অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত গুম কমিশনে অভিযোগ দাখিল করেও স্বামীর গুমের বিষয়ে তদন্ত বা অনুসন্ধান চালানোর স্পষ্ট কিছু দেখছেন না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির নেতা এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর (লুনা)। বিএনপির চেয়ারপারসনের এই উপদেষ্টা বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের প্রথম প্রত্যাশা ছিল ইলিয়াস আলীসহ গুম হওয়া সবাইকে ফেরত পাওয়া। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে তাদের কোনো স্পষ্ট অবস্থান দেখতে বা জানতে পারিনি।’

সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দশঘর পিরেরবাজার এলাকায় গতকাল রোববার বিকেলে দশঘর ইউনিয়ন বিএনপি ও সহযোগী অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত দোয়া ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তাহসিনা রুশদীর এ কথা বলেন। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা ও ইলিয়াস আলীকে ফেরত পাওয়ার জন্য এ দোয়ার আয়োজন করা হয়।

২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকার বনানী থেকে গাড়িচালক আনসার আলীসহ নিখোঁজ হন ইলিয়াস আলী। বিএনপির অভিযোগ, তাঁকে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের লোকজন গুম করেছিল। ওই সময় ইলিয়াস আলীর সন্ধান দাবিতে টানা এক সপ্তাহ হরতাল পালিত হয় বিশ্বনাথ উপজেলায়, যে হরতালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ছাত্রদল ও যুবদলের তিন কর্মী নিহত হন।

সিলেট বিএনপির একাধিক নেতা জানান, ২০১১ সালের মধ্যবর্তী সময় ভারতের টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প বন্ধের দাবিতে সিলেটে জোরালো আন্দোলন দানা বাঁধে ইলিয়াস আলীর নেতৃত্বে। আঞ্চলিক ইস্যুতে সেই আন্দোলন অতীতে কমই দেখা গেছে। সিলেট-২ আসনে টানা তিনবার নির্বাচন করে ইলিয়াস আলী দুবার বিজয়ী হন।

জাতীয় নির্বাচন আয়োজন নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে বলে বক্তৃতায় অভিযোগ করেন তাহসিনা রুশদীর। তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা ছিল নির্দিষ্ট কিছু বিষয় সংস্কার করে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন উপহারের মাধ্যমে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবে। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি এখন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে।’

তাহসিনা রুশদীর আরও বলেন, ‘কেউ বলছেন আগে স্থানীয় নির্বাচন। আবার ছাত্ররা নতুন দল করে বলছেন হাসিনার বিচার হওয়ার পর নির্বাচন হবে। বিচার একটি আইনি প্রক্রিয়া, তার গতিতেই চলবে। বিচার শেষ হতে যদি সাত থেকে আট বছর লেগে যায়, তাতে কি মানুষ অপেক্ষা করবে? আমরা চাই, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যেটুকু সংস্কার প্রয়োজন, তা করে দ্রুত নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেবেন।’

ইফতার মাহফিল–পূর্ব সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি আবদুল মতিন। উপজেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক তাজুল ইসলাম ও যুবদল নেতা আরিফ মিয়া কর্মসূচি যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গৌছ আলী, সাধারণ সম্পাদক লিলু মিয়া, জেলা বিএনপি সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ময়নুল হক, দশঘর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমাদ উদ্দিন খান ও জেলা যুবদলের সদস্য ইমাম উদ্দিন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র র উপজ ল য বদল

এছাড়াও পড়ুন:

চামড়াশিল্প ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে

কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে পতিত ফ্যাসিস্ট আমলের পুরোনো চক্র ও সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার রক্ষা আন্দোলন। এই সিন্ডিকেট ও চামড়াশিল্প ধ্বংসের দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সংগঠনটি আয়োজিত ‘চামড়া শিল্পের নৈরাজ্য ও সিন্ডিকেট রুখো’ শীর্ষক মানববন্ধনে এসব কথা বলা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহ্বায়ক মির্জা শরিফুল আলম। সভায় বক্তব্য দেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আতা উল্লাহ খান, কলামিস্ট মীর আবদুল আলীম, রাজনীতিবিদ নুরুজ্জামান হীরা, মানবাধিকারকর্মী আব্দুল্লাহ আল-মামুন প্রমুখ।
কয়েক বছর ধরে কাঁচাচামড়ার দাম কমছে। দাম না পেয়ে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া নদী বা খালে ফেলে দিয়েছেন কিংবা মাটিতে পুঁতে ফেলেছেন– এমন ঘটনাও ঘটছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। চলতি বছর ৮৫ থেকে ৯০ লাখ পশুর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ট্যানারি মালিকদের। এর ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ সংগ্রহ হয় কোরবানির সময়। 

জাতীয় ভোক্তা অধিকার রক্ষা আন্দোলনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আতা উল্লাহ খান বলেন, এবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ৬০ থেকে ৬৫ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। কিছু ক্ষেত্রে বর্গফুটের হিসাবে চামড়ার দাম আরও কম পড়েছে। কোরবানিদাতাদের থেকে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ৪০০ থেকে ৬৫০ টাকায় গরুর চামড়া কিনেছেন। সেসব চামড়া আড়তদার ও ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করেছেন ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায়। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে চামড়া সংগ্রহ করলেও ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। সিন্ডিকেটের কারণে চামড়ার দাম পড়ে গেছে তলানিতে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও বেশির ভাগ ছাগলের চামড়া নষ্ট হয়েছে। বিদেশি চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রে পা দিয়ে অসাধু ট্যানারি মালিকদের ফ্যাসিস্ট সিন্ডিকেট কৌশলে চামড়ার দাম কমিয়ে লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের চামড়া শিল্প। দেশে ও বিশ্ববাজারে চামড়াজাত পণ্যের দাম আকাশচুম্বী। অথচ কোরবানির চামড়া শিল্প নিয়ে গভীর চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র চলছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
মানববন্ধনে বক্তারা আরও বলেন, বিদেশি চক্রান্তে দেশের সোনালি আঁশখ্যাত পাট শিল্পকে সুকৌশলে ধ্বংস করা হয়েছে। এবার আরেক সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্পকে শেষ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। এ ষড়যন্ত্রে পা দিয়ে অসাধু ট্যানারি মালিকদের সিন্ডিকেট কৌশলে চামড়ার দাম কমিয়ে লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের চামড়া শিল্প। গত বছরের মতো এবারও কম দামে সব ধরনের চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে। এতে করে গরিব-অসহায় মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সিন্ডিকেটকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান বক্তারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আসামে বিস্ফোরণের ষড়যন্ত্র মামলায় পরেশ বড়ুয়াসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র
  • ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠক ষড়যন্ত্রকারীদের কফিনে শেষ পেরেক: প্রেস সচিব
  • চামড়াশিল্প ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে