্ত নতুন এই মেসির সঙ্গে চুক্তি ক্লাবটির। গত মাসে অনূর্ধ্ব-২০ লাতিন চ্যাম্পিয়নশিপে আর্জেন্টিনার হয়ে দারুণ খেলেছেন তিনি। শেষ দুই মৌসুমে মোট ৪৮ ম্যাচে ৪ গোল আর ৮টি অ্যাসিস্ট করেছে। তবে এই পরিসংখ্যান দিয়ে নেক্সট মেসিকে যে মাপা যাবে না, তা সিটির ওই ফুটবল পরিচালক বলে দিয়েছেন। তাঁকে তারা গার্দিওলার যত্নে সিটির রঙে রাঙাতে চায়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আর জ ন ট ন আর জ ন ট র জন য ফ টবল
এছাড়াও পড়ুন:
প্রথম আলোর সাংবাদিককে বৈষম্যবিরোধী নেতার হুমকি, থানায় জিডি
প্রথম আলোর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেনকে ফেসবুকে হুমকি দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মুখ্য সংগঠক মোত্তাসিন বিশ্বাস। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এক ফেসবুক পোস্টে এ হুমকি দেন তিনি।
এ ঘটনায় গতকাল রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন আনোয়ার হোসেন।
ফেসবুক পোস্টে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আনোয়ার হোসেনের দুটি ছবি লাল দাগ দিয়ে ক্রস চিহ্ন দেন মোত্তাসিন। ক্যাপশনে তিনি আনোয়ার হোসেনের উদ্দেশে লিখেছেন, ‘....সত্য লিখুন, না হলে আপনিও ছাড় পাবেন না। ইনকিলাব জিন্দাবাদ।’
মোত্তাসিন বিশ্বাসের পোস্টের পর মন্তব্যের ঘরে আনোয়ার হোসেনকে একাধিক আইডি থেকে মারধরের হুমকি দেওয়া হয়েছে। তবে আজ বুধবার বেলা ৩টা ১৬ মিনিটে মোত্তাসিনের আইডি থেকে পোস্টটি সরিয়ে নেওয়া হয়। ঘণ্টাখানেক পর পোস্টটি তাঁর ওয়ালে আবার দেখা যায়। এ হুমকির প্রতিবাদ জানিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সাংবাদিকদের সংগঠনগুলোর সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাংবাদিক সমাজ’।
ফেসবুক পোস্টের বিষয়ে জানতে চাইলে মোত্তাসিন বিশ্বাস আজ বেলা সাড়ে তিনটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ফেসবুক পোস্টে হলুদ কথাটা লেখা ঠিক হয়নি। এটি গত শনিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের শহীদ সাটু অডিটরিয়ামে জেলা পুলিশ আয়োজিত সুধী সমাবেশে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বক্তব্য দেওয়ার সময় বাধা দিয়ে থামিয়ে দেন জামায়াতে ইসলামীর একজন নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য। এ নিয়ে প্রথম আলোয় ‘পুলিশের সুধীসমাবেশে বীর মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্যে জামায়াত নেতার বাধা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ খবরের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েই এমন পোস্ট করেছেন বলে জানিয়েছেন মোত্তাসিন।
তাৎক্ষণিকভাবে লিখে ফেলেছিলেন, পরে মুছে দিয়েছেন। আনোয়ার হোসেনের করা কোন সংবাদটির বিষয়ে পোস্ট করেছেন, জানতে চাইলে তিনি মুক্তিযোদ্ধাকে বাধা দেওয়ার সংবাদটির কথা জানান।
মোত্তাসিন বিশ্বাস আরও বলেন, প্রথম আলোর চাঁপাইনবাবগঞ্জের নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেন চব্বিশের আন্দোলনে তাঁদের সঙ্গেই ছিলেন। কিন্তু সংবাদটি এভাবে কেন লিখেছেন, তা জানার জন্য তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি তাঁদের এড়িয়ে গেছেন। সে জন্যই তিনি ফেসবুকে লিখেছেন।
আনোয়ার হোসেন জিডিতে উল্লেখ করেছেন, স্ট্যাটাসে তাঁর দুটি ছবি ক্রস চিহ্ন দিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে। ওই পোস্টে মোত্তাসিনের অনুসারীসহ আরও অনেকে খারাপ মন্তব্য করে তাঁকে হুমকি দিয়েছেন। জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হওয়ায় জিডি করার কথা জানান তিনি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাতে এ ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন। এটি একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে তদন্ত করতে দিয়েছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক আবদুর রাহিম বলেন, এই পোস্ট দেওয়ার পর রাতে তাঁরা এটি নিয়ে সভা করেছেন। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, পোস্টটি ডিলিট করা হবে।
আরও পড়ুনপুলিশের সুধীসমাবেশে বীর মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্যে জামায়াত নেতার বাধা২৭ এপ্রিল ২০২৫সাংবাদিক সমাজের নিন্দা-প্রতিবাদআনোয়ার হোসেনকে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় জরুরি সভা করে ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাংবাদিক সমাজ। বিষয়টি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের লিখিতভাবে অবহিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে গতকাল মঙ্গলবারের সভায়। অবহিত করার পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নিলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যাবতীয় সংবাদ বর্জন করা হবে বলেও সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (সিটিজেএ) সভাপতি রফিকুল আলম। উপস্থিত ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রেসক্লাব, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রেসক্লাব, সিটি প্রেসক্লাব, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও সিটিজেএর নেতা ও সদস্যরা।
সভার পর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘পরিবর্তিত বাংলাদেশে একজন পেশাদার সাংবাদিককে নিয়ে আপত্তিজনক ও হুমকিস্বরূপ বক্তব্য কোনোভাবেই কাম্য নয়। যেসব অধিকারের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান হয়, তার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে বাক্স্বাধীনতার অধিকার। একজন পেশাদার সাংবাদিককে নিয়ে ফেসবুকে এমন পোস্ট সেই আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এটা স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর হস্তক্ষেপ, যা আমাদের উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত করেছে।’ অবিলম্বে মোত্তাসিন বিশ্বাস তাঁর দেওয়া পোস্টটি প্রত্যাহার করে দুঃখ প্রকাশ না করলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সাংবাদিক সমাজ সম্মিলিতভাবে কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে বিবৃতিতে।