তাঁদের দুজনের পড়াশোনা একই কলেজে। একই শ্রেণিকক্ষে পাশাপাশি বসেছেন দুই বছর। একসঙ্গে ঘুরে বেড়িয়েছেন চট্টগ্রামে। উচ্চমাধ্যমিকে দুজনই পেয়েছেন জিপিএ-৫। এরপর ভর্তি পরীক্ষায় একজন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) প্রথম, অন্যজন মেডিকেলে দ্বিতীয় হয়েছেন।

বুয়েটে প্রথম হয়েছেন তোফায়েল আহমেদ। আর মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় দ্বিতীয় হয়েছেন সানজিদ অপূর্ব বিন সিরাজ। সানজিদ ভর্তি হয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজে। এর আগে দুজনই পড়েছেন চট্টগ্রাম কলেজে। কলেজের প্রথম বর্ষ থেকেই তাঁদের বন্ধুত্ব। শুরু থেকে একসঙ্গে থেকেছেন তাঁরা। এখন উচ্চশিক্ষার জন্য আলাদা হলেন। তবে মনে খেদ নেই।

তোফায়েল প্রথম আলোকে বললেন, ‘কলেজে একই বেঞ্চে বসে আমরা পড়েছি। আমাদের অনেক স্মৃতি জমা হয়েছে। কত বিষয় নিয়ে আমাদের মধ্যে বিতর্ক হয়েছে। এখন দুজন আলাদা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলে গেলাম।’

দুজনের প্রস্তুতি, পরিকল্পনা

ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে দুজনের সঙ্গে কথা হলো এই প্রতিবেদকের। শুরুতে সানজিদের গল্পটা শোনা যাক। সানজিদের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের গারাংগিয়া গ্রামে। তাঁরা তিন ভাই। মা খাইরুন্নেছা মোস্তারীসহ থাকেন চট্টগ্রাম নগরের মোহাম্মদপুর এলাকার ভাড়া বাসায়। তাঁর বাবা ছিলেন কলেজশিক্ষক। ২০১৪ সালে কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে বাবার মৃত্যু হয়। বাবার সেই মৃত্যুতে ভেঙে পড়েন সানজিদ। কলেজে ওঠার পর তিনি সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসক হবেন। ক্যানসার নিয়ে কাজ করবেন। এরপর প্রথম বর্ষ থেকেই টুকটাক প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন।

সানজিদ জানালেন, ভর্তি পরীক্ষার আগে গড়ে মাত্র পাঁচ ঘণ্টা ঘুমাতেন। বাকি সময় পড়ার মধ্যে ডুবে থাকতেন। ইংরেজি পড়তে গিয়ে বেগ পেতে হতো। ভয় ছিল, ইংরেজিতে নম্বর তুলতে পারবেন কি না। শেষ পর্যন্ত ভালো ফল করায় সবাই খুশি। ১৯ জানুয়ারি মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। ফল পাওয়ার পর তাঁর মা কান্নায় ভেঙে পড়েন। খুশিতে আত্মহারা হয়ে যান তাঁর দুই ভাই।

২০২২ সালে চট্টগ্রাম নগরের সরকারি মুসলিম উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেন সানজিদ। জিপিএ-৫ নিয়ে ভর্তি হন চট্টগ্রাম কলেজে। ২০২৪ সালে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছেন তিনি। সানজিদ বলেন, ‘কলেজে ভর্তি হওয়ার পর চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। পত্রপত্রিকা পড়ার অভ্যাস রয়েছে। পত্রিকায় চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়েছি। এরপর ভর্তি পরীক্ষার জন্য দুটি কোচিংয়ে ভর্তি হই। নিয়মিত ক্লাস শুরু করি। নাওয়া-খাওয়া ভুলে শুধু পড়েছি।’

এবার আসা যাক তোফায়েলের গল্পে। তাঁর বাড়ি কুমিল্লার পূর্ব চান্দিপুরে। মায়ের নাম মিনা বেগম, বাবা মনিরুল ইসলাম। তোফায়েল পড়াশোনা করেছেন চট্টগ্রাম নগরের সরাইপাড়া সিটি করপোরেশন স্কুলে। সেখান থেকে তিনি ভর্তি হন চট্টগ্রাম কলেজে। তিনিও জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এরপর শুরু হয় ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি।

তোফায়েল বললেন, ‘ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হব ভাবিনি। কিন্তু শুরুর দিকে থাকার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছি। আমি প্রস্তুতি নিয়েছি পরিকল্পনামাফিক। প্রতিদিন ছোট ছোট লক্ষ্য ঠিক করতাম। সে অনুযায়ী পড়তাম। সময়ের দিকে তাকাইনি। কখনো ১০ ঘণ্টাও লাগত পড়া শেষ করতে। আর প্রকৌশলবিদ্যার দিকে নজর ছিল। তাই গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন—এসব বিষয় অতিরিক্ত গুরুত্ব দিয়ে পড়েছি। এখন কম্পিউটার সায়েন্সে ভর্তি হব। ভবিষ্যতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে কাজ করব।’

সানজিদের মতো তোফায়েলও কলেজের প্রথম বর্ষ থেকে প্রস্তুতি নিতে থাকেন। মূলত কলেজে ওঠার পর থেকেই বুয়েটে পড়ার স্বপ্ন বুনতে শুরু করেন তিনি। এ জন্য কলেজের প্রাক্তন যাঁরা বুয়েটে পড়ছেন, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলেন। পরামর্শ নেন।

‘আমাদের সবকিছুই চলত একসঙ্গে’

দুজনের এখন কলেজে পড়ার অনেক স্মৃতি। উদাহরণ দিয়ে সানজিদ বললেন, ‘আমরা দুজনই একসঙ্গে বসতাম। ক্লাসের পড়া নোট নিতাম। কখনো তোফায়েল সহযোগিতা করত। কখনো আমি করতাম। গণিত আমার পছন্দের বিষয় ছিল। কলেজেই আমরা ঠিক করলাম একজন প্রকৌশলবিদ্যা পড়ব, অন্যজন চিকিৎসা।’

সানজিদ স্মৃতি হাতড়ে জানালেন, ‘এমনও হয়েছে তোফায়েল আমার বাসায় এসে থাকছে। আমরা একসঙ্গে খেলাধুলা করছি। এমনকি নানা জায়গায় ঘুরতেও যেতাম। সর্বশেষ গত ২১ ফেব্রুয়ারি আমরা গিয়েছিলাম কক্সবাজার। দারুণ সময় কাটিয়েছি দুজনে। আসলে আমাদের সবকিছুই চলত একসঙ্গে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ক ষ র একসঙ গ দ জন র আম দ র হয় ছ ন প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

মিরাজ বীরত্বে দারুণ প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখলো বাংলাদেশ

পরাজয়ের গ্লানি থেকে গর্বের গাঁথায় ফেরার গল্প যখন লেখা হয়, সেখানে একজন নায়ক থাকেন। এইবার সেই নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। সিলেটের লজ্জাজনক হার ভুলিয়ে দিয়ে চট্টগ্রামে দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশ যেন ঘুরে দাঁড়াল মেঘ ফুঁড়ে রোদ ওঠার মতো। অলরাউন্ড মিরাজের ব্যাটে-বলে দ্যুতি ছড়ানো আর তাইজুল ইসলামের ঘূর্ণিতে বিধ্বস্ত জিম্বাবুয়ে। ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল জয়ে দুই ম্যাচের সিরিজ শেষ হলো ১-১ সমতায়।

প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়েকে কোনো সুযোগই দেয়নি বাংলাদেশ। তাইজুল ও নাঈম ইসলামের নির্ভুল বোলিংয়ে মাত্র ২২৭ রানে গুটিয়ে যায় সফরকারীরা। এরপর ব্যাট হাতে পাল্টা জবাব দেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। সাদমান ইসলামের ধারাবাহিকতা আর মিরাজের সংগ্রামী সেঞ্চুরিতে দল পৌঁছে যায় ৪৪৪ রানে। নেয় ২১৭ রানের লিড।

সাদমান তুলে নেন দারুণ এক সেঞ্চুরি, কিন্তু ম্যাচের মূল চিত্রনাট্য লিখলেন মিরাজ। টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় শতকে তিনি ছিলেন নির্ভার, নিবেদিত এবং নিখুঁত। ১৪৩ বলের ইনিংসে ১১টি চার ও একটি ছক্কায় সাজানো তার ১০৪ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস শুধু দলীয় সংগ্রহে রানের সংযোজন ছিল না, ছিল প্রতিরোধ আর প্রতিশোধের প্রতীক।

আরো পড়ুন:

বাংলাদেশের বিপক্ষে দারুণ বোলিং করে মুজারাবানির ইতিহাস

ইনিংস ব‌্যবধানে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে বদলা নিলো বাংলাদেশ

তাইজুলের সঙ্গে অষ্টম উইকেটে গড়েন ৬৩ রানের জুটি। এরপর তানজিম হাসান সাকিবের সঙ্গে নবম উইকেটে যোগ করেন আরও ৯৬ রান। তানজিম নিজেও খেলেন ৪১ রানের কার্যকর ইনিংস। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে মিরাজ যখন আউট হন, তখন স্কোরবোর্ডে বাংলাদেশ—৪৪৪।

প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলতে নামা জিম্বাবুয়ের মাসেকসা ১১৫ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট নিয়ে রেখেছিলেন আলোচনার খোরাক।

দ্বিতীয় ইনিংসে জিম্বাবুয়ের ইনিংস যেন শুরুই হলো পতনের ধ্বনি বাজিয়ে। মাত্র ৮ রানেই পড়ল ২ উইকেট। তাইজুল প্রথমে বোল্ড করলেন ব্রিয়ান বেনেটকে। এরপর এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেললেন নিক ওয়েলচকে। স্কোর যখন ৬৯, তখন উইকেট ৫টি। এরপর নাম মাত্র প্রতিরোধ গড়ে বেন কুরান ও ক্রেইগ আরভিন। কুরান করেন সর্বোচ্চ ৪৬ রান, আরভিন ২৫। বাকিরা যেন শুধুই আনুষ্ঠানিকতা সারলেন। ১১১ রানে অলআউট হয়ে লজ্জার হার বরণ করে নেয় জিম্বাবুয়ে।

মিরাজ বল হাতেও রচনা করলেন অনন্য মহাকাব্য। ২১ ওভারে ৮ মেডেনসহ মাত্র ৩২ রানে শিকার ৫ উইকেট। এটি তার ক্যারিয়ারের ১৩তম পাঁচ উইকেট শিকার। তাকে দারুণ সহায়তা দেন তাইজুল, ৩টি উইকেট নেন ৪২ রানে। নাঈম ইসলামের ঝুলিতে যায় ১ উইকেট।

একই ম্যাচে সেঞ্চুরি ও ফাইফার, এমন কীর্তির সাক্ষী হওয়া সবসময় ঘটে না। মেহেদী হাসান মিরাজ সেই বিরল অর্জনের মালিক হয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন। শুধু এখানেই শেষ নয়, দুই টেস্টে মোট ১৫ উইকেট ও একটি দুর্দান্ত সেঞ্চুরির সুবাদে সিরিজ সেরার পুরস্কারও উঠেছে তার হাতেই।

চট্টগ্রামে এই জয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ শুধু সিরিজে সমতা ফেরায়নি, সিলেটের ক্ষতচিহ্নও কিছুটা মুছে দিয়েছে। মিরাজের ব্যাট-বলের বীরত্বে লেখা হলো এক প্রত্যাবর্তনের মহাকাব্য—যেখানে বাংলাদেশের ক্রিকেট আবারও প্রমাণ করেছে, তারা হার মানে না, হারিয়ে দিতে জানে।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘বাচ্চাটি যাবে না, ম্যাডাম’: ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে ৯ মাসের সন্তানের সঙ্গে মায়ের বিচ্ছেদ
  • সন্তানদের টানে বিচ্ছেদ থেকে বন্ধন, আদালত চত্বরে আবার বিয়ে
  • ভারত-পাকিস্তানকে একসঙ্গে কাজ করতে বললো যুক্তরাষ্ট্র
  • প্রযোজক তার সঙ্গে রাত কাটাতে বলেন: অঞ্জনা
  • বৈষম্যবিরোধীদের তোপের মুখে যশোর মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের পদত্যাগ
  • ‘আগে সাকিব ভাই করতেন, এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি’
  • বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একসঙ্গে কাজ করার নির্দেশনা চেয়ারম্যানের
  • শ্রীলঙ্কার মাটিতে ঘুরে দাঁড়িয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ
  • মিরাজ বীরত্বে দারুণ প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখলো বাংলাদেশ
  • নোবিপ্রবির পুকুরে ছাত্র-ছাত্রীদের গোসলের ছবি ভাইরাল, ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন