ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ভিত্তিতে ম্যানিলা বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন। ৭৯ বছর বয়সী দুতার্তে সম্প্রতি হংকং সফর শেষে দেশে ফেরার পরপরই পুলিশ তাকে আটক করে।

দুতার্তের বিরুদ্ধে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ এবং তার মাদকবিরোধী অভিযানের নামে পরিচালিত নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ এনেছে আইসিসি। প্রেসিডেন্ট থাকাকালে (২০১৬-২০২২) এবং তার আগে দাভাও শহরের মেয়র থাকাকালে, তার নেতৃত্বে পরিচালিত ‘ড্রাগ ওয়ার’-এ হাজারো মানুষ নিহত হয়।

গ্রেপ্তারের পর দুতার্তে বলেছেন, “আমি কী অপরাধ করেছি?”—এই প্রশ্ন তুলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

দুতার্তে তার শাসনামলে মাদকবিরোধী অভিযান ‘ওয়ার অন ড্রাগস’ বা ‘মাদকবিরোধী যুদ্ধ’ নামে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করেন। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, অভিযানে ৬,২৫২-এর বেশি সন্দেহভাজন নিহত হয়েছে, তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দাবি, এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি। অধিকাংশ ভুক্তভোগী ছিলেন শহুরে দরিদ্র সম্প্রদায়ের তরুণ পুরুষ।

জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো ওয়ারেন্ট ছাড়াই বাড়িতে অভিযান চালানো হতো এবং আত্মসমর্পণ না করলে সরাসরি গুলি চালানো হতো। তবে বড় মাদক ব্যবসায়ীরা কখনোই ধরা পড়েনি।

দুতার্তে একবার ফিলিপাইন সংসদে বলেছিলেন, “আমার নীতির সমালোচনা করবেন না। আমি কোনো দুঃখপ্রকাশ করব না। আমি যা করেছি, তা আমার দেশের জন্য করেছি।”

এর আগে ফিলিপাইন সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (ICC) তদন্তকারীদের দেশটিতে প্রবেশের অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল, যেখানে সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতের্তের ঘোষিত ‘মাদকবিরোধী যুদ্ধ’-এর ফলে হাজারো মানুষ হত্যার শিকার হয়েছেন। তবে, সরকারের বাধা সত্ত্বেও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ড.

রাকেল ফর্তুন ও মানবাধিকার কর্মী ফাদার ফ্ল্যাভি ভিলানুয়েভা ভয়ংকর সত্য উদঘাটনে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

২০২১ সালের জুলাই থেকে, ড. ফর্তুন ৯০টিরও বেশি মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করেছেন এবং একাধিক অসংগতি খুঁজে পেয়েছেন। অনেক বন্দুকধারীর মৃত্যুর সার্টিফিকেটে “প্রাকৃতিক কারণে মৃত্যু” লেখা হয়েছে, যেখানে গুলির চিহ্ন স্পষ্ট ছিল। এমনকি কিছু প্রতিবেদনে কপি-পেস্ট করা তথ্য পাওয়া গেছে, যা প্রকৃত মৃত্যুর কারণের সঙ্গে কোনো মিল নেই।

সরকারি হিসাবে, ২০১৬ সালে দুতের্তে ক্ষমতায় আসার পর থেকে পুলিশের গুলিতে ও অজ্ঞাত বন্দুকধারীদের হাতে ৬,২৫২ জন নিহত হয়েছেন। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, প্রকৃত সংখ্যা দশ হাজারেরও বেশি হতে পারে। পুলিশের দাবি, নিহতরা মাদক ব্যবসায়ী এবং অভিযানের সময় ‘আত্মরক্ষার্থে’ গুলিবিদ্ধ হয়েছে। কিন্তু অনেক পরিবার অভিযোগ করেছে, তাদের প্রিয়জন শুধুমাত্র ভুল সময়ে ভুল জায়গায় থাকার কারণেই প্রাণ হারিয়েছেন।

সেই সময় মানবাধিকার কর্মী ও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা আশাবাদী ছিলেন যে, তাদের সংগ্রহ করা প্রমাণ একদিন আন্তর্জাতিক আদালতে পৌঁছাবে এবং এই হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো দুতার্তের গ্রেপ্তারকে “ঐতিহাসিক মুহূর্ত” হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন আইসিএইচআরপি (ICHRP)-এর চেয়ারম্যান পিটার মারফি বলেছেন, “ন্যায়বিচারের চাকা ধীরে চলে, কিন্তু আজ তা সঠিক পথে এগোচ্ছে। দুতার্তের গ্রেপ্তার তার নৃশংস শাসনের জন্য জবাবদিহির সূচনা।”

তবে দুতার্তের সাবেক প্রেসিডেন্টিয়াল মুখপাত্র সালভাদর পানেলো তার গ্রেপ্তারকে “অবৈধ” বলে দাবি করেছেন। তার যুক্তি, ফিলিপাইন ২০১৯ সালে আইসিসি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেওয়ায় এই আদালতের এখতিয়ার দেশটির ওপর নেই। তবে আইসিসি জানিয়েছে, ফিলিপাইন সদস্য থাকা অবস্থায় সংঘটিত অপরাধের বিচার করার এখতিয়ার তাদের রয়েছে।

দুতার্তে সম্প্রতি দাভাও শহরের মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ম্যানিলা বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর তার গ্রেপ্তার এড়াতে আইনি লড়াইয়ের সুযোগ দেওয়া হয়নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, সাবেক প্রেসিডেন্টের সমর্থকেরা বিক্ষোভে নামতে পারেন, তাই সরকার দ্রুত তাকে হেফাজতে নিয়েছে।

বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফের্দিনান্দ মারকোস জুনিয়র প্রথমে আইসিসির তদন্তে সহযোগিতা করতে রাজি হননি। তবে সম্প্রতি দুতার্তে পরিবারের সঙ্গে তার রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের ফলে তিনি অবস্থান বদলান। ২০২২ সালের নির্বাচনে দুতার্তের কন্যা সারা দুতার্তে ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী হলেও, পরবর্তীতে দুই পরিবারের সম্পর্কের অবনতি ঘটে।

আইসিসি ২০১৬ সালেই ফিলিপাইনের এই মাদকযুদ্ধের বিষয়ে তদন্ত শুরু করে এবং ২০২১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত কার্যক্রম চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এর আওতায় ২০১১ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে সংঘটিত অপরাধগুলো বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ফ ল প ইন ফ ল প ইন আইস স সরক র তদন ত অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

সোনার টয়লেট ‘আমেরিকা’ নিলামে উঠছে, সর্বনিম্ন দর কত জানেন

নিলামঘর সদবিস গতকাল শুক্রবার ইতালীয় শিল্পী মরিজিও ক্যাটেলানের তৈরি সম্পূর্ণ সোনার টয়লেটটি নিলামে তোলার কথা ঘোষণা করেছে। এ ভাস্কর্যটির নাম ‘আমেরিকা’।

সদবিস জানিয়েছে, এ শিল্পকর্ম এটাই দেখাতে চায়, কখনো কখনো শিল্পের ‘মূল্য’ আর তার বাজারে বিক্রির ‘মূল্য’ এক নয়। এটি শুধু শিল্পকর্মই নয়, একটি পুরোপুরি ব্যবহারযোগ্য টয়লেটও। এ টয়লেটেরই অনুরূপ একটি সংস্করণ ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডের বিখ্যাত ব্লেনহাইম প্রাসাদ থেকে চুরি হয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনায় আসে।

১৮ নভেম্বর নিউইয়র্কে এ নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। টয়লেটটির সর্বনিম্ন দর ধরা হয়েছে এর সোনার বর্তমান বাজারমূল্য অনুযায়ী। এতে ব্যবহৃত হয়েছে প্রায় ১০১ দশমিক ২ কিলোগ্রাম (২২৩ পাউন্ড) খাঁটি সোনা, যার দাম এখন প্রায় ১০ মিলিয়ন (১ কোটি) মার্কিন ডলার (প্রায় ১২২ কোটি টাকা)।

সদবিসের নিউইয়র্ক শাখার সমসাময়িক শিল্প বিভাগের প্রধান ডেভিড গ্যালপারিন বলেন, ক্যাটেলান হচ্ছেন এমন একজন শিল্পী, যিনি তাঁর কাজের মাধ্যমে সবাইকে ভাবাতে ও চমক দিতে পছন্দ করেন।

ক্যাটেলান শুধু বিতর্ক সৃষ্টিকারীই নন; বরং অত্যন্ত সফল শিল্পী। তাঁর আরেকটি কাজ, ‘কমেডিয়ান’। অর্থাৎ দেয়ালে টেপ দিয়ে আটকানো একটি কলা। গত বছর নিউইয়র্কের এক নিলামে ৬২ লাখ ডলারে বিক্রি হয়েছিল শিল্পকর্মটি।

‘আমেরিকা’র দুটি সংস্করণ ২০১৬ সালে তৈরি করা হয়েছিল। যেটি এবার নিলামে উঠছে, সেটি ২০১৭ সাল থেকে এক অজ্ঞাত সংগ্রাহকের কাছে রয়েছে। অন্য সংস্করণটি ২০১৬ সালে নিউইয়র্কের গুগেনহাইম জাদুঘরের একটি বাথরুমে প্রদর্শনের জন্য স্থাপন করা হয়। সেখানে ১ লাখের বেশি দর্শক সার বেঁধে এসেছিলেন।

এর আগে ২০১৬ সালে ক্রিস্টিস নিলামে ক্যাটেলানের আরেকটি ভাস্কর্য ‘হিম’ ১ কোটি ৭২ লাখ ডলারে বিক্রি হয়। ভাস্কর্যটিতে নাৎসি নেতা অ্যাডলফ হিটলারকে হাঁটু গেড়ে প্রার্থনার ভঙ্গিতে দেখা যায়।

ক্যাটেলান নিজেই বলেছেন, তাঁর ‘আমেরিকা’ ভাস্কর্যটি অতিরিক্ত সম্পদ ও বিলাসিতাকে ব্যঙ্গ করে তৈরি করা হয়েছে। তিনি একবার বলেছিলেন, ‘তুমি ২০০ ডলারের দুপুরের খাবার খাও বা ২ ডলারের হটডগ, শেষ ফলাফল টয়লেটে গিয়ে একই হয়।’

‘আমেরিকা’র দুটি সংস্করণ ২০১৬ সালে তৈরি করা হয়েছিল। যেটি এবার নিলামে উঠছে, সেটি ২০১৭ সাল থেকে এক অজ্ঞাত সংগ্রাহকের কাছে রয়েছে। অন্য সংস্করণটি ২০১৬ সালে নিউইয়র্কের গুগেনহাইম জাদুঘরের একটি বাথরুমে প্রদর্শনের জন্য স্থাপন করা হয়। সেখানে ১ লাখের বেশি দর্শক সার বেঁধে এসেছিলেন।

মরিজিও ক্যাটেলান হচ্ছেন এমন একজন শিল্পী, যিনি তাঁর কাজের মাধ্যমে সবাইকে ভাবাতে ও চমক দিতে পছন্দ করেন।ডেভিড গ্যালপারিন, সদবিস-এর নিউইয়র্ক শাখার সমসাময়িক শিল্প বিভাগের প্রধান

ওই সময় গুগেনহাইম ভাস্কর্যটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তাঁর প্রথম দফায় ক্ষমতায় থাকাকালে ধার দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। কারণ তিনি জাদুঘর থেকে একটি ভ্যান গঘ চিত্রকর্ম ধার নিতে চেয়েছিলেন।

২০১৯ সালে ‘আমেরিকা’ প্রদর্শিত হয় উইনস্টন চার্চিলের জন্মস্থান হিসেবে বিখ্যাত ব্লেনহাইম প্রাসাদে। কিন্তু প্রদর্শনীর কয়েক দিনের মধ্যেই একদল চোর ভবনে ঢুকে সেটি পাইপলাইন থেকে খুলে নিয়ে পালিয়ে যায়।

চলতি বছরের শুরুতে দুই ব্যক্তিকে ওই চুরির দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে সোনার টয়লেটটি আজও উদ্ধার করা যায়নি। তদন্তকারীরা ধারণা করছেন, এটি সম্ভবত ভেঙে গলিয়ে ফেলা হয়েছে।

গ্যালপারিন বলেন, তিনি অনুমান করতে চান না ‘আমেরিকা’ শেষ পর্যন্ত কত দামে বিক্রি হতে পারে। তবে তাঁর ভাষায়, ক্যাটেলানের ‘ডাকটেপে আটকানো কলা’ শিল্পকর্মটি যেমন ‘অমূল্য ধারণা থেকে মূল্য তৈরি করা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল, ‘আমেরিকা’ ঠিক তার উল্টো। এখানে মূল উপকরণটিই (সোনা) অত্যন্ত মূল্যবান, যা বেশির ভাগ শিল্পকর্মে থাকে না।

ক্যাটেলান বলেছেন, তাঁর ‘আমেরিকা’ ভাস্কর্যটি অতিরিক্ত সম্পদ ও বিলাসিতাকে ব্যঙ্গ করে তৈরি করা হয়েছে। তিনি একবার বলেছিলেন, ‘তুমি ২০০ ডলারের দুপুরের খাবার খাও বা ২ ডলারের হটডগ, শেষ ফলাফল টয়লেটে গিয়ে একই হয়।’

‘আমেরিকা’ প্রদর্শিত হবে সদবিসের নতুন নিউইয়র্ক কার্যালয় ব্রয়্যার বিল্ডিংয়ে, ৮ নভেম্বর নিলাম শুরু হওয়ার আগপর্যন্ত। এটি একটি বাথরুমে স্থাপন করা হবে, যা দর্শকেরা কাছ থেকে দেখতে পাবেন।

তবে গুগেনহাইম ও ব্লেনহাইম প্রাসাদের মতো এবার দর্শকদের টয়লেটটি ব্যবহার করার সুযোগ থাকবে না। তাঁরা শুধু দেখতে পারবেন, কিন্তু ফ্লাশ করতে পারবেন না।

আরও পড়ুনসোনার আস্ত একটি কমোড চুরি করেছিলেন তিনি০৩ এপ্রিল ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জবি শিবিরের মেধাবীদের তালিকায় নেই ৩ বিভাগের শিক্ষার্থী
  • সোনার টয়লেট ‘আমেরিকা’ নিলামে উঠছে, সর্বনিম্ন দর কত জানেন