ফিলিস্তিনি তথ্যচিত্র ‘নো আদার ল্যান্ড’ পেল অস্কার পুরস্কার
Published: 3rd, March 2025 GMT
এবার অস্কারের ৯৭তম আসরে সেরা তথ্যচিত্রের পুরস্কার পেল ইসরায়েলি সাংবাদিক যুবাল আব্রাহাম এবং ফিলিস্তিনি চলচ্চিত্র নির্মাতা বাসেল আদ্রার নির্মিত তথ্যচিত্র ‘নো আদার ল্যান্ড’।
বাংলাদেশ সময় সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) ভোর ৫টায় যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসের ডলবি থিয়েটারে ৯৭তম অস্কার ঘোষণা শুরু হয়। এদিন চার ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি চলচ্চিত্র নির্মাতার যৌথভাবে নির্মিত তথ্যচিত্রটি অস্কার পুরস্কার জিতে নেয়। তথ্যচিত্রটির নির্মাতাদের মধ্যে রয়েছেন- বাসেল আদ্রা, হামদান বল্লাল, ইউভাল আব্রাহাম, রাচেল সোর।
‘নো আদার ল্যান্ড’ পশ্চিমতীরের মাসাফের ইয়াত্তার একজন তরুণ ফিলিস্তিনি কর্মী আদ্রার গল্প অনুসরণে নির্মিত।
এতে দেখানো হয়, ইসরায়েলি বাহিনীর বহিষ্কারাদেশের বিরুদ্ধে আদ্রার সম্প্রদায় বাঁচা-মরার লড়াই করছে। শৈশব থেকেই আদ্রা সামরিক দখলে তার অঞ্চলে বাড়িঘর ধ্বংস এবং বাসিন্দাদের বাস্তুচ্যুত হওয়ার মর্মান্তিক ঘটনা দেখে বড় হয়েছেন। স্বাভাবিকভাবে তার গল্প আর নির্মাণে সেগুলোর প্রভাব স্পষ্ট তাকে নাড়া দিয়েছে।
আদ্রার প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থনে এগিয়ে আসেন একজন ইসরায়েলি সাংবাদিক। ওই সাংবাদিক নিজেও ইসরায়েল কর্তৃক ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার সাক্ষী। এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে যিনি নিজেও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছেন।
তথ্যচিত্রটি এর আগে প্রাক-অস্কার পুরস্কার বিভাগে বেশ প্রভাব বিস্তার করে এবং সম্মানিত হয়। এছাড়াও আইডিএ পুরস্কারে সেরা তথ্যচিত্র এবং সেরা পরিচালক, ইউরোপীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা ইউরোপীয় তথ্যচিত্র এবং বার্লিনে সেরা তথ্যচিত্রের মতো অর্জন রয়েছে তাদের ঝুলিতে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল
এছাড়াও পড়ুন:
একটি সম্ভাবনাময় উদ্যোগ
চট্টগ্রাম নগরীর অলিগলিতে প্রতিদিন জমে ওঠা প্লাস্টিক বর্জ্য আমাদের অজান্তেই হয়ে উঠছে ভবিষ্যতের সম্পদ। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কথা উঠলেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে দুর্গন্ধযুক্ত ডাস্টবিন বা বিশাল ল্যান্ডফিলের ছবি। অথচ সে চিত্রটাই বদলে দিচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, ইউনিলিভার বাংলাদেশ ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইপসার সমন্বিত উদ্যোগে গড়ে ওঠা একটি নতুন মডেল, যেখানে প্লাস্টিক বর্জ্য রূপ নিচ্ছে পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্যে।
এই উদ্যোগের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো– ‘সার্কুলার ইকোনমি’র ধারণা প্রতিষ্ঠা, অর্থাৎ একবার ব্যবহৃত প্লাস্টিক পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করে অর্থনৈতিক চক্রে ফিরিয়ে আনা।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতাধীন একটি ওয়ার্ডের বাসিন্দা হুসনেআরা একজন সক্রিয় রিসাইকলার। প্রতিদিন সেকেন্ডারি ডাম্পিং স্টেশন থেকে গড়ে ৭০-১৫০ কেজি প্লাস্টিক, পলিথিন ও ধাতব বর্জ্য সংগ্রহকারীদের মাধ্যমে সংগ্রহ করে তিনি সরবরাহ করেন স্থানীয় ডিলারদের কাছে। এ কাজ থেকে মাসে আয় হয় প্রায় ১৬ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা। উদ্যোগের আওতায় কাজ করে হুসনেআরা শুধু নিজের জীবিকা নির্বাহই করছেন না, বরং অপচনশীল কঠিন বর্জ্য অপসারণের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষায়ও ভূমিকা রাখছেন।
‘আগে লোকজন বলত, এসব কুড়িয়ে কী হবে? এখন বোঝে, আমি পরিবেশও বাঁচাই, ঘরও চালাই’– বলেন হুসনেআরা। সন্তানদের কথা জিজ্ঞেস করতে খানিকটা আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘আমি চাই না ওদের ওপর ভর করে চলি, যতদিন পারি নিজে কষ্ট করে খাই।’
হুসনেআরার এই নিষ্ঠা ও অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সম্প্রতি তাঁকে চট্টগ্রামের শ্রেষ্ঠ ভাঙারিওয়ালা হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়েছে, যা তাঁর মতো আরও অনেককেই কঠোর পরিশ্রম ও পরিবেশ রক্ষায় উৎসাহ ও মর্যাদা দিয়েছে। চট্টগ্রাম শহরে হুসনেআরার মতো প্রায় তিন হাজার বর্জ্য সংগ্রাহক প্রতিদিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত আছেন, যা এ উদ্যোগটিকে একটি সফল পরিবেশ-অর্থনীতি সম্মিলিত মডেলে রূপ দিয়েছে।
চট্টগ্রাম শহরে প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন হাজার টন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। ২০২২ সাল থেকে চালু হওয়া ‘প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা’ উদ্যোগের আওতায় এ পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয়েছে ২৪ হাজার টনের বেশি কঠিন বর্জ্য, যার মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ প্লাস্টিক এবং ৭০ শতাংশ সিঙ্গেল ইউজড প্লাস্টিক।
আমাদের দেশের প্লাস্টিক পণ্যের বাজারের আকার বছরে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। প্রায় পাঁচ হাজার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন করে থাকে। এ শিল্পে সরাসরি ও পরোক্ষভাবে প্রায় ২০ লাখ মানুষ নিয়োজিত। এটি দেশের ১২তম বৃহৎ রপ্তানি খাত, যেখান থেকে প্রতিবছর ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আয় হয়। তাছাড়া সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হচ্ছে এ খাত থেকে।
একজন বর্জ্য সংগ্রাহক মাসে গড়ে ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করছেন, যা একদিকে তাদের জীবিকা নিশ্চিত করছে, অন্যদিকে শহরকে করে তুলছে পরিচ্ছন্ন ও বাসযোগ্য।
শিক্ষার্থী
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
চট্টগ্রাম কলেজ