নাটোরে মাদক কারবারে বাধা দেওয়ায় যুবকের চোখ তুলে নেওয়ার চেষ্টা
Published: 3rd, March 2025 GMT
‘পরিবারে পাগলি (মানসিক প্রতিবন্ধী) মা ছাড়া আমার আর কেউ নাই। আমিই রান্না করে মাকে খাওয়াই। মানুষের জমিতে কাজ না করলে ভাত জোটে না। অথচ ওরা (আসামিরা) আমার চোখ নষ্ট করে দিছে, পায়ের রগ কাটি দিছে। তিন দিন হাসপাতালে থাকার পর বাড়িতে আসি শুয়ে আছি। পেটে খাব কী, ওষুধই–বা কী দিয়ে কিনব?’
আজ সোমবার দুপুরে প্রথম আলোকে কথাগুলো বলছিলেন নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের রাওতা গ্রামের মৃত আকবর আলীর ছেলে রুবেল হোসেন (৩০)।
মাদক চক্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় স্থানীয় কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী গত বুধবার মধ্যরাতে রুবেল হোসেনকে একটি বইমেলার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থেকে তুলে নিয়ে যান। দুষ্কৃতকারীরা তাঁর ডান চোখে চাকু ঢুকিয়ে দেন এবং ডান পায়ে জখম করেন। ঘটনার পর থেকে তিনি ওই চোখে দেখতে পারছেন না।
এ ঘটনায় রোববার দুপুরে রুবেলের চাচা হাসান আলী বাদী হয়ে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে আশরাফুল ইসলাম নামের একজনকে আটক করে পুলিশে দিলে তাঁকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আজ দুপুরে রুবেল হোসেনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, টিনের ঘরের ভেতরে বয়স্ক কয়েকজন নারী রুবেলকে ঘিরে আর্তনাদ করছেন। তিনি নিজেও যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন। রুবেল জানান, পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার মুলাডুলির সঙ্গে লাগোয়া দুটি গ্রাম রাওতা ও নটাবাড়িয়া। এখানে মাদকের ছড়াছড়ি। মাদক বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এলাকাবাসীর সঙ্গে নটাবাড়িয়ার বাসিন্দা সাধু, মামুন, তারিকুল এবং মুলাডুলির বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম (২২), মো.
রুবেল হোসেন বলেন, গত বুধবার তিনিসহ গ্রামের কিছু যুবক পাশের রাজাপুরের বইমেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখতে যান। সেখানে রাত ১২টার কিছু পরে তারিকুল ও তাঁর সহযোগীরা তাঁকে একটি দোকানের পেছনে তুলে নিয়ে যান। তাঁরা রুবেলের ডান চোখে চাকু ঢুকিয়ে মণি উপড়ে ফেলার চেষ্টা করেন। তবে ধস্তাধস্তির কারণে চোখের দুটি রগ কেটে যায়। এ সময় তাঁর ডান পায়ের হাঁটুর নিচে জখম করে রাস্তায় ফেলে রেখে যান।
রুবেলের ভগ্নিপতি আলমগীর হোসেন বলেন, ‘রক্তাক্ত রুবেলকে আমি বৃহস্পতিবার ভোরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি। ওই দিন তাঁর ডান চোখে অপারেশন করা হয়।’
চিকিৎসকের বরাত দিয়ে আলমগীর বলেন, চোখের ভেতরের দুটি রগ কেটে গেছে। দুটি পাইপ লাগানো হয়েছে। এক মাস পর আবার অপারেশন করতে হবে। তখন চিকিৎসক বলবেন রুবেল আদৌ আর ওই চোখে দেখতে পারবেন কি না।
রুবেল হোসেনের হাসপাতালের প্রেসক্রিপশনে লেখা আছে ‘ডান চোখের ওপর আঘাত’। এ ছাড়া তিনি ‘ফিজিক্যাল অ্যাসল্টের’ কারণে ‘মাইনর হেড ইনজুরি’ নিয়ে ভর্তি ছিলেন বলে প্রেসক্রিপশনে লেখা আছে।
হামলার বিষয়ে কথা বলার জন্য অভিযুক্ত সাধু ও তারিকুলের মুঠোফোন নম্বরে কল দিলে সেগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। ঘটনার পর থেকে তাঁরা আত্মগোপন আছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মুখপাত্র ও জরুরি বিভাগের ইনচার্জ শংকর কে বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, জরুরি বিভাগের কাগজপত্র অনুসারে রুবেলকে গত বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শনিবার সন্ধ্যায় তাঁকে বাড়িতে পাঠানো হয়। তাঁর চোখের ও পায়ের চিকিৎসার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বলতে পারবেন। ১৫ দিন পর সেলাই কাটার জন্য রুবেলকে আবার হাসপাতালে আসতে হবে।
বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবর রহমান বলেন, রুবেলের চোখে ও পায়ে গুরুতর আঘাতের অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলায় আশরাফুল ইসলাম নামের একজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আশর ফ ল
এছাড়াও পড়ুন:
দহন থেকে জংলি
‘আমি নিয়মিত অনেক চিত্রনাট্য পাচ্ছি। নিয়মিত সেসব সিনেমা করলে প্রচুর টাকা কামাতে পারব। ফিন্যান্সিয়ালি জায়গাটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দর্শক আমাকে যেভাবে দেখতে চাচ্ছেন, তেমন গল্প পাচ্ছি না। দর্শক-প্রত্যাশার চেয়ে ভালো কিছু দিতে চাই। যখন সামগ্রিক চিন্তা করি, তখন ভাবতে হয় আমি কতটা আয় করলাম তার চেয়েও দর্শকের সামনে কীভাবে আসছি, সেটি মুখ্য। এটি একটি প্যাকেজ। মাঝে একটি-দুটি গল্প পছন্দ হয়। সেসব টিমের যে অবস্থা, বাজেট সামগ্রিকভাবে দেখতে গেলে ভালো গল্প তুলে আনা কঠিন হবে। তখন আমি না করে দিই। আমি চাইছি নিজের মতো করে কাজ করতে। জীবনে অনেক সিনেমা করতে হবে, এমন চিন্তা নেই। আমার মতো করে অল্প কিছু কাজ করে যেতে চাই।’ বলছিলেন সিয়াম আহমেদ।
গেল ঈদে মুক্তি পেয়েছে সিয়াম আহমেদ অভিনীত সিনেমা ‘জংলি’। যে সিনেমার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নায়কের আবেগ ও পরিশ্রমের দীর্ঘ গল্প। সিনেমাটি করতে একচুলও ছাড় দেননি সিয়াম। ফলাফল হিসেবে পেয়েছেন দর্শকের অবারিত ভালোবাসা। জংলি মুক্তির পর তাই গল্পটি হয়ে উঠেছে সবার। দর্শকরা হলে গিয়ে কেঁদেছেন, গল্পে বুঁদ হয়ে থেকেছেন। করেছেন সিয়াম ও তাঁর টিমের প্রশংসা।
সিয়াম বললেন, ‘এ সিনেমায় আমি দীর্ঘ সময় দিয়েছি। সিনেমার জন্য চুলদাড়ি বড় করেছি। একটি সিনেমার জন্য আমার পাগলামি নিয়ে মা-বাবার মনে হয়তো প্রশ্ন ছিল, ছেলেটি চুল-দাড়ি বড় করে কী করছে? কী করেছি, এটি তো তাদের বোঝানো যায় না। তবে আমার আত্মবিশ্বাস ছিল, সিনেমাটি মুক্তির পরে গল্পটি তাদের টাচ করবে। কারণ, গল্পটিই এমন, এটি প্রথম যদি কাউকে টাচ করে, সেটি সন্তানের মা-বাবাদের। যে কারণে তাদের একসঙ্গে হলে নিয়ে কাছ থেকে অনুভূতি জানার চেষ্টা করেছি। এখন পর্যন্ত মা-বাবার কাছ থেকে সেরা ফিডব্যাক পেয়েছি। বাবা-মেয়ের গল্পটি দেখে তারা ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলেন। শুধু আমার বাবা-মা নন, অন্য মা-বাবাদের কাছেও গল্পটি নিজেদের হয়ে উঠেছে। তারা সিনেমাটি দেখে কেঁদেছেন। হল রিঅ্যাকশনের সেসব ভিডিও সবাই দেখেছেন। সব মিলিয়ে আমরা সফল। আমাদের জংলি সফল।’
মুক্তির পর থেকে ‘জংলি’ সিনেমার এগিয়ে যাওয়ার গ্রাফ দেখলে শুধু দর্শকের ভালোবাসায় সফল নয়, ব্যবসায়িকভাবেও সিনেমাটি যে সফল তার চিত্র বিদ্যমান। মাত্র ৮টি শো দিয়ে শুরু হওয়া সিনেমাটি ঈদের এতদিন পরও মাল্টিপ্লেক্সে ত্রিশটির মতো শো নিয়ে দাপিয়ে চলছে। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও জংলি হয়ে উঠেছে দর্শকদের সিনেমা।
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান টাইগার মিডিয়ার কর্ণধার জানিয়েছেন, জংলি প্রায় ছয় কোটির (গ্রস) ক্লাবে প্রবেশ করেছে।
ঈদে মুক্তির পর থেকে ক্রমশ দর্শকপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘জংলি’। এমনকি, দেশের সিনেমাপ্রেমীদের মন জয় করে কানাডা, আমেরিকা ও ইউকে’র ৪০টি থিয়েটারে মুক্তি পেয়েছে ‘জংলি’। গত ২৫ এপ্রিল থেকে স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো-এর পরিবেশনায়, ঈদের সিনেমাগুলোর মধ্যে দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি থিয়েটারে একযোগে মুক্তি পেয়েছে এ সিনেমাটি। কানাডা ও আমেরিকার বক্স অফিসে প্রথম ৩ দিনের গ্রস ৩৫,০০০ ডলার আয় করে শুভসূচনা করেছে ‘জংলি’।
ঈদে আরও অনেক ছবি মুক্তি পেয়েছে। সেগুলোর মধ্যে জংলি বিশেষ হয়ে উঠেছে কেবল বাবা-মেয়ের গল্পের কারণে। সঙ্গে সিয়ামের নজরকাড়া অভিনয়। নৈঋতার পাখি হয়ে ওঠার দারুণ চেষ্টা। দিমিত্রি থে স্টোনহার্ট নামে এক মনীষী বলেছেন, ‘একজন বাবা বলেন না যে তিনি তোমাকে ভালোবাসেন; বরং তিনি দেখিয়ে দেন যে, তিনি তোমাকে ভালোবাসেন’ জংলি সিনেমায় সিয়াম সেটি বোঝাতে পেরেছেন। ফলে সিনেমাটি হয়ে উঠেছে সবার।
প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন– ‘পৃথিবীতে আসার সময় প্রতিটি মানুষই একটি করে আলাদিনের প্রদীপ নিয়ে আসে, কিন্তু খুব কম মানুষই সেই প্রদীপ থেকে ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগাতে পারে।’
সিয়াম তাঁর জীবনের সেই দৈত্যকে জাগাতে পেরেছেন। পেরেছেন বলেই হয়তো আজ তিনি সাধারণ সিয়াম থেকে নায়ক সিয়াম হয়ে উঠেছেন। সিয়ামের যাত্রাটা শুরু বেশ আগে হলেও পুরোপুরি শুরু হয় ‘দহন’ সিনেমার মাধ্যমে। রায়হান রাফী পরিচালিত এ সিনেমাটির মাধ্যমে সিয়াম নাটক থেকে পুরোপুরি চলচ্চিত্রের মানুষ হয়ে ওঠেন। সে যাত্রা এখনও চলছে। প্রথম সিনেমায় যে সিয়ামকে সবাই দেখেছেন, জংলির সেই সিয়াম যেন আকাশ-পাতাল। তখন সিয়াম ছিলেন তরুণ, এই সিয়াম এখন বাবা। পর্দায় ও বাস্তবে দুই জায়গাতে দারুণ এক বাবা হয়ে উঠেছেন তিনি। নিজের অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়ে আগামী পরিকল্পনা কী? প্রশ্ন রাখলে নায়ক বলেন, ‘আমি নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে চাই। যারা আমার আগের কাজ দেখেছেন, তারা যেন বলেন, আগের কাজকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছি। আরেকজনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া কঠিন।’