মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার জাফরগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডের শিকার চারটি পরিবারের মাঝে নগদ আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। 

বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) দুপুরে তারেক রহমানের নির্দেশে মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এ জিন্নাহ কবির ওই চার পরিবারের মাঝে নদগ অর্থ হস্তান্তর করেন।  

এ সময় মানিকগঞ্জ জেলা যুবদলের আহ্বায়ক কাজী মোস্তাক হোসেন দীপু, যুগ্ম আহ্বায়ক আসিফ ইকবাল রনি, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী নাদিম হোসেন টুয়েল, জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম জিহাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব খান অয়নসহ  জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন বিএনপির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। 

আরো পড়ুন:

পিরোজপুরে তারেক রহমানের মামলার বাদী ও সাক্ষী গ্রেপ্তার

মাহে রমজান সবার জীবনে বয়ে আনুক শান্তি-সুখের বার্তা: তারেক রহমান

অগ্নিকাণ্ডের শিকার হওয়া রমজান বলেন, ‘‘বুধবার রাইতের বেলা ক্যামনে যে আগুন লাগলো, সব শেষ অইয়া গেলো। চারট্যা ঘর আছিলো,এহন পুইড়া ছাই অইয়া গেছে। কেউ একবার খবরও নেই নাই। বিএনপির লোকজন আইসা শান্ত্বনা দিল, ট্যাহা পয়সা দিল, খবর নিলো এডাই শান্তি।’’ 

এ সময় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এস এ জিন্নাহ কবির বলেন, ‘‘বিএনপি জনগণের দল, গণমানুষের দল। বিএনপির সম্মানিত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মানুষের পাশে রয়েছেন। তিনি দেশের সকল খোঁজ খবর রাখছেন। মানিকগঞ্জের শিবালয়ের অগ্নিকাণ্ডের খবর তার কাছে পৌছামাত্র ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তার নির্দেশ বাস্তবায়নে আমরা অগ্নিকাণ্ডের শিকার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছি। যতটুকু সম্ভব চারটি পরিবারে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে,  তাদের আরো সহযোগিতা করা হবে।’’  

আর্থিক সহযোগিতা শেষে এস এ জিন্নাহ ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় প্রশাসনকে তিনি অবৈধভাবে বালু ও মাটি উত্তলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগের অনুরোধ করেন। 
 

ঢাকা/চন্দন/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ত র ক রহম ন ত র ক রহম ন ম ন কগঞ জ পর ব র র ব এনপ র

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে

সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’

বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।

এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।

এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’

আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ