রমনার এসি মামুনকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের দাবি
Published: 11th, March 2025 GMT
‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’–এর গণপদযাত্রায় পুলিশের লাঠিপেটার ঘটনায় রমনা বিভাগের সহকারী কমিশনার আবদুল্লাহ আল মামুনকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের দাবি জানিয়েছে প্ল্যাটফর্মটি। পাশাপাশি জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে ধর্ষণের বিচারের দাবিতে তৈরি হওয়া এই প্ল্যাটফর্মটি।
আজ মঙ্গলবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্ল্যাটফর্মটি এমন দাবির কথা জানায়। সংগঠনটি আগামীকাল বুধবার সন্ধ্যায় রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে ধর্ষণ ও নিপীড়নবিরোধী একটি মশালমিছিল কর্মসূচি পালন করবে বলেও জানিয়েছে।
প্ল্যাটফর্মটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে ৯ দফা দাবিতে তাদের যমুনা অভিমুখে গণপদযাত্রা ও প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচিতে পুলিশ ভয়াবহ হামলা চালায়। হামলায় নারীসহ ১৫ জন আন্দোলনকারী আহত হন। আন্দোলনে নারীদের ওপর ডিএমপির রমনা বিভাগের এসি আবদুল্লাহ আল মামুনের ন্যক্কারজনক হামলা আবারও পুলিশের গণবিরোধী চরিত্রের উন্মোচন ঘটিয়েছে।
ধর্ষক-নিপীড়ক-খুনিদের ঠেকাতে ব্যর্থ পুলিশ বাহিনী গণমানুষের ক্ষোভের বিচ্ছুরণ ঠেকাতে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে বলপ্রয়োগ করছে বলে অভিযোগ করে প্ল্যাটফর্মটি। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই হামলার দায়, পুলিশ প্রশাসনসহ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে নিতে হবে। আজকের হামলা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে অপসারণের দাবির যথার্থতা প্রমাণ করে।
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, এসি মামুনের অপসারণ ও তদন্ত সাপেক্ষে হামলায় জড়িত অন্য পুলিশ সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় না আনা পর্যন্ত ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি স্থগিত করেছে। পাশাপাশি রাজপথের কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলন চালিয়ে যাবে।
আরও বলা হয়, ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করতে চায়, আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনামল থেকে টেনে আনা পুলিশের ধর্ষক-নিপীড়ক-অপরাধের পাহারদারি ও মজলুমের ওপর অত্যাচারী চরিত্রের অবসান ব্যতীত, মুক্তিযুদ্ধ ও চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের গণমুক্তির আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তাই নিপীড়ক হামলাকারী পুলিশ সদস্যদের বিচারের আওতায় আনা, ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ, ধর্ষক-নিপীড়কদের বিচারসহ ৯ দফা দাবিতে চলমান আন্দোলনের নিম্নবর্ণিত কর্মসূচিতে সবাইকে অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান ব্যক্ত করছি।
আরও পড়ুন‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’–এর গণপদযাত্রায় পুলিশের বাধা, লাঠিপেটা৬ ঘণ্টা আগেপতিত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ আন্দোলনে সমর্থন জানানোর মাধ্যমে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়। সংগঠনটি সুস্পষ্টভাবে এই সমর্থনকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে উল্লেখ করে জনগণকে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানায়, একই সঙ্গে ফ্যাসিবাদী শক্তির উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপচেষ্টারও নিন্দা জানায়।
ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ৯টি দাবি হলো—
১.
২. সারা দেশে অব্যাহত ধর্ষণ, নারী নিপীড়ন, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৩. অবিলম্বে পাহাড়, সমতলসহ সারা দেশে ঘটে যাওয়া ধর্ষণ ও নিপীড়নের সব ঘটনার বিচার নিশ্চিত করতে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে।
৪. কমিশন গঠন করে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে ধর্ষণ ও নারী-নিপীড়ন প্রতিরোধের আইনসমূহে প্রয়োজনীয় যৌক্তিক সংযোজন, বিয়োজন ও সংশোধন করতে হবে।
৫. যৌন হয়রানি প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৬. ধর্ষণের মামলাকেন্দ্রিক থানাগত জটিলতা দূর করতে হবে। প্রত্যেক থানার বিশেষ সেল, অধিকারবলে ধর্ষণের সব অভিযোগ গ্রহণ করবে।
৭. ধর্ষণের ভুক্তভোগীর জন্য রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের বন্দোবস্ত করতে হবে।
৮. চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের হেনস্তা, স্লাট–শেমিং এবং বরখাস্তের ঘটনা পূর্ণ তদন্ত করে অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। হেনস্তার শিকার শিক্ষার্থীদের অন্যায্য বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করতে হবে। স্লাট–শেমিংয়ের দায়ে অভিযুক্ত প্রশাসনিক ব্যক্তির অপরাধ প্রমাণিত হলে তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিতে হবে।
৯. বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সমন্বয়ে স্বাধীন যৌন নিপীড়ন–বিরোধী সেল কার্যকর করতে হবে। সেলে আবশ্যিক নারী সদস্য থাকবে। অপরাধীকে সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট বা অনুরূপ প্রতিষ্ঠানের একচ্ছত্র ক্ষমতা খর্ব করে অপরাধের মাত্রা অনুসারে নীতিমালা প্রণয়নপূর্বক প্রমাণ সাপেক্ষে সেলের সুপারিশ অনুসারে শাস্তি প্রদানের গণতান্ত্রিক বিধান সংযোজন করতে হবে।
আরও পড়ুনধর্ষণবিরোধী পদযাত্রার নামে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ ডিএমপির৫০ মিনিট আগেউৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বাণিজ্যবিরোধ: ভারত কেন ট্রাম্পের নিশানায়
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের বাণিজ্যনীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। ভারতীয় পণ্যের ওপর হোয়াইট হাউসের শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তুতি নেওয়ার পর থেকেই এ আক্রমণের মাত্রা বেড়েছে।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাঁর প্রশাসন আজ শুক্রবার (১ আগস্ট) থেকে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করছে এবং এর পাশাপাশি অতিরিক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ট্রাম্প যখন বিশ্বের বহু দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছিলেন, তখনই ভারতকে উদ্দেশ করে তাঁর এমন কঠোর অবস্থান সামনে উঠে আসে।
হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
‘ভারতের শুল্ক বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ’, গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন মন্তব্য করেন ট্রাম্প। জবাবে ভারত সরকার জানিয়েছে, তারা ট্রাম্পের বক্তব্য ‘লক্ষ্য করেছে’ এবং এর ‘প্রভাব মূল্যায়ন’ করবে।
যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্যবিরোধ: পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়িয়ে
আজ থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর ট্রাম্পের ধার্য করা ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক গত ২ এপ্রিল হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে ঘোষিত সম্ভাব্য শুল্ক থেকে মাত্র ১ শতাংশ কম।
এ হার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ শুল্কের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশ শুল্কের চেয়ে কিছুটা কম।
হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।এ শুল্ক ভারতের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনা আরও জটিল করে তুলতে পারে। একাধিক দফা আলোচনার মধ্য দিয়ে উভয় পক্ষ একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ১২তম বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার ভারত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়া অনেক কোম্পানির নতুন গন্তব্য হয়েছে দেশটি। মে মাসে অ্যাপলের সিইও টিম কুক জানান, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির জন্য আইফোন এখন ভারতে উৎপাদিত হচ্ছে; যাতে উচ্চ শুল্ক এড়ানো যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের (ওটিআর) তথ্যমতে, গত বছর ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বাণিজ্যের মোট পরিমাণ ছিল প্রায় ১২৯ বিলিয়ন (১২ হাজার ৯০০ কোটি) ডলার। ভারতের রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে পোশাক, রাসায়নিক, যন্ত্রপাতি ও কৃষিপণ্য।
ট্রাম্প কেন ভারতকে নিশানা করছেন
সম্প্রতি ট্রাম্প একাধিকবার বিভিন্ন পণ্যের ওপর ভারতের ‘অতি উচ্চ’ শুল্ক আরোপের সমালোচনা করেছেন। এর মধ্যে কৃষিপণ্য ও দুগ্ধজাত পণ্যও রয়েছে।
বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প লেখেন, ‘বছরের পর বছর আমরা ভারতের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে খুব কম ব্যবসা করেছি। কারণ, তাদের শুল্ক অত্যন্ত বেশি।’
এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্টদেশীয় শিল্পকে রক্ষা করতে ভারত কিছু পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপ করেছে।
ওটিআরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে পণ্যবাণিজ্যে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন (৪ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের ঘাটতি দেখেছে। এটি আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। তুলনামূলকভাবে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে প্রায় ২৯৫ বিলিয়ন (২৯ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের বাণিজ্যঘাটতিতে ছিল।
আরও পড়ুনভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা, ইরানের পণ্যের বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ ৩১ জুলাই ২০২৫ট্রাম্প আরও ক্ষুব্ধ যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে।
‘এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা’, বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন ট্রাম্প।
ভারতের প্রতিক্রিয়া
এ সপ্তাহে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ভারত সরকার ট্রাম্পের ওই বক্তব্যে তুলনামূলকভাবে মৃদু, তবে শক্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
ভারতের ওপর ধার্য করা শুল্কহার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশের চেয়ে কিছুটা কম।বুধবার দেওয়া এ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কয়েক মাস ধরে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একটি ন্যায্য, ভারসাম্যপূর্ণ ও পারস্পরিকভাবে লাভজনক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সেই লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সরকার জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।’
আগস্টের শেষ দিকে দুই দেশের মধ্যে আরেক দফা বাণিজ্য আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
আরও পড়ুনভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য আলাদা ‘দণ্ড’৩০ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনট্রাম্পের ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতের অর্থনীতি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কী বলছেন অর্থনীতিবিদেরা১৪ ঘণ্টা আগে