সমাজে আধিপত্য ও বৈষম্যবাদী ব্যবস্থার একটি বহিঃপ্রকাশ নারীর ওপর নির্যাতন। সব সময় যখন সমাজে নিপীড়ন ও আধিপত্যের সুযোগ বাড়ে, তখন নারীর ওপর নির্যাতন বেড়ে যায়। এখন একটি গোষ্ঠীর মধ্যে বৈষম্যবাদী রাজনীতি, মতাদর্শ ও সংস্কৃতির তৎপরতা দেখা যাচ্ছে।

ওই গোষ্ঠী সংঘবদ্ধভাবে মাজার ভেঙেছে, নারী নিপীড়ন করছে, নারীর প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ করছে। তাদের এসব অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সরকার নিষ্ক্রিয় থাকায় তা ক্রমে বেড়েছে। ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে মেয়েরা এখন ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে বলে সরকার একটু নড়াচড়া করছে।

মাজার, মন্দির, প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘরে হামলাকারী, জবরদস্তকারী, পথেঘাটে নারীর ওপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করা কঠিন কোনো কাজ নয়। এরপরও সরকারের নমনীয়তায় বৈষম্যবাদী নিপীড়ক নারীবিদ্বেষী এই গোষ্ঠী আরও বেশি প্রশ্রয় পেয়েছে। সরকারের উচিত গলার জোর বাড়ানো, সক্রিয়তা বাড়ানো।

সমাজে এখন দেখা যাচ্ছে অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা। এই অনিশ্চয়তার কারণ হলো দেশ কোন দিকে যাচ্ছে, কারা সরকারকে সহায়তা দিচ্ছে, সে সম্পর্কে অস্পষ্টতা। সরকার ও প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতার কারণে দেশি-বিদেশি শক্তি নিজেদের আধিপত্য ও শক্তি বৃদ্ধি এবং শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করছে। গণ-অভ্যুত্থানের লক্ষ্যের বিপরীত দিকে দেশকে যাত্রা করতে দেখা যাচ্ছে। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা কারাগার থেকে বেরিয়ে গেছেন, বুয়েটের (বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি পালিয়ে গেছেন, দিনাজপুরে শিশু ধর্ষণের সেই আলোচিত ঘটনায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জামিনে মুক্ত হয়েছেন, ছিনতাই-ডাকাতি বেড়েছে, মব (সংঘবদ্ধ বিশৃঙ্খলা) সহিংসতা হচ্ছে—এসব ঘটনা মানুষের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।মানুষ ভাবছে, কে দেশ নিয়ন্ত্রণ করছে? মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার বোধ বাড়ছে।

বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী আন্দোলনের সময়, জুলাই গণ-অভুত্থানকালে নারীর অংশগ্রহণ ছিল অসাধারণ। দেয়ালের গ্রাফিতিতে শ্রেণিবৈষম্য, জাতিগত বৈষম্য, ধর্মীয় বৈষম্য, নারী-পুরুষের বৈষম্য নিরসন, প্রাণ–প্রকৃতি রক্ষার আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ ছিল খুবই শক্তিশালীভাবে। কিন্তু বৈষম্য ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে এসব আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন সরকার এবং সরকারসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের কথা ও কাজে শক্তিশালীভাবে পাওয়া যায়নি। কখনো কখনো বিপরীত চিত্রও দেখা গেছে। এটা একটা বড় উদ্বেগের কারণ।

নারীর ওপর নির্যাতনের ভিত্তি তৈরি হয়েছে বহুদিন ধরেই। নারীকে অধস্তন দেখা, কর্তৃত্ব করা, নির্যাতন করা—পুরুষের এমন কিছু আচরণকে সমাজে স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। ধর্মীয় শিক্ষা যাঁরা দিয়ে থাকেন, তাঁদের কেউ কেউ ধর্মের শান্তির বাণী শেখানোর পরিবর্তে অন্য ধর্মকে, নারীকে অবজ্ঞা করতে বেশি শেখান। কারও কারও বক্তব্যে সমাজের বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হওয়ার পেছনে নারীকে মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করার প্রবণতা দেখা যায়। অনলাইনে বিদ্বেষ প্রচার করা হয়। এসব বিষয় মনোজগতে বড় ভূমিকা রাখে।

এর সঙ্গে রাষ্ট্রীয় আইন, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থা মিলে নারীর জন্য বৈরী জগৎ তৈরি হয়। মেয়েরা রাস্তায় জোরে হাঁটলে, জোরে হাসলে, খেললে, দৌড়ালে, বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় গেলে কারও কারও জন্য সমস্যা। সমাজের এসব দেয়াল ভাঙার প্রধান উপায় হলো নারীর সক্রিয়তা আরও বাড়ানো। শিক্ষা, খেলাধুলা, লেখালেখি, সংগঠন, রাজনীতি, গবেষণা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নারীদের আরও বেশি সক্রিয়তাই নতুন নতুন শক্তি তৈরি করবে।

বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠনে এগিয়ে যেতে গণ-অভ্যুত্থানের সময়ের মতো অন্যদের সঙ্গে নারীদের আরও সোচ্চার, আরও জোরালো ভূমিকা অপরিহার্য। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উচিত ‘মব’ সহিংসতা, বৈষম্যবাদী ও নারীবিদ্বেষী গোষ্ঠীকে মোকাবিলা করে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র র ওপর সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

‘মাস্তান’কে ছাড়া রিয়ালের অ্যানফিল্ড–অভিযান এবং সালাহর রেকর্ডের হাতছানি

অ্যানফিল্ডে যাওয়ার ঠিক আগে হঠাৎ দুঃসংবাদ পেল রিয়াল মাদ্রিদ। লিভারপুলের বিপক্ষে আজ রাতে খেলতে পারবেন না ফ্রাঙ্কো মাস্তানতুয়োনো। দলের মেডিকেল বিভাগ জানিয়েছে, আর্জেন্টাইন এই মিডফিল্ডার ভুগছেন ‘স্পোর্টস হার্নিয়া’-তে। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম মার্কা লিখেছে, মাস্তানতুয়োনো কবে ফিরতে পারবেন, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে আজকের ম্যাচে তাঁর না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত।

গতকাল অনুশীলনেও ছিলেন না মাস্তানতুয়োনো। সাধারণত প্রতিপক্ষের মাঠে গিয়ে ম্যাচের আগের দিন অনুশীলন করে রিয়াল। কিন্তু এবার কোচ জাবি আলোনসো একটু ভিন্ন পথ বেছে নিয়েছেন। অ্যানফিল্ডে সাংবাদিকদের সামনে কৌশল প্রকাশ না করে তিনি শেষ অনুশীলন সেরেছেন ক্লাবের নিজস্ব মাঠ ভালদেবাসে। মার্কার বিশ্লেষণ, প্রতিপক্ষ যেন শেষ মুহূর্তে কিছু বুঝে না ফেলে, সে জন্যই আলোনসোর এ সিদ্ধান্ত।
রিয়ালের বর্তমান ফর্ম অবশ্য কোনোভাবেই লুকানো যাচ্ছে না। লা লিগায় গত পরশু রাতে ভ্যালেন্সিয়াকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে তারা। এ মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১৪ ম্যাচে এটি তাদের ১৩তম জয়। একমাত্র হারের স্বাদ লিগে। ১২৬ বছরের ইতিহাসে রিয়ালের এর চেয়ে ভালো সূচনা হয়েছে মাত্র দুবার, সর্বশেষ ১৯৬১-৬২ মৌসুমে।

লিভারপুলের অনুশীলনে ভার্জিল ফন ডাইক ও মোহাম্মদ সালাহ

সম্পর্কিত নিবন্ধ