বসুন্ধরা এলাকার ঘটনা নিয়ে যা বললেন সারজিস আলম
Published: 6th, March 2025 GMT
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমের রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় যাওয়াকে কেন্দ্র করে চিৎকার-চেঁচামেচির একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটি পোস্ট করে কেউ কেউ দাবি করছেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীরা’ সারজিস আলমকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভাইরাল ভিডিওটির ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার রাত ১০টার পরে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত বেসরকারি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সামনে।
বুধবার রাতে ফেসবুকে বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে ওই ঘটনার একটি ভিডিও পোস্ট করা হচ্ছে। ক্যাপশনে লেখা হচ্ছে, ‘এনসিপিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করার পর সারজিস আলম আজ (বুধবার) এসেছিলেন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় তাঁর অনুসারীদের নিয়ে শোডাউন দিতে। এ খবর শুনে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, এআইইউবি (আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশে), আইইউবির (ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ) সাধারণ শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে সারজিসের অনুসারীদের ওপর চড়াও হন। পরে সবার সম্মিলিত প্রতিরোধের মুখে সারজিস তাঁর গাড়িতে উঠে বসুন্ধরা এলাকা থেকে চলে যান। এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীরা সারজিসকে বসুন্ধরা এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।’
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে একজন গণমাধ্যমকর্মী প্রথম আলোকে বলেন, সারজিস আলম বুধবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এসেছিলেন। তিনি ঘণ্টা তিনেক ধরে ওই এলাকার বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শ খানেক শিক্ষার্থীর সঙ্গে আড্ডা দেন। রাত ১০টার পর প্রায় ১৫ জন তরুণ হঠাৎ অন্য পাশ থেকে সারজিসকে লক্ষ্য করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে শুরু করেন। একপর্যায়ে সারজিসের সঙ্গে থাকা শিক্ষার্থীরা এগিয়ে গেলে দুই পক্ষে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। সারজিসও এগিয়ে গিয়ে দুই পক্ষকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে সারজিস গাড়িতে উঠে সেখান থেকে চলে আসেন। এরপর দুই পক্ষে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
এদিকে এ ঘটনায় শাকিল (নর্থ সাউথের সাবেক শিক্ষার্থী) নামে ছাত্রদলের একজন নেতা জড়িত বলে দাবি করেছেন সারজিস আলম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে একটু বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরির জন্য এটা করা হয়েছে। তারা সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১২ জন ছিলেন। তাঁদের মধ্যে তিন-চারজন বাদে বাকিরা শিক্ষার্থীও নন। অন্যদিকে আমার সঙ্গে চার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক থেকে দেড় শ শিক্ষার্থী ছিলেন।’
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে এনসিপির এই নেতা আরও বলেন, ‘ওই ১০ থেকে ১২ জন যখন চিৎকার করছিল, তখন আমার সঙ্গে থাকা শিক্ষার্থীরা এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করেছেন তারা কেন চিৎকার করছেন। পরে আমি এগিয়ে গিয়ে দুই পক্ষকেই বললাম, আপনাদের কারওরই চিৎকার করার দরকার নেই; দুই পক্ষই বাসায় যান। পরে আমি চলেও আসি। আসার পর শুনলাম, সেখানে হাতাহাতি হয়েছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউন ভ র স ট ব সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ