‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’–এর গণপদযাত্রায় পুলিশের লাঠিপেটার ঘটনায় রমনা বিভাগের সহকারী কমিশনার আবদুল্লাহ আল মামুনকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের দাবি জানিয়েছে প্ল্যাটফর্মটি। পাশাপাশি জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে ধর্ষণের বিচারের দাবিতে তৈরি হওয়া এই প্ল্যাটফর্মটি।

আজ মঙ্গলবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্ল্যাটফর্মটি এমন দাবির কথা জানায়। সংগঠনটি আগামীকাল বুধবার সন্ধ্যায় রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে ধর্ষণ ও নিপীড়নবিরোধী একটি মশালমিছিল কর্মসূচি পালন করবে বলেও জানিয়েছে।

প্ল্যাটফর্মটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে ৯ দফা দাবিতে তাদের যমুনা অভিমুখে গণপদযাত্রা ও প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচিতে পুলিশ ভয়াবহ হামলা চালায়। হামলায় নারীসহ ১৫ জন আন্দোলনকারী আহত হন। আন্দোলনে নারীদের ওপর ডিএমপির রমনা বিভাগের এসি আবদুল্লাহ আল মামুনের ন্যক্কারজনক হামলা আবারও পুলিশের গণবিরোধী চরিত্রের উন্মোচন ঘটিয়েছে।

ধর্ষক-নিপীড়ক-খুনিদের ঠেকাতে ব্যর্থ পুলিশ বাহিনী গণমানুষের ক্ষোভের বিচ্ছুরণ ঠেকাতে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে বলপ্রয়োগ করছে বলে অভিযোগ করে প্ল্যাটফর্মটি। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই হামলার দায়, পুলিশ প্রশাসনসহ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে নিতে হবে। আজকের হামলা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে অপসারণের দাবির যথার্থতা প্রমাণ করে।

এতে আরও উল্লেখ করা হয়, এসি মামুনের অপসারণ ও তদন্ত সাপেক্ষে হামলায় জড়িত অন্য পুলিশ সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় না আনা পর্যন্ত ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি স্থগিত করেছে। পাশাপাশি রাজপথের কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলন চালিয়ে  যাবে।

আরও বলা হয়, ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করতে চায়, আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনামল থেকে টেনে আনা পুলিশের ধর্ষক-নিপীড়ক-অপরাধের পাহারদারি ও মজলুমের ওপর অত্যাচারী চরিত্রের অবসান ব্যতীত, মুক্তিযুদ্ধ ও চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের গণমুক্তির আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তাই নিপীড়ক হামলাকারী পুলিশ সদস্যদের বিচারের আওতায় আনা, ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ, ধর্ষক-নিপীড়কদের বিচারসহ ৯ দফা দাবিতে চলমান আন্দোলনের নিম্নবর্ণিত কর্মসূচিতে সবাইকে অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান ব্যক্ত করছি।

আরও পড়ুন‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’–এর গণপদযাত্রায় পুলিশের বাধা, লাঠিপেটা৬ ঘণ্টা আগে

পতিত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ আন্দোলনে সমর্থন জানানোর মাধ্যমে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়। সংগঠনটি সুস্পষ্টভাবে এই সমর্থনকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে উল্লেখ করে জনগণকে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানায়, একই সঙ্গে ফ্যাসিবাদী শক্তির উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপচেষ্টারও নিন্দা জানায়।

ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ৯টি দাবি হলো—

১.

জননিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে অপসারণ করতে হবে।

২. সারা দেশে অব্যাহত ধর্ষণ, নারী নিপীড়ন, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

৩. অবিলম্বে পাহাড়, সমতলসহ সারা দেশে ঘটে যাওয়া ধর্ষণ ও নিপীড়নের সব ঘটনার বিচার নিশ্চিত করতে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে।

৪. কমিশন গঠন করে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে ধর্ষণ ও নারী-নিপীড়ন প্রতিরোধের আইনসমূহে প্রয়োজনীয় যৌক্তিক সংযোজন, বিয়োজন ও সংশোধন করতে হবে।

৫. যৌন হয়রানি প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

৬. ধর্ষণের মামলাকেন্দ্রিক থানাগত জটিলতা দূর করতে হবে। প্রত্যেক থানার বিশেষ সেল, অধিকারবলে ধর্ষণের সব অভিযোগ গ্রহণ করবে।

৭. ধর্ষণের ভুক্তভোগীর জন্য রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের বন্দোবস্ত করতে হবে।

৮. চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের হেনস্তা, স্লাট–শেমিং এবং বরখাস্তের ঘটনা পূর্ণ তদন্ত করে অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। হেনস্তার শিকার শিক্ষার্থীদের অন্যায্য বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করতে হবে। স্লাট–শেমিংয়ের দায়ে অভিযুক্ত প্রশাসনিক ব্যক্তির অপরাধ প্রমাণিত হলে তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিতে হবে।

৯. বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সমন্বয়ে স্বাধীন যৌন নিপীড়ন–বিরোধী সেল কার্যকর করতে হবে। সেলে আবশ্যিক নারী সদস্য থাকবে। অপরাধীকে সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট বা অনুরূপ প্রতিষ্ঠানের একচ্ছত্র ক্ষমতা খর্ব করে অপরাধের মাত্রা অনুসারে নীতিমালা প্রণয়নপূর্বক প্রমাণ সাপেক্ষে সেলের সুপারিশ অনুসারে শাস্তি প্রদানের গণতান্ত্রিক বিধান সংযোজন করতে হবে।

আরও পড়ুনধর্ষণবিরোধী পদযাত্রার নামে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ ডিএমপির৫০ মিনিট আগে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অপর ধ গ রহণ সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।

মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।

এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।  

প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।  কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।

মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।

নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ