আমাদের সময়ের আড্ডা-তর্ক ছিল বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহবাগকেন্দ্রিক। সেসব ছিল নিখাদ মেধাবী আড্ডা ও সৃষ্টিশীল তর্ক। জ্ঞান ও পাঠাভিজ্ঞতা বিনিময় ছাড়াও নির্মল আনন্দের সেইসব আড্ডায় থাকতেন রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ, কামাল চৌধুরী, মঈনুল আহসান সাবের, জাফর ওয়াজেদ, খায়রুল আনোয়ার, তুষার দাশ, আলী রীয়াজ, সুব্রত শংকর ধর, গোলাম ফারুক খান, রেজা সেলিম, আফতাব আহমেদ ও আরও অনেকেই। প্রথম যৌবনের সময়জ্ঞানরহিত আড্ডার সেইসব সঙ্গীর মধ্যে এখন তুষার দাশ, সিদ্ধার্থ হক, ফরিদ কবির, মঈনুল আহসান সাবের, ইশতিয়াক রেজার সঙ্গে এখনও আড্ডা হয়। বাকিদের সঙ্গে অনিয়মিত। দেখা হয় কালেভদ্রে।
আমার প্রথম বই– গল্পগ্রন্থ বৈরী স্রোত, প্রকাশকাল ফেব্রুয়ারি ১৯৯০।
১৯৮৮ সালে সৈয়দ শামসুল হকের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের এক পর্যায়ে তিনি জানতে চান আমার কোনো গল্পগ্রন্থ আছে কিনা। কোনো বই নেই জানার পর তাঁর একটি কথা আমার ভেতরে গভীরভাবে দাগ কেটে যায়। তিনি বলেন, একটি বই থাকলে বোঝা যায় লেখক ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে আছেন। বিচ্ছিন্নভাবে পত্রপত্রিকায় ছাপা লেখা দিয়ে সেটি পরিমাপ করা যায় না। নিজেকে পরিমাপ করার জন্যই একটি গ্রন্থ থাকা দরকার।
আমার বন্ধু ফয়জুল লতিফ চৌধুরী আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে ‘অধুনা’ নামে একটা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়েছিলেন। আমার একটা গল্পগ্রন্থ প্রকাশের আগ্রহ অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করেছিলেন তিনি। প্রথম গ্রন্থ প্রকাশ উপলক্ষে ছুটি নিয়ে সিলেট থেকে ঢাকা আসি আমি। প্রুফ দেখার কাজটি অত্যন্ত আনাড়ির মতো করেছিলাম বলে অনেক ভুল রয়ে গিয়েছিল। ততদিনে অধুনার জায়গায় এসেছে দেশ প্রকাশন।
দেশ প্রকাশনের অফিস ছিল জোনাকী সিনেমা হলের উল্টো দিকে নয়াপল্টনের গলিতে ‘রূপ’ বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানের অফিসে। রূপ-এর কর্ণধার ইউসুফ হাসান সানন্দে দেশ প্রকাশনের জন্য তাঁর অফিসটি ব্যবহার করতে দিয়েছিলেন। দেশ প্রকাশনের যাবতীয় কাজে স্বেচ্ছাভূমিকায় জড়িত ছিলেন ইউসুফ হাসান, কবি তারিক সুজাত, কাফি এবং তুহিন। শেষোক্ত দুজনই অকালপ্রয়াত।
মোট দশটি গল্প নিয়ে পাঁচ ফর্মার বইটি প্রথম হাতে নিয়ে যে অনুভূতি হয়েছিল সেটি এই মুহূর্তে স্মৃতিতে নেই। মনে পড়ে, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বইটি দেখি। বইটির প্রোডাকশনে যে খামতিগুলো ছিল সেসব আমার দৃষ্টিতে ধরা পড়েনি। পরবর্তী সময়ে বের হওয়া বইগুলো দেখার পর ধীরে ধীরে সেসব খামতি বুঝতে পারি। ফন্ট ছিল খুব ছোট, সম্ভবত ৮ বা ১০ পয়েন্ট। ছোট হরফ এবং কাগজের মানের কারণে পাঁচ ফর্মার বইটিকে দেখায় তিন ফর্মার মতো।
দ্বিতীয়ত, নিজের অজ্ঞতার কারণে অসংখ্য ভুল বানান এবং ছাপার ভুল ছিল বইটি জুড়ে। আসলে আমার যেমন প্রথম বই, তেমনি সেটা প্রকাশের সঙ্গে কারিগরিভাবে যারা জড়িত ছিলেন, তাদেরও হাতেখড়ি হচ্ছিল প্রকাশনা জগতে। বইটির একটিমাত্র কপি এখনও শেলফের একপাশে ক্ষীণস্বাস্থ্যের অবহেলিত সন্তানের মতো পড়ে থাকে, তবুও লেখকের কাছে প্রথম গ্রন্থ একটা মাইলফলক হিসেবেই রয়ে যায়, কারণ, এটি দিয়ে তৈরি হয় তার দাঁড়ানোর প্রথম ভিত। v
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স।
গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’
পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।
আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’
তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ