Prothomalo:
2025-06-16@02:53:21 GMT

রমজান মাসের ফজিলত ও আমল

Published: 2nd, March 2025 GMT

হিজরি চান্দ্রবর্ষের নবম মাস রমজান। সিয়াম সাধনার মাস রমজান। তাকওয়ার মাস রমজান। কোরআন নাজিলের মাস রমজান।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘রমজান মাস, এতে (এই মাসে) মানুষের দিশারি এবং সৎ পথের সুস্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে, তারা যেন এই মাসে সিয়াম ব্রত পালন করে।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৫) ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য সিয়ামের (রোজার) বিধান দেওয়া হলো, যেমন সিয়ামের বিধান তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদের দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৩)

ইবাদতের বিশেষ মৌসুম রমজান মাস। রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস রমজান। এ মাসের প্রধান ইবাদত ‘সিয়াম’ বা রোজা পালন করা। সিয়াম বহুবচন, এর একবচন হলো ‘সওম’, যার অর্থ বিরত থাকা। ফারসি, উর্দু, হিন্দি ও বাংলায় সওম বা সিয়ামকে ‘রোজা’ বলা হয়।

রমজানের ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নতসমূহ পালনে সচেতন হই। নিজে নেক আমল করি, অন্যদেরও নেক আমলে উদ্বুদ্ধ ও সহায়তা করি। রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করি। রমজানে ইবাদতের পরিবেশ বজায় রাখি

তারাবিহ নামাজ রমজান মাসের বিশেষ উপহার। ‘শবে কদর’ হলো রমজানের খাস তোহফা। এ মাসে প্রতিটি নেক আমলের ফজিলত ৭০ গুণ বৃদ্ধি করা হয়। একেকটি নফল ইবাদতের সওয়াব অন্য মাসের ফরজ ইবাদতের সমান।

প্রিয় নবী (সা.

) বলেন, ‘যখন রমজান মাস আসে, তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের ফটকগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়; শয়তানকে বন্দী করা হয়।’(বুখারি, খণ্ড: ৩, হাদিস: ১,৭৭৮)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজান মাসে সিয়াম পালন করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসে রাত জেগে ইবাদত করবে (তারাবিহ নামাজ পড়বে), তার পূর্বের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ ‘যে ব্যক্তি ইমানসহ সওয়াবের আশায় কদরের রাতে ইবাদত করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মার্জনা করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি, খণ্ড: ১, হাদিস: ৩৭,৩৬ ও ৩৪)

জ্ঞানসম্পন্ন, সাবালক, রোজা পালনে সক্ষম, এমন সব মুমিন মুসলিম নারী ও পুরুষের জন্য রমজান মাসে রোজা পালন করা ফরজে আইন ইবাদত। ঋতুমতী নারী, প্রসূতি মা (স্রাব চলাকালীন) এবং অসুস্থ ব্যক্তিরা পরবর্তী সময়ে রোজা কাজা আদায় করবেন।

এমন অক্ষম ব্যক্তি, যিনি পুনরায় সুস্থ হয়ে রোজা পালনের সামর্থ্য লাভের সম্ভাবনা নেই, তারা প্রতিটি রোজার জন্য একটি সদকাতুল ফিতরের সমপরিমাণ ফিদিয়া গরিব মিসকিনকে প্রদান করবেন। সক্ষম ব্যক্তি রোজা না রাখলে কঠিন গুনাহ হবে; এমতাবস্থায় তা কাজা আদায় করতে হবে। কিন্তু রোজা রাখার পর ওজর ছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবে ভেঙে ফেললে কাজা ও কাফফারা উভয়টি আদায় করতে হবে। একটি রোজার কাজা হলো একটি রোজা এবং কাফফারা হলো একনাগাড়ে ৬০টি রোজা অথবা ৬০ মিসকিনকে দুই বেলা আহার করানো অথবা দাসমুক্ত করা।

হাদিসে কুদসিতে নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা বলেন, “রোজা আমারই জন্য, আমিই এর বিনিময় প্রতিদান দেব।” ’‘রোজা আমারই জন্য, আমিই এর বিনিময় প্রতিদান হব।’ (বুখারি, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২২৬)

সিয়াম পালনকারীর জন্য রয়েছে জান্নাতে বিশেষ অভ্যর্থনা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জান্নাতে রায়্যান নামক একটি বিশেষ তোরণ আছে। এ তোরণ দিয়ে কিয়ামতের দিন শুধু রোজাদারগণই প্রবেশ করবেন। তাঁদের প্রবেশের পর দরজাটি বন্ধ করে দেওয়া হবে, তাঁরা ছাড়া আর কেউ এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (বুখারি, খণ্ড: ৩, হাদিস: ১৭৭৫)

আসুন, রমজানের ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নতসমূহ পালনে সচেতন হই। নিজে নেক আমল করি, অন্যদেরও নেক আমলে উদ্বুদ্ধ ও সহায়তা করি। রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করি। রমজানে ইবাদতের পরিবেশ বজায় রাখি।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ম স রমজ ন রমজ ন ম স ন ক আমল রমজ ন র র জন য সওয় ব

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা কেটে যাক

লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার বৈঠকটি নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল, তার অবসান হবে আশা করা যায়। নির্বাচনের দিনক্ষণের বিষয়ে দুই পক্ষই নীতিগতভাবে একমত হয়েছে যে ২০২৬ সালের রোজার আগে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। 

সাম্প্রতিক কালে নানা বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপি নেতৃত্বের বিরোধ লক্ষ করা যাচ্ছিল। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে বিএনপি–দলীয় প্রার্থী ইশরাক হোসেনের শপথ ইস্যু সেই বিরোধকে আরও বাড়িয়ে দেয়। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সর্বশেষ বৈঠকে বিএনপিসহ বেশির ভাগ দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি ও আকাঙ্ক্ষা পুনর্ব্যক্ত করে।

কিন্তু ঈদুল আজহার আগের রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন। প্রধান উপদেষ্টার এই ঘোষণার ব্যাপারে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানায়। এর আগে বিএনপির নেতৃত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ এনে তিনজন উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করে। 

এমনই একটি পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের যুক্তরাজ্য সফরের সময় লন্ডনে তাঁর সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একটি বৈঠক অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বৈঠকের ঘোষিত যৌথ বিবৃতিতে নির্বাচনের দিনক্ষণের বিষয়টি সামনে এলেও দুই পক্ষের আলোচনা কেবল এর মধ্যে সীমিত ছিল না। প্রধান উপদেষ্টার আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী একটি সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠান ও সংস্কারের ধারাবাহিকতার ওপরও জোর দেন তঁারা। 

বৈঠকের ফলাফলকে প্রায় সব দলই স্বাগত জানিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি ঘোষণার ধরন নিয়ে আপত্তি জানালেও ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সরাসরি বিরোধিতা কেউ করেনি। আমরাও মনে করি, কোনো বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভেদ দেখা দিলে আলোচনার মাধ্যমেই তা সমাধান করতে হবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ যারা সংস্কার ও বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে, সেটাও গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিতে হবে। লন্ডন বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা সংস্কার ও বিচারকাজ দৃশ্যমান করার ওপর জোর দিয়েছেন। ভবিষ্যতে যাতে দেশে স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থার পুনরাগমন না ঘটে, সে জন্য রাষ্ট্র সংস্কারের কাজটি ত্বরান্বিত করা জরুরি। আবার অপরাধ করে যাতে কেউ পার না পায়, সে জন্য জুলাই-আগস্টের হত্যার বিচারও অপরিহার্য। কিন্তু এই দুটি বিষয়কে কোনোভাবে নির্বাচনের প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখা সমীচীন হবে না।

যেসব সংস্কার কমিশনের সুপারিশের সঙ্গে নির্বাচন ও সংবিধানের বিষয়টি জড়িত নয়, সেগুলো সরকার নির্বাহী আদেশেও বাস্তবায়ন করা যায়। এসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে তেমন বাধা আসার কথা নয়। তবে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে মনে রাখতে হবে, নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক হওয়ার অর্থ এই নয় যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। এখন নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করাই বড় চ্যালেঞ্জ। রাজনৈতিক দলগুলোর সার্বিক সহযোগিতা না থাকলে সরকার একা কাজটি করতে পারবে না। 

ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্থান থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর অন্তর্দলীয় ও আন্তদলীয় সংঘাতের যেসব খবর পাওয়া যাচ্ছে, তা উদ্বেগজনক। রাজনৈতিক দলগুলো গণতান্ত্রিক রীতিনীতি মেনে না চললে কোনো সংস্কারই কাজে আসবে না। আমরা আশা করি, দিন-তারিখের বিষয়ে সমঝোতার পর নির্বাচনের প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবাই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবেন। রাজনীতিতে মত ও পথের পার্থক্য থাকবে; তাই বলে একে অপরকে ‘শত্রুজ্ঞান’ করার পুরোনো সংস্কৃতি থেকে তাদের বেরিয়ে আসতে হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ