বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম ও ঢাকায় দেশটির সাবেক উপরাষ্ট্রদূত জন ড্যানিলোভিচের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) নেতারা। বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ প্রশ্নে এবি পার্টির অবস্থান জানতে চান সাবেক দুই মার্কিন কূটনীতিক। উত্তরে এবি পার্টির নেতারা বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের ব্যাপারে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগে সবার ঐকমত্যের প্রতি এবি পার্টি গুরুত্ব দিচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ‘রাইট টু ফ্রিডম’-এর প্রতিনিধি হিসেবে আজ রোববার দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর বিজয়নগরে এবি পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন উইলিয়াম বি মাইলাম ও জন ড্যানিলোভিচ। দলীয় কার্যালয়ে তাঁদের স্বাগত জানান এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা। উইলিয়াম বি মাইলাম বেসরকারি সংগঠন ‘রাইট টু ফ্রিডম’-এর প্রেসিডেন্ট আর জন ড্যানিলোভিচ সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্বে আছেন।

সাবেক দুই মার্কিন কূটনীতিকের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ। তিনি বলেন, রাইট টু ফ্রিডম–এর প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী নির্বাচন, ভারতের ক্রমাগত বাংলাদেশবিদ্বেষী প্রোপাগান্ডা, আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ নিয়ে এবি পার্টির অবস্থান, বর্তমান সরকারের সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে এবি পার্টির চিন্তা ও গণ–অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে নবগঠিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এবি পার্টির সম্পর্ক নিয়ে জানতে চায়।

আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, প্রতিনিধিদলকে তাঁরা বলেছেন, ভারত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিয়মিত মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে বিভ্রান্ত না হয়ে বাংলাদেশের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র গণ–অভ্যুত্থানসহ অন্যান্য বিষয়ে যেভাবে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে, আগামীতেও সেভাবে দেশটি বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে ভূমিকা যেন অব্যাহত রাখে। আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের ব্যাপারে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগে সবার ঐকমত্যের প্রতি এবি পার্টি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে তাঁরা প্রতিনিধিদলকে জানিয়েছেন। তাঁরা আরও বলেছেন, সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয়ে জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে সিদ্ধান্ত নেবে বলে তাঁরা মনে করেন। বিভেদ–বিভাজন ভুলে এখন ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ পুনর্গঠনে অংশ নিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে এবি পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসরিন সুলতানা অবিলম্বে নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধে অন্তর্বর্তী সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।

এবি পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক যোবায়ের আহমদ ভূঁইয়া, আবদুল হক সানী, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ফারাহ নাজ সাত্তার এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সদস্য হাজরা মাহজাবিন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল গ র র জন ত ঐকমত য আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে একমত হলেও বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট রূপরেখা চায় এনসিপি

সংসদের উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির (পিআর) বিষয়ে একমত পোষণ করলেও এটি বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট রূপরেখা চায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ঐকমত্যের বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন, যার পদ্ধতি এখনো সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি। ফলে একটি অস্পষ্টতা থেকেই গেছে।’

আজ বৃহস্পতিবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ২৩তম দিনের বিরতিতে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন আখতার হোসেন।

উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি কীভাবে বাস্তবায়িত হবে সেই রূপরেখা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনকে কার্যকর আলোচনা জন্য আহ্বান জানান আখতার হোসেন। তিনি বলেন, এনসিপির পক্ষ থেকে উচ্চকক্ষে সংবিধান সংশোধনের জন্য ‘টু-থার্ডস মেজরিটি’ বাধ্যতামূলক করার দাবি জানানো হয়। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচিতরা নির্বাচিত প্রতিনিধি নন—এমন কথা বলা হলেও, বিশ্বজুড়ে এফপিটিপি (যিনি সবচেয়ে বেশি ভোট পান) ও পিআর উভয় পদ্ধতিতেই বৈধতা রয়েছে। পিআর পদ্ধতিতেও জনগণের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়।

কমিশনের প্রস্তাবিত বাস্তবায়ন সময়সীমাকে এনসিপি প্রত্যাখ্যান করেছে বলে জানান দলটির সদস্যসচিব। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, সিদ্ধান্তগুলো তৎক্ষণাৎ কার্যকর হোক।’ তিনি বলেন, ‘১ শতাংশ ভোট পেলেও যেন একটি দল একজন করে প্রতিনিধি উচ্চকক্ষে পাঠাতে পারে—এটি বহু মতের ও বহু দলের গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করবে। আইন পাসের আগে যদি উচ্চকক্ষে আলোচনা হয়, তাহলে ভুলত্রুটি ধরার সুযোগ তৈরি হবে এবং সংসদের বাইরে জনপরিসরেও আইন নিয়ে আলোচনা গড়ে উঠবে।’

‘বর্তমানে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে যেভাবে দলগুলো সংবিধান সংশোধন করে, সেটা যেন না হয়’ উল্লেখ করে আখতার হোসেন বলেন, ‘পিআর পদ্ধতিতে বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিত্ব থাকলে, সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রেও জনগণের বৃহত্তর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে।’

উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা নিয়ে বিতর্ক প্রসঙ্গে আখতার হোসেন বলেন, ‘অনেকে বলছেন, পিআর পদ্ধতিতে হলে তাঁরা উচ্চকক্ষ চান না। তাহলে প্রশ্ন ওঠে—তাঁরা আদৌ উচ্চকক্ষ চান কি না। আমরা বিশ্বাস করি, ১০০ আসনের এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে দেশ একদল বা দুই দলের কর্তৃত্ব থেকে বেরিয়ে বহু দলের অংশগ্রহণে পরিচালিত হবে। এতে গণতন্ত্রচর্চার নতুন সংস্কৃতি গড়ে উঠবে।’

আলোচনার সময় সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং মহাহিসাব নিরীক্ষক নিয়োগ নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান আখতার হোসেন। যদিও কিছু দল ভিন্নমত পোষণ করেছে, তবে সার্বিকভাবে একটি ঐকমত্যের জায়গায় কমিশন পৌঁছেছে বলেও তিনি দাবি করেন।

আলোচনার শেষভাগে উচ্চকক্ষ গঠন নিয়ে কমিশনের প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, ১০০ আসনের একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে, যেখানে প্রতিনিধিরা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচিত হবেন। এ কক্ষে নিম্নকক্ষ থেকে পাঠানো বিল সর্বোচ্চ দুই মাস আটকে রাখা যাবে এবং সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে ‘সিম্পল মেজরিটি’র কথা বলা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মৌলিক সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কার কী অবস্থান
  • সংবিধানের চার মূলনীতি প্রশ্নে কমিশনের সভা বর্জন বাম দলগুলোর
  • উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে একমত হলেও বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট রূপরেখা চায় এনসিপি
  • সংসদের উচ্চকক্ষ হবে ১০০ আসনের, সদস্য মনোনীত হবেন পিআর পদ্ধতিতে
  • ‘জুলাই সনদের’ দাবিতে শাহবাগে অবরোধ, যানজট
  • ৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ না করলে এনসিবি তা করবে: আখতার হোসেন
  • খসড়া নিয়ে ৩ দলের আপত্তি
  • প্রাথমিক পর্যায়ে ঐকমত্যের তালিকা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে
  • ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই সনদ চূড়ান্ত করার প্রত্যাশা
  • ‘বাদ দেওয়ার চেষ্টা হলেও ঘোষণাপত্রে নিশ্চিত হবে জুলাই ছাত্র-জনতার ন্যায্য স্বীকৃতি’