চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমির চার দলের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া আসরের চার ভেন্যুর তিনটিতেই গিয়েছে। নিউজিল্যান্ড সবক’টিতে গিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা তো ভারতকে সেমির সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবে দুবাই এসে বসে আছে। তারা আবার লাহোরে ফিরে গেছে। সবাই যখন ভেন্যুতে ভেন্যুতে ঘুরে ক্লান্ত, ব্যতিক্রম তখন ভারত। সেই যে তারা দুবাই এসেছিল, এখনও সেখানেই আছে। বিষয়টি নিয়ে পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, উইন্ডিজের কয়েকজন সাবেক আইসিসির কড়া সমালোচনা করেছেন।
তবে ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা বিষয়টিকে মোটেও অনৈতিক কিছু ভাবছেন না। গত কয়েক দিনের সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সেমিফাইনাল-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে রোহিত কিছুটা বিরক্ত হয়েই বলেন, দুবাই তাদের বাড়ি নয়। তবে দুবাই তাদের বাড়ি না হলেও আজকের সেমিতে যে স্পিন বড় ভূমিকা রাখতে পারে সেটা মোটামুটি নিশ্চিত রোহিত।
ভিভ রিচার্ডস, নাসের হুসেইন, মাইক আর্থারটন, রিকি পন্টিং, ওয়াকার ইউনুসদের মতো সাবেকরা আইসিসির কড়া সমালোচনা করে দাবি করেন, এক ভেন্যুতে সব ম্যাচ খেলায় ‘এ’ গ্রুপের অন্য দলগুলোর তুলনায় ভারত কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার বাড়তি সুযোগ পেয়েছে। এখন সেমিও তারা একই ভেন্যুতে খেলবে। এমনকি তারা যদি ফাইনালে ওঠে, সেটাও দুবাইয়ে হবে। তবে বিষয়টিকে বাড়তি সুবিধা হিসেবে মানতে নারাজ রোহিত।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেমি-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে তিনি এর ব্যাখ্যা দেন, ‘প্রতিবার এই মাঠের পিচ কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে। আমরা এখানে যে তিনটি ম্যাচ খেলেছি, প্রতিটিতে পিচ ভিন্ন ভিন্ন আচরণ করেছে। এটা আমাদের বাড়ি নয়, এটা দুবাই। এখানে আমরা খুব বেশি ম্যাচ খেলি না। আমাদের জন্যও এই মাঠ নতুন।’
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেমির পূর্বে কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বলেও মনে করছেন রোহিত, ‘এখানে চার বা পাঁচটি পিচ ব্যবহৃত হয়েছে। আমি জানি না, সেমিফাইনাল কোন পিচে হবে। কিন্তু যাই ঘটুক না কেন, আমাদের এর সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। যে পিচই দেওয়া হোক না কেন, আমাদের সেখানেই খেলতে হবে।’
রোহিত নিজের এই মন্তব্যের স্বপক্ষে নিউজিল্যান্ড ম্যাচের উদাহরণও দেন, ‘নিউজিল্যান্ডের বোলাররা যখন বোলিং করছিলেন, তখন আমরা দেখতে পেলাম কিছুটা সুইং করছে। প্রথম দুই ম্যাচে আমাদের বোলারদের বোলিংয়ের সময় কিন্তু আমরা তেমন কিছু দেখিনি। শেষ ম্যাচে আমরা কিন্তু ততটা স্পিন হতেও দেখিনি। কাজেই প্রতিটি পিচেই ভিন্ন কিছু ঘটছে। এখানে কোন পিচ কী হবে কিংবা কী হবে না, সেটা আমরা একেবারেই জ্ঞাত নই।’
তবে রোহিতের চাওয়া উইকেটে যেন বোলারদের জন্য কিছু থাকে, ‘যদি বোলারদের জন্য উইকেটে কিছু থাকে, তাহলে ম্যাচটা বেশ জমজমাট হয়। তাই একেবারে ফ্ল্যাট পিচের পক্ষে আমি নই। যদি উইকেট চ্যালেঞ্জিং হয়, সেটা হোক পেস বা স্পিন, তাহলে ম্যাচটা ভীষণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়।’
স্কোয়াডে পাঁচ স্পিনার নেওয়া এবং শেষ ম্যাচে চার স্পিনার খেলানোর কারণও বলেছেন রোহিত, ‘এখানকার উইকেট দেখে এবং গত দুই মাস দুবাইয়ে যা হয়েছে, সেটা শুনে আমরা বুঝতে পেরেছি যে পিচ মন্থর হবে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত আইএল টি২০ দেখে আমাদের মনে হয়েছে, এখানে স্লো বোলাররা বেশি কার্যকর হবে। যদি বাড়তি ব্যাটারের প্রয়োজন হয়, তাহলে পন্ত (ঋষভ) তো রয়েছেই। কাজেই একজন বাড়তি স্পিনার রাখার বিষয়টি আমাদের মাথায় রয়েছে।’
তার মানে নিউজিল্যান্ডের মতো সেমিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও চার স্পিনার নিয়ে নামছে ভারত। কুলদীপ যাদব, অক্ষর প্যাটেল, রবীন্দ্র জাদেজার সঙ্গে থাকছেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে ৫ উইকেট নেওয়া বরুন চক্রবর্তী। তাই আজও সুযোগ পাচ্ছেন না পেসার হারশিত রানা। তবে এক মাঠে খেলায় যে সুবিধা হয়েছে, সেটা সংবাদ সম্মেলনের শেষ দিকে রোহিত ঠিকই স্বীকার করেছেন, ‘এখানে আমরা পাঁচ-ছয় দিন আগে এসেছি এবং আইসিসি একাডেমি মাঠে দারুণ কিছু প্রস্তুতি সেশন কাটিয়েছি। সৌভাগ্যক্রমে একাডেমি মাঠের পিচ ও মূল স্টেডিয়ামের পিচ প্রায় একই রকম। যে কারণে গত ম্যাচে আমরা উইকেটের সঙ্গে খুব দ্রুত মানিয়ে নিতে পেরেছি।’
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।
এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।
প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।
মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।
নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।