জাকাত ইসলামী জীবন বিধানের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম মৌলভিত্তি এবং অবশ্য পালনীয় আর্থিক ফরজ ইবাদত। ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মেরুদণ্ড হলো জাকাত। এটি আত্মার পরিশুদ্ধি, দারিদ্র্য বিমোচন ও বেকার সমস্যার সমাধান করে সমাজে সাম্য ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে। জাকাত বছরের যে কোনো সময় আদায় করা যায়। তবে অনেকে অধিক সওয়াবের আশায় রমজানে জাকাত আদায় করে থাকেন।
‘জাকাত’ আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ পবিত্রতা, ক্রমবৃদ্ধি, প্রাচুর্য ইত্যাদি। ইসলামের পরিভাষায়– আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে শরিয়াতে নির্ধারিত পরিমাণ সম্পদের নির্দিষ্ট অংশ কোরআনে বর্ণিত আট প্রকারের কোনো এক প্রকার লোক অথবা তাদের প্রত্যেকের মাঝে দান করে মালিক বানিয়ে দেওয়াকে ‘জাকাত’ বলা হয়।
কোরআন মাজিদ ও হাদিসে নববিতে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জাকাতের বিধান ও প্রাসঙ্গিকতার বর্ণনা এসেছে। জাকাত শব্দটি কোরআনে ৩২ বার, সালাতের সূত্রে ২৬ বার, স্বতন্ত্রভাবে ৪ বার, ‘পবিত্র’ অর্থে ২ বার এবং ১৯টি সুরায় আলোচনা এসেছে।
জাকাত ও সাদাকাত মহান প্রভুর নৈকট্য লাভের সুস্পষ্ট উপায় উল্লেখ করে কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে–
‘তাদের সম্পদ থেকে সাদাকা তথা জাকাত গ্রহণ করুন। এর দ্বারা আপনি তাদেরকে পবিত্র করবেন এবং পরিশোধিত করবেন।’ (সুরা তাওবা: ১০৩)
ইসলামের অপরাপর ফরজ বিধানের মতো জাকাতও একটি ফরজ বিধান। কোরআনে বর্ণিত আছে– ‘তোমরা সালাত কায়েম করো ও জাকাত প্রদান করো, আর রুকুকারিদের সঙ্গে রুকু করো।’ (সুরা আল বাকারা: ৪৩)
জাকাত ইসলামের পাঁচটি রুকনের অন্যতম। রাসুল (স) ইরশাদ করেন– ‘ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি। এ কথার সাক্ষ্য দেওয়া যে আল্লাহ ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই এবং নিশ্চয় মুহাম্মদ (স) আল্লাহর রাসুল। সালাত কায়েম করা, জাকাত দেওয়া, হজ করা এবং রামাদানের সাওম পালন করা।’
জাকাত কাদের ওপর ফরজ? চাঁদের হিসাবে বছর পূর্ণ হওয়ার সাপেক্ষে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক সব মুসলিম, স্বাধীন, জ্ঞানসম্পন্ন, বালেগ নরনারীর ওপর জাকাত ফরজ। চার প্রকার সম্পদে জাকাত দেওয়া ফরজ–
প্রথম প্রকার (সোনা-রুপা ও নগদ দেশি-বিদেশি মুদ্রা): এ জাতীয় সম্পদ যখন নিসাব পরিমাণে পৌঁছে তখন এগুলোর জাকাত দেওয়া ফরজ। (সুরা তাওবা ৩৪ নম্বর আয়াতের মর্ম)
এ ছাড়া লাভের উদ্দেশ্যে ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য রাখা সব প্রকার মালপত্রই বাণিজ্যিক পণ্য। এসব পণ্যের মূল্য যখন নিসাব তথা স্বর্ণ কিংবা রূপার নিসাব পরিমাণে পৌঁছে তখন উহার জাকাত দেওয়া ফরজ। (হেদায়া: ৮১)
উৎপাদিত ফসলেরও জাকাত আছে। ধান, গম, ভুট্টা, যব, খেজুর, কিশমিশ ইত্যাদি ফসল যখন নিসাব পরিমাণে পৌঁছে তখন এসব শস্যাদির জাকাত দেওয়া ফরজ। (সুরা আনআম : ১৪১ নম্বর আয়াতের মর্ম)
এর বাইরে গরু-মহিষ, ছাগল-ভেড়া, উট ও এ জাতীয় প্রাণী একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে পৌঁছলে এটাকে বলা হয় নিসাব পরিমাণ সংখ্যা। নিসাব পরিমাণ সংখ্যায় উপনীত হলে এ জাতীয় পশুতে জাকাত দেওয়া ফরজ। (সহিহ বুখারি: ১৪৬০, মুসলিম: ৯৯০)
পবিত্র কোরআনে আট প্রকারের লোক জাকাতের অর্থ পাওয়ার হকদার বলে ইরশাদ হয়েছে– ‘নিশ্চয় তোমরা জাকাত দেবে– (১) ফকির, (২) মিসকিন, (৩) এ কাজে নিয়োজিত কর্মচারীদের (৪) ইসলাম গ্রহণ করতে পারে সম্ভাব্য এমন অমুসলিমদের তাদের অন্তর আকৃষ্ট করার জন্য, (৫) দাসমুক্তির নিমিত্তে (৬) ঋণগ্রস্ত লোকদের, (৭) আল্লাহর রাহে জিহাদে এবং (৮) অভাবী পথচারী মুসাফিরদের। এটা আল্লাহর বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা তাওবা : ৬০)
রমজানে জাকাত আদায়ের মাধ্যমে অধিক নেকি অর্জন সম্ভব। তবে যাদের ওপর জাকাত ফরজ, তারা যেন সঠিকভাবে জাকাত আদায় করি।
মুহাম্মদ ফয়েজুল্লাহ: অধ্যক্ষ, বসুরহাট ইসলামিয়া কামিল (স্নাতকোত্তর) মাদ্রাসা, কোম্পানীগঞ্জ, নোয়াখালী
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন স ব পর ম ণ পর ম ণ স ইসল ম র আল ল হ ক রআন
এছাড়াও পড়ুন:
ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুদ্ধে জড়াবে না যুক্তরাষ্ট্র: ট্রাম্প
ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিকোলাস মাদুরোর দিন ফুরিয়ে এসেছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। খবর বিবিসির।
ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ করতে যাচ্ছে কিনা জানতে চাইলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সিবিএস নিউজের ৬০ মিনিটসকে বলেন, “আমার সন্দেহ রয়েছে। আমার মনে হয় না। কিন্তু তারা আমাদের সঙ্গে খুব খারাপ আচরণ করছে।”
আরো পড়ুন:
ক্যারিবীয় জাহাজে আবারো যুক্তরাষ্ট্রের হামলা, নিহত ৩
নাইজেরিয়ায় হামলার হুমকি ট্রাম্পের
ক্যারিবীয় অঞ্চলে মাদক চোরাচালানের অভিযোগে নৌযানগুলোতে মার্কিন হামলা অব্যাহত থাকার মধ্যে ট্রাম্পের এই মন্তব্য এলো। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রে মাদকের প্রবাহ বন্ধ করার জন্য এই হামলা প্রয়োজনীয়।
ট্রাম্প এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন যে, ক্যারিবীয় সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযান মাদক বন্ধ করার লক্ষ্যে নয়, বরং ট্রাম্প বিরোধী মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, এটি ‘অনেক কিছু’ সম্পর্কে।
বিবিসির মার্কিন নিউজ পার্টনার সিবিএস নিউজ জানিয়েছে, সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে ক্যারিবীয় ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে মার্কিন হামলায় কমপক্ষে ৬৪ জন নিহত হয়েছে।
সম্প্রতি ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোতে এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, “মার্কিন হামলায় আপনি যেসব নৌযানে বিস্ফোরণ হতে দেখেন, তার প্রতিটিতে অন্তত ২৫ হাজার মাদকদ্রব্য ধ্বংস হয়। এগুলো যুক্তরাষ্ট্রে মাদক সরবরাহের জন্য দায়ী।”
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্থলপথে ভেনেজুয়েলায় হামলার পরিকল্পনা করছে কিনা, এই প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প তা উড়িয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, “আমি এটা বলতে চাই না যে আমি এটা করব...আমি ভেনেজুয়েলার সাথে কী করব, আমি তা করব কিনা, তা আমি বলব না।”
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট মাদুরো ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘অঘোষিত যুদ্ধ’ শুরু করার অভিযোগ তুলেছেন। অন্যদিকে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রোর অভিযোগ, নৌযানগুলোতে হামলা চালানোর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র লাতিন আমেরিকায় ‘আধিপত্য বিস্তার’ করার চেষ্টা করছে।
ট্রাম্প জানান, তার সরকার ‘সারা বিশ্ব থেকে’ সন্ত্রাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে ‘আসতে’ দেবে না।
তিনি বলেন, “তারা কঙ্গো থেকে আসে, তারা সারা বিশ্ব থেকে আসে, তারা আসছে, কেবল দক্ষিণ আমেরিকা থেকে নয়। তবে বিশেষ করে ভেনেজুয়েলা- খারাপ। তাদের গ্যাং আছে।”
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্দিষ্ট করে ভেনেজুয়েলার ‘ট্রেন দে আরাগুয়ার’ নাম উল্লেখ করেন। তিনি এটিকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ গ্যাং’ হিসেবে অভিহিত করেন।
জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউজে ফিরে আসার পর থেকে, ট্রাম্প প্রশাসন মেক্সিকো এবং ল্যাটিন আমেরিকার বেশ কয়েকটি মাদক পাচারকারী সংগঠন ও অপরাধী গোষ্ঠীকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ভেনেজুয়েলার ট্রেন দে আরাগুয়া এবং কার্টেল অব দ্য সানস, যেটি যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট মাদুরো ও তার ঘনিষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তারা পরিচালনা করে। তবে কারাকাস সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
ঢাকা/ফিরোজ