শিশুটির জ্ঞান ফেরেনি এখনও, পাশে বসে কাঁদছেন মা
Published: 8th, March 2025 GMT
মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুটির জ্ঞান ফেরেনি এখনও। দুই দিন ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (পিআইসিইউ) রাখা হয়েছে তাকে। শুক্রবার রাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে শিশুটি অচেতন অবস্থায় রয়েছে।
শনিবার সকালে চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে ভুক্তভোগীর একজন স্বজন জানান, শিশুটি এখনও অচেতন। তার জ্ঞান ফেরেনি। চিকিৎসকেরা বলেছেন, তাঁরা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখবেন। আট বছরের ছোট্ট এই শিশুটি বুধবার গভীর রাতে বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে বাড়িতে ধর্ষণের শিকার হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
হাসপাতালের বিছানায় চিকিৎসা চলছে আট বছরের শিশুর। কথা বলছে না, নড়াচড়াও নেই। অচেতন অবস্থায় শুয়ে আছে সে। মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করছে ধর্ষণের শিকার এই শিশুটি। আর তার পাশে বসে কাঁদছেন মা। সন্তানের এই অবস্থায় তিনি যেন পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় মানুষ। এক হাত দিয়ে মেয়ের মাথা স্পর্শ করছেন, আরেক হাতে নিজের চোখের পানি মুছছেন। মেয়ের করুণ অবস্থা দেখে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি। এই দৃশ্য শুক্রবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের। ধর্ষণের শিকার শিশুটিকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (পিআইসিইউ) রাখা হয়েছে। গত দুই দিনেও তার জ্ঞান ফেরেনি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছে।
প্রধান অভিযুক্ত বোনের শ্বশুর হিটু শেখ (৪৭) ও স্বামী সজিব শেখকে (১৮) আটক করেছে পুলিশ। এদিকে শিশুকে ধর্ষণের প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে মাগুরার সাধারণ মানুষ। অভিযুক্তের শাস্তির দাবিতে শুক্রবার দুপুরে শহরে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল হয়। পরে তারা মাগুরা সদর থানা ঘেরাও করে।
স্বজন জানান, শিশুটিকে প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে স্থানান্তর করা হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এই হাসপাতালেও তার অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। ফলে বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক সার্জারি ইউনিটের একজন চিকিৎসক বলেন, শিশুটির জ্ঞান ফেরেনি। তার অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। চিকিৎসা চলছে।
মাগুরা সদর থানার ওসি আইয়ুব আলী বলেন, মাগুরা শহরতলির নিজনান্দুয়ালী গ্রামে আট বছরের শিশু ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় পুলিশ সন্দেহজনকভাবে শিশুটির ভগ্নিপতি সজিব শেখ ও তার বাবা হিটু শেখকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ দেয়নি। ফলে মামলা হয়নি।
শিশুটির স্বজন জানান, তার বাবা ভ্যানচালক। তাদের বাড়ি মাগুরায়। মাস চারেক আগে শিশুর বড় বোনের বিয়ে হয় মাগুরা সদরের নিজনান্দুয়ালী গ্রামের রাজমিস্ত্রি হিটু শেখের ছেলে সজিব শেখের সঙ্গে। সজিবও রাজমিস্ত্রি। কিছুদিন আগে শিশুটির বোনের বাড়িতে বেড়াতে যায়। সে স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী।
শুক্রবার দুপুরে ঢামেক হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ২২৩ নম্বর ওয়ার্ডে (পিআইসিইউ) শিশুটির পাশে বসেছিলেন তার মা। কাঁদতে কাঁদতে ওয়ার্ডের গেটের সামনে অবস্থান করা স্বজনদের কাছে আসেন। তখনও কাঁদছিলেন। কাঁদতে কাঁদতে এক স্বজনকে ধরে বলেন, আমার মেয়ে কথা বলছে না। ডাকলেও সাড়া দিচ্ছে না। মেয়ের কী হবে? ওদের ফাঁসি চাই।
তিনি বলেন, তাঁর বড় মেয়ে তাঁকে জানান, শ্বশুরবাড়িতে রাতে তার ভয় লাগে। এ জন্য ছোট বোনকে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যেতে চায়। তার আবদারের মুখে গত শনিবার ছোট মেয়েকে বড় মেয়ের সঙ্গে পাঠিয়ে দেন। কিছুদিন থাকার পর বাড়িতে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। বুধবার রাতে শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয়। পরে গলায় কিছু পেঁচিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে।
শিশুটির মামাতো ভাই বলেন, বুধবার গভীর রাতে তাকে ধর্ষণ করে তারই দুলাভাইয়ের বাবা হিটু শেখ। এ ঘটনা তার বড় বোন দেখে ফেলায় তাঁকে ঘরে আটকে রেখে বেধড়ক মারধর করে তাঁর শ্বশুর ও স্বামী। এ ঘটনা কাউকে না জানানোর জন্যও হুমকি দেওয়া হয়। তাঁর কাছে মোবাইল ফোন না থাকায় তিনি বিষয়টি মা-বাবাকে জানাতে পারেননি। শিশুটির প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হয়। এ অবস্থায় তাকে রাতে বাড়িতেই রাখা হয়। অবস্থার অবনতি হলে পরদিন সকালে সজিবের মা তাকে মাগুরা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে শিশুটি অচেতন হয়ে পড়লে তাকে রেখে পালিয়ে যান তাঁর শাশুড়ি। পরে হাসপাতাল থেকে সংশ্লিষ্ট থানায় খবর দেওয়া হয়। এর পর সংবাদ পেয়ে শিশুটির মাসহ স্বজন ছুটে যান হাসপাতালে।
মাগুরা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ডা.
শিশুটির মামাতো ভাই বলেন, তাঁর ফুফাতো বোনের গলায় ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। কিছু জায়গায় আঁচড়ের দাগ রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাকে গলাটিপে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে।
স্বজনরা জানান, বিয়ের মাসখানেক পরে শিশুটির বড় বোনকেও পাশবিক নির্যাতনের চেষ্টা করেছিলেন তাঁর শ্বশুর হিটু শেখ। কিন্তু মেয়ের বাবা দরিদ্র হওয়ায় বিষয়টি জানার পরও চুপ ছিলেন। বড় বোনও শুক্রবার ঢামেক হাসপাতালে এসেছিলেন। তবে বিকেলে তাঁকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম ড ক ল কল জ শ ক রব র অবস থ য় বড় ব ন স বজন এ ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও
রংপুরের গংগাচড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সহিংসতার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে ঘটনার তিন দিন পরেও এলাকায় ফেরেনি অনেক পরিবার। আতঙ্কে এখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।
গত ২৭ জুলাই রাতে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়।
পুলিশ, প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, যারা হামলা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ‘বহিরাগত’। পাশের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে লোকজন এসে হামলা চালিয়ে চলে যায়। হামলার সময় ২২টি ঘরবাড়ি তছনছ ও লুটপাট করা হয়।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন, কাঠ, চাল-ডাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আতঙ্কিত পরিবারগুলো।
ক্ষতিগ্রস্তদের একজন অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত বলেন, “সেদিনের ঘটনা ছিল এক ভয়াবহ। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননাকারী কিশোরকে থানা হেফাজতে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ঘরবাড়ি রক্ষা হয়নি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং কিছু মুরুব্বি আমাদেরকে অভয় দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষা হয়নি।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা নিজেরাই অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় সোপর্দ করেছি। তারপরও মিছিল নিয়ে এসে দুই দফায় আমাদের ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি তছনছ করে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই অপরিচিত।”
আরেক ভুক্তভোগী দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, “প্রথমে অল্পসংখ্যক কম বয়সী কিছু ছেলে আসে। পরে হাজারো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায়। অনেকেই এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”
রবীন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী রুহিলা রানী বলেন, “ছোট ছেলেটা যদি ভুল করে থাকে, আমরা তাকে থানায় দিয়েছি। কিন্তু তারপরও এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেন? আমাদের গরু, সোনা-টাকা সব লুটে নিয়েছে। শুধু চাল-ডাল আর টিনে কি জীবন চলে?”
গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ একটি প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
গংগাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় এবং পরে আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক নিরাপত্তায় নিয়োজিত।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা বলেন, “অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।”
উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ২২টি পরিবার বসবাস করতেন। ঘর মেরামতের পর কিছু পরিবার ফিরলেও অভিযুক্ত কিশোর ও তার চাচার পরিবারের কেউ এখনো ফিরে আসেনি।
ঢাকা/আমিরুল/ইভা